মোস্তফা মাজেদ, ঝিনাইদহ থেকে
নির্বাচন নিয়ে শৈলকুপায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। নৌকা ও দলের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থীরা মাঠ দখলের লড়াইয়ে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে। এতে সংঘাত-সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে ভোটাররা। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের নির্বাচন শেষ ধাপে ৪ জুন অনুষ্ঠিত হবে। গত ১৯ মে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিনে বিএনপির ১ জন, ইসলামী আন্দোলন পার্টির ২ জন, স্বতন্ত্র ৬ জন চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এখন চূড়ান্তভাবে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা ৪৪ জন। মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন সংরক্ষিত নারী মেম্বার পদে ৯ এবং সাধারণ মেম্বার পদে ৪৭ জন। সংরক্ষিত চূড়ান্ত প্রার্থীর সংখ্যা এখন ১২২ এবং সাধারণ সদস্য পদে লড়ছেন ৩৭৩ জন। ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দি¦তায় সদস্য পদে ৬ জন নির্বাচিত হয়েছেন। গত শুক্রবার প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পর চলছে মাঠ দখলের লড়াই। সরকারি দলে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকায় ভোটারদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলার কাচেরকোল ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. সালাউদ্দিন জোয়ার্দ্দার ওরফে মামুন জোয়ার্দার তুচ্ছ ঘটনায় মারপিটের শিকার হয়েছেন। গত বুধবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। দলীয় কর্মীদের হাতে মারধর খেয়ে পর দিন বৃহস্পতিবার তিনি বাদী শৈলকুপা থানায় প্রতিপক্ষ বিএনপির প্রার্থী মো . ইলিয়াছ আলী, স্বতন্ত্র মো. আমিরুল ইসলাম বাবলু, স্বতন্ত্র কামরুজ্জামান ওরফে কামু, বিএনপির বিদ্রোহী আবু বক্কর জামালসহ ১৬ জনের নামে মামলা দায়ের করেন। এ খবর নিশ্চিত করেন শৈলকুপা থানার ওসি মহিবুল ইসলাম। এ ইউনিয়নের বিএনপি দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. ইলিয়াছ আলী অভিযোগ করেছেন মামলা দায়ের করে আমাদের মাঠ ছাড়া করা হয়েছে। ফলে ফাঁকা মাঠে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি আরো অভিযোগ করেন, নৌকা প্রতীকের অনুগত রামদা বাহিনী সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। সেই সাথে স্থানীয় কাচেরকোল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আইসি এসআই তোবারক আলী নৌকার পক্ষ নিয়ে কাজ করছেন। আইসি ভোটারদের মাঝে ভয়ভীতি সৃষ্টি করছেন মর্মে অভিযোগ করেন তিনি। অনুরূপ অভিযোগ করেন, আনারস মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিরুল ইসলাম বাবলু। পুলিশের ওপর হামলা-মামলার এজাহারভুক্ত আসামি নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর অনুগত রুয়েল ও বাবুর সঙ্গে স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পের আইসির (কাচেরকোল পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ) সখ্য রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন এই দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী। তবে সংশ্লিষ্ট আইসি অভিযোগ সত্য নয় মর্মে দাবি করে বলেছেন শৈলকুপা থানার ওসি সাহেবের কাছ থেকে অভিযোগের বিষয়টি জানতে পেরেছেন তিনি। অন্যদিকে গেল কয়েক দিন ধরে এ উপজেলার নির্বাচনী মাঠ গরম হয়ে উঠেছে। মীর্জাপুর, ত্রিবেনী, ওমেদপুর, আবাইপুর, কাচেরকোল ইউনিয়নে মাঠ দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন প্রার্থীরা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা প্রকাশ্যে ও গোপনে একাধিক দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষ নেয়ার কারণে বিস্ফোরণ-উন্মুখ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, মির্জাপুর ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ঝিনাইদহ জেলা কমান্ডার মো. মকবুল হোসেন। প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা এমন অভিযোগ করেছেন দলীয় প্রার্থী মো. ফিরোজ আহম্মেদ। নিজ দলের প্রভাবশালী নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করায় বেকায়দায় পড়েছেন তিনি। উপজেলার আবাইপুর ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী মো. রফিকুল হক দলকে না জানিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এ ইউনিয়নে এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে মুক্তার আহম্মেদ মৃধা ও মনোনয়নবঞ্চিত ঢাকার বিশ্বাস বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নজরুল ইসলামের ছোটভাই মো. হেলাল। এ ইউনিয়নে দ্বিমুখী নির্বাচনী লড়াই জমে উঠেছে। দুই প্রার্থী পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়ে মাঠ দখলের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এতে করে ভোটারদের মাঝে উৎকণ্ঠা বাড়ছে। উপজেলার ওমেদপুর ইউনিয়নে জেপি প্রার্থী মিজানুর রহমান বাবলু অভিযোগ করেছেন. প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী মো. সাব্দার হোসেন মোল্লা তাকে প্রচারণায় বাঁধা দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে গাড়াগঞ্জ বাজারে তার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। নানাভাবে ভোটারদের হুমকি-ধামকি ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে মর্মে অভিযোগ করেন তিনি। একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে, ত্রিবেনী ইউনিয়নের সরকারদলীয় প্রার্থী মো. সেকেন্দার আলী মোল্লার বিরুদ্ধে। অভিযোগ করা হয়েছে, প্রতিপক্ষদের ভোটের মাঠে কোণঠাসা করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন এই প্রার্থী। এ ধরনের ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় অতি উৎসাহী সদস্যর বিরুদ্ধে আগে থেকেই পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ রয়েছে। নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মফিজুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুককে মাঠে দাঁড়াতে দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। শুক্রবার রাতে শৈলকুপার বাগুটিয়া বাজারে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারুক হোসেনের সমর্থকদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। নৌকার সমর্থকরা এই হামলার জন্য দায়ী বলে ফারুক অভিযোগ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, শনিবার রাতে বাগুটিয়া বাজারে হাফিজুল ইসলাম ও শিমুলের ব্যাবসা-প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মফিজুল ইসলাম জানিয়েছেন, নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার জন্য মিথ্যা অভিযোগ করছে তার প্রতিপক্ষরা। শনিবার দক্ষিণ গোপালপুর গ্রামে ফারুকের নারী সমর্থক কৌশুল্লা রানীকে মারধর করা হয়েছে। নৌকার সমর্থকরা ভোট চাইতে গিয়ে তাকে মারধর করে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মফিজুল দুঃখ প্রকাশ করে আহত ওই নারী ভোটারকে চিকিৎসার জন্য এক হাজার টাকাও দিয়েছেন বলে জানান মফিজ। শনিবার রাতে শৈলকুপার কাচেরকোল ইউনিয়নের মধুদা গ্রামে বিএনপি প্রার্থী ইলিয়াস হোসেনের প্রচার মাইক ভেঙ্গেছে নৌকার সমর্থকরা। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবার মধ্য রাতে সদর উপজেলার বাজারগোপালপুরে নৌকায় আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় আ’লীগ প্রার্থীকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা করা হয়। এ ঘটনার জন্য সরকারদলীয় প্রার্থী তহুরুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী জুয়েল আহম্মেদকে দায়ী করেছেন। কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী আশরাফুলের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রবি জোয়ারদার। ঝিনাইদহ জেলা নির্বাচন অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, শৈলকুপা উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। যে কারণে আগে থেকেই কমিশন সতর্ক রয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে দৃঢপ্রত্যয় ব্যক্ত করেন জেলা নির্বাচন অফিসার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন