এহসান বিন মুজাহির
পাশ্চাত্য প্রসবিত সামাজিক অবক্ষয় আর নোংরামির নতুন দৃষ্টান্ত দেখলো দেশবাসী। ধর্মীয় মূল্যবোধ, নীতিনৈতিকতা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-শৃঙ্খলাকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে জ্ঞানার্জনের পাঠশালাপাড়ায় ঢাকা কমার্স কলেজের ছাত্রছাত্রীরা একি কা- ঘটালো! ঘটনাটি শুনতে, দেখতে, বলতে, লিখতে যদিও খারাপ দেখাচ্ছে তবু সঙ্গতকারণেই চিত্রায়িত করতে হচ্ছে কাগজে!
সবাই কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী, কলেজ ড্রেসও পরা। এদের মধ্যে একজনকে ‘প্রেমের প্রস্তাব’ দিতে বন্ধুরা মিলে করেছে ‘স্মরণীয়’ আয়োজন। প্রথমে হাতে হাত ধরে বৃত্ত বানিয়ে তাদের দুজনকে ভিতরে রেখে চারপাশ ঘুরছে সহপাঠীরা। এরপর ছাত্রটি হাঁটু গেড়ে ছাত্রীকে প্রপোজ করছে, পরিয়ে দিচ্ছে আংটিও। এরপর সেই ছাত্রী একে অপরকে প্রকাশ্যে জড়িয়ে ধরে প্রেম নিবেদন করে। বাকি বন্ধুরাও উপভোগ করছে নির্লজ্জ দৃশ্যটি। সেই ঘটনার ভিডিও চিত্রও মোবাইলে ধারণ করে আপলোড করা হয় ইউটিউবে। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতে ভাইরাল হয়ে যায়। কেউ কেউ এমন কাজকে সাবাশি দিয়ে লিখছেন, ‘হাউ সুইট, কত রোমান্টিক একটা মুমেন্ট’। আবার কেউ লিখছেন, তরুণ প্রজন্মের এসব হচ্ছে কী? সব কিছুতে এত শো অফের কী প্রয়োজন? আর কলেজ ড্রেস পরে এসব ভিডিও বানিয়ে কী বোঝাতে চাইছে তারা? ভার্চুয়ালে বা অফলাইনে যে যাই বলুক অন্তত একজন নৈতিক ও বিবেকসম্পন্ন দায়িত্বশীল মানুষের কাছে বিষয়টি মোটেও পছন্দের নয়! একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ড্রেস পড়ে কলেজ সংলগ্ন রাস্তায় খোলামেলা আপত্তিকর দৃশ্য মোটেও ভালো আলামত নয়! বিষয়টি সত্যিই জাতি এবং আগামী প্রজন্মের জন্য বড় অশনি সংকেত।
ঘটনায় অভিযুক্ত ১১ জনই ঢাকা কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাসবুরা সামিহা কায়নাত এবং শাফিন আহমেদ খান। বাকি নয়জন দুজনেরই বন্ধু, সহপাঠী। বন্ধু সামিহা এবং শাফিনের বিশেষ মুহূর্তেকে স্মরণীয় করে রাখতে বাকিদের নিয়ে করে এ আয়োজন। কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছেও বিষয়টি পছন্দ হয়নি। গত বৃহস্পতিবার (১২ মে) অফিস বিজ্ঞপ্তিতে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ঢাকা কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবু সাঈদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রেমিক যুগলকে বহিষ্কার করেছে ঢাকা কমার্স কলেজ। বাকি ৯ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। এদিকে সোমবার (১৬ মে) ভর্তি বাতিলের শিকার রাজধানীর কমার্স কলেজের সেই ৯ শিক্ষার্থী ছাত্রত্ব ফিরে পেয়েছে। তবে ওই প্রেমিক যুগলের শাস্তি বহাল রয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা কলেজে উপস্থিত হয়ে সন্তানরা এমন ভুল আর করবে না বলে কমিটমেন্ট দেন। পরে কলেজ অধ্যক্ষ সাইদ তাদের বিষয়টি মানবিকভাবে বিবেচনা করে ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেন। তবে বহিষ্কৃতদের (প্রেমিক যুগলের) ক্ষমা করা হয়নি। (দৈনিক কালের কণ্ঠ, ১৬ মে)
গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন, এই ন্যক্কারজনক ঘটনা আমাদের সমাজকে কী ম্যাসেজ দিল! এই ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ ফেসবুক, পোর্টাল, ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশের নৈতিকতাসম্পন্ন ছাত্রজনতাসহ সচেতন ধর্মপ্রাণ মানুষ হতবাক হয়ে যান। সামাজিক অবক্ষয়ের এই করুণ চিত্র স্তম্ভিত করে দেয় দায়িত্বশীল শিক্ষক-অভিভাবকদের! ধর্মহীন শিক্ষাব্যবস্থা-দেশি-বিদেশী ডিস-টিভি চ্যানেলগুলোতে অশ্লীলতার নগ্ন প্রদর্শনী! নারী স্বাধীনতার নামে নারী ভোগের সামগ্রী হিসেবে উপস্থাপন করার তুমুল প্রতিযোগিতাই এই নৈতিক অবক্ষয়ের মূল কারণ! মসজিদের শহর ঢাকা নগরীর পবিত্র একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ড্রেস পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের এই নোংরামি, অশ্লীলতা সমাজ কীভাবে দেখছে? যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈতিকতা শিখানোর কথা এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসের পাশেই যদি কুশিক্ষার ফল প্রকাশ পায়; তাহলে এমন লজ্জাজনক ঘটনা প্রজন্মের কাছে কি শিক্ষণীয় নয়? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশের রাস্তায় প্রকাশ্যে একে অন্যকে জড়িায়ে ধরার দৃশ্যের কথা কল্পনাই করা যায় না! এমন ঘটনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং আমাদের দেশের ভাবমর্যাদা অনেক খাটো করে দিল। শিক্ষার সিলেবাসে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নীতিনৈতিকতার পাঠ না থাকলে এমন ঘটনা বিস্ময়ের নয়!
ধর্মীয় শিক্ষার অনুপস্থিতি থাকার কারণেই সমাজের সর্বত্র আজ অনৈতিকতা, বেহায়াপনা! নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার অভাবেই আজ এসএসসি পরীক্ষায় অশানুরূপ ফলাফল না পেয়ে এবং পরীক্ষায় ফেল করার অপমানে শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যার মতো জঘন্য খারাপ পথ বেছে নেয়! এর প্রমাণ সদ্যপ্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফল! জাতীয় বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত খবরে জানা যায় গত ১২ মে, বুধবার থেকে ১৬ মে মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ১১ জন ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন উপায়ে আত্মহত্যা করেছে! কাজেই ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নীতিনৈতিকতা ফিরিযে আনতে স্কুল-কলেজের সিলিবাসে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। পাশাপাশি ভারতীয় স্টার জলসাসহ বিভিন্ন অপসংস্কৃতির আমদানি বন্ধ করতে হবে এবং সকল অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।
ষ লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন