আল আমিন মন্ডল, গাবতলী (বগুড়া) থেকে : বগুড়া গাবতলীর নেপালতলী ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের ৩ শতাধিক কৃষক টমেটো চাষ করে উপজেলায় টমেটো চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছে। তাদের টমেটো চাষ দেখতে প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকরা ভীড় জমাচ্ছেন। ইতিমধ্যে আকন্দপাড়া গ্রামকে টমেটো গ্রাম হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। গাবতলী কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে বেশি চাষ হয়েছে নেপালতলীতে। উপজেলায় একশ’ ৫০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ করা হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন। শুধু নেপালতলীতে টমেটো চাষ করা হয়েছে ৮০ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৪শ’ মেট্রিক টন। বিশেষ করে নেপালতলীর আকন্দপাড়া, মমিনহাটা, মহিষবাতান, বিলসরোলিয়া, পাড়কাকড়া, চকডোমর, ডওর, বাহাদুরপুর গ্রামে বেশি জমিতে টমেটো চাষ করেছে কৃষকরা। এবছর লাল তীর সিড লিমিটেডের হাইব্রিড মিন্টু জাতের টমেটো বেশি চাষ করেছে কৃষক। প্রতিমণ ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা ট্রাক বোঝায় করে ঢাকাসহ সারাদেশে বাজারজাত করতে দেখা গেছে। সফল টমেটো চাষি গৌররঙ্গ চন্দ্র জানান, ৪০ শতক জমি থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছি। কৃষক ফজলুল হক জানান, অন্যান্য ফসলের চেয়ে এবারে ৩৪ শতক জমি থেকে টমেটো চাষ করে ১ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছি। একই এলাকার সুশীল চন্দ্র ২ বিঘা জমির টমেটো ২ লাখ টাকায় বিক্রি করে আজ তার মুখে হাসি ফুটেছে। টমেটো চাষি কামরুল ইসলাম জানান, এলাকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করায় টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। টমেটো চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন আবুল হোসেন সেন্টু। সে প্রতিবেদককে জানায়, তার ২ বিঘা জমি থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছে। প্রতি শতকে ৫ থেকে ৬ মণ ফলন হয়েছে। লাল তীর সিড লিমিটেডের বগুড়া এরিয়া ম্যানেজার আব্দুর রশিদ জানান, এ মৌসুমে গাবতলীর কৃষকরা লাল তীর সিড লি. হাইব্রিড মিন্টু জাতের টমেটো চাষে বেশি ঝুঁকে পড়েছে। বাম্পার ফলন হওয়ায় তারা আজ খুব খুশি। মার্কেটিং অফিসার মেহেদী হাসান চৌধুরী জানান, বেশিরভাগ কৃষক তাদের টমেটো ক্ষেতে লাল তীর ইনসাফ (সালফার), কুপ্রোফিক্স ও ইউনিজুম বালাইনাশক ব্যবহার করে সফলতা পেয়েছেন। সফল টমেটো চাষি শাহীন আলম, জিয়াউর রহমান, মিজানুর রহমান, নুরুল ইসলাম উজ্জ্বল জানান, টমেটো চাষ করে এলাকার বেকার যুবকরা ভাগ্যের উন্নয়ন ও স্বাবলম্বী হয়েছেন। এজন্য তারা আকন্দপাড়া গ্রামকে টমেটো গ্রাম বলে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। গাবতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আ. জা. মু. আহসান শহীদ সরকার জানান, টমেটো চাষে লাভ বেশি। কৃষকদেরকে টমেটো চাষে উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে। এজন্য মাঠ পর্যায়ে মাঠ দিবস ও কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের তথ্য এবং পরামর্শ দিচ্ছেন। আশা করছি আগামীদিনে টমেটো চাষ ও উৎপাদন আরো বাড়বে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকতা নাজমুল হক ম-ল জানান, কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য এলাকার কৃষকরা টমেটো চাষে সফলতা পেয়েছেন। এজন্য কৃষকদের সবসময় কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ও জাহেদুর রহমান জাহিদ জানান, নেপালতলীর কৃষকরা ব্যাপকভাবে টমেটো চাষ করায় ফলন ও বিক্রিতে তারা লাভবান হয়েছে। প্রান্তিক চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। আগামীদিনে কৃষকরা আরও টমেটো চাষ করবে। আমরা সবসময় কৃষকদের সহযোগিতা করছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন