মোহাম্মদ জসিমউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা উত্তর থেকে
মেঘনা ও কাঠালিয়া নদী বেষ্ঠিত কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা। আগামী ২৮ মে শনিবার মেঘনা উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে। এই প্রথম দলীয় প্রতীকে তৃণমূলের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ফলে বিগত নির্বাচনগুলোর চেয়ে এবারের নির্বাচনে ভোটারদের মাঝে একটু বেশিই নির্বাচনী আমেজ বইছে। ভোটারদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করলেও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা এমন আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে তাদের মনে। কারণ নৌকা মার্কার প্রার্থীদের পক্ষে বহিরাগত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আনাগোন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের হাত-পা কাঁটার হুমকি, নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন ও প্রচারণায় বাধা দেয়ার ফলে ভোটাররাসহ স্থানীয় রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মাঝেও নির্বাচন সুষ্ঠু নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারপরও ভোটাররা শতভাগ আশাবাদি এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে। ভোটাররা নির্বিঘেœ তাদের ভোট যাকে খুশি তাকে দিতে পারবে এমন প্রত্যাশা নিয়েই তারা প্রার্থীদের নিয়ে হিসাবÑনিকাশ কষছেন। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ভোটের মাঠের দৃশ্যপট দিন দিন বদলে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে ভোটের হিসাবÑনিকাশও। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী (নৌকা) ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীদের (আনারস) বিরামহীন প্রচারÑপ্রচারণায় এখানকার প্রত্যন্ত জনপদ সরগরম হয়ে উঠেছে। গভীর রাত পর্যন্ত এসব চেয়ারম্যান প্রার্থীরা গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের সাথে উঠান বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন, প্রার্থীদের বিগত দিনের সামাজিক কর্মকা- তুলে ধরছেন। ভোটাররাও প্রার্থীদের নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। সবমিলেই এখানে নির্বাচনী প্রচারÑপ্রচারণা তুঙ্গে অবস্থান করছে। এদিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা (ধানের শীষ) প্রথম দিকে মাঠে নির্বাচনী প্রচারণা চালালেও গত দুই সপ্তাহ ধরে অজ্ঞাত কারণে প্রচারণা থেকে নীরব হয়ে গেছেন। তাদের অনেকে আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থী ও আ.লীগের মনোনীত প্রার্থীদের সাথে গোপন আঁতাত করে নির্বাচনী মাঠ ছেড়ে দিয়েছেন বলে বড় দুই দলের ভোটারাদের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। ফলে এখানে এখন মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠে আছেন নৌকা মার্কার প্রার্থী ও আনারস মার্কার প্রার্থীরা। এদিকে মেঘনার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে চারটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র (আনারস) ভোটে ও প্রচারণায় বহু দূর এগিয়ে আছেন। আর বাকি ৪টিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী (নৌকা) ও আ.লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের (আনারস) মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এমটিই দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। এদিকে গোবিন্দপুর ইউনিয়নে এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন মাইন উদ্দিন মুন্সি তপন (নৌকা) ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বিশিষ্ট সমাজসেবক আব্দুল আল বাকী শামীম (আনারস)। এখানে আনারস মার্কা ভোটে ও প্রচারণায় বহুদূর এগিয়ে আছেন। কারণ নৌকা মার্কার প্রার্থী যুবদলের সহ-সভাপতি হওয়ায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের ভোটাররা বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল আল বাকীকে বিজয়ী করতে চ্যালেজ্ঞ নিয়ে মাঠে নেমেছে। তারা আশাবাদি সফল হওয়ার। আনারস মার্কার প্রার্থী আব্দুল আল বাকী বলেন, নৌকা মার্কার প্রার্থীর সমর্থকদের অব্যাহত সন্ত্রাসী কর্মকা-ের কারণে ভোটারদের স্বতস্ফূর্ত সমর্থন আমার পক্ষে ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ভোটাররা নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারলে বিজয় আমার পক্ষে যাবে। চালিভাংগা ইউনিয়নে আব্দুল লতিফ সরকার (নৌকা) ও বর্তমান সফল চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির স্বতন্ত্র (আনারস) প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ৫ বৎসর ধরে হুমায়ুন কবিরের যুগান্তকারী উন্নয়ন কর্মকা-ের কারণেই সর্বস্তরের ভোটাররা তার পক্ষে মাঠে নেমেছেন। ফলে তিনিও ভোটে এবং প্রচারণায় এগিয়ে আছেন। হুমায়ুন কবির বলেন, সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে ভোটাররা ভোট দিতে পারলে আমার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না আল্লাহর রহমতে। চন্দনপুর ইউনিয়নে আহসানউল্লাহ মাস্টার (নৌকা) ও মিলন সরকার বিদ্রোহী স্বতন্ত্র (আনারস) মাঠে আছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এখানেও বিজয়ের পথে রয়েছে বিশিষ্ট সমাজসেবক মিলন সরকার স্বতন্ত্র প্রার্থী। ভোটে ও প্রচারণায় তিনি এগিয়ে রয়েছেন। ভোটাররা তার বিজয় নিশ্চিত মনে করছেন। মিলন সরকার বলেন, স্বতস্ফূর্ত জনসমর্থন আমার পক্ষে রয়েছেন। রাধানগর ইউনিয়নে আব্দুল বাতেন (নৌকা) ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র মজিবুর রহমান (আনারস) প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। নৌকা মার্কার প্রার্থীর সমর্থকরা মজিবুর রহমানের হাত-পা কেটে দেয়ার প্রকাশ্যে হুমকি দেয়ায় সাধারণ ভোটাররা বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। ফলে ভোটাররা আনারস মার্কার পক্ষেই ঝুঁকে পড়ে। নৌকা মার্কার সন্ত্রাসী কর্মকা-ের কারণে মজিবের বিজয় দিন দিন নিশ্চিতের দিকে যাচ্ছে। লুটেরচর ইউনিয়নে সানাউল্লাহ শিকদার (নৌকা) ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতস্ত্র প্রার্থী আলমগীর রহমানের (আনারস) সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। মানিকারচর ইউনিয়নে মো. দনু মিয়া (নৌকা) ও বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হারুন-অর-রশিদের সাথে (আনারস) তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ভাওরখোলা ইউনিয়নে ফারুক আব্বাসী (নৌকা) ও বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলামের মধ্যে (আনারস) ভোটের তুমুল প্রতিযোগিতা হবে। তবে ফারুক আব্বাসী চিত্র নায়ক সোহেল চৌধুরীর হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। বড়কান্দা ইউনিয়নে মো. মাজহারুল হক (নৌকা) ও বিদ্রোহী স্বতন্ত্র শাহআলমের সাথে (আনারস) তুমুল ভোটযুদ্ধ হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন