শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

নাব্যতা ফেরাতে বুড়িতিস্তায় চলছে খনন

সেচ সুবিধাসহ রক্ষা পাবে জীববৈচিত্র্য

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) থেকে হাফিজুর রহমান সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৮ এএম

কুড়িগ্রামের উলিপুরে বদলে যাচ্ছে বুড়িতিস্তা নদী। খনন শুরু হওয়ায় বুড়িতিস্তা নদী পাড়ে শত শত মানুষের ঢল নামে প্রতিদিন। তারা স্বপ্ন দেখছেন আবার বুড়িতিস্তা প্রাণ ফিরে পাবে। কৃষিতে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। বুড়িতিস্তা পাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা চলবে এ নদীকে ঘিরে।
এক সময় বুড়িতিস্তা নদীকে ঘিরে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠেছিল। সেই সাথে তিস্তা নদী পাড়ের মানুষের জীবন জীবিকা চলত বুড়িতিস্তা নদীতে মাছ শিকার করে। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় তিস্তা নদীর ভাঙনে উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের সুইস গেটটি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। পরে পাউবো অপরিকল্পিত ভাবে বুড়িতিস্তার উৎসমুখে বাঁধ নির্মাণ করে বন্ধ করে দেয়। ফলে বুড়িতিস্তার স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারনে বুড়িতিস্তা পাড়ের কয়েকশ’ মানুষের পেশা ও কৃষিতে বিপর্যয় শুরু হয়। এ সুযোগে কিছু ভূমিদস্যূ বুড়িতিস্তা দখলের উৎসবে মেতে উঠে। ফলে দখল আর দূষণে এক সময়ের প্রমত্তা বুড়িতিস্তা মরা খালে পরিণত হয়। এ পরিস্থিতিতে ২০১৭ সাল থেকে বুড়িতিস্তা রক্ষায় আন্দোলন করে আসছিল উলিপুর প্রেসক্লাব ও রেল নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটি।
জানা গেছে, ডেল্টা প্লানের আওতায় বুড়িতিস্তাসহ সারাদেশে ১৬ টি নদ নদী খননের উদ্যোগ নেয় সরকার। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড গত ৬ জানুয়ারি অনলাইনে ২টি গ্রুপের টেন্ডার আহবান করে। এতে কাজের যোগ্যতা অর্জন করে মের্সাস খায়রুল কবির ও মের্সাস তাজ মঞ্জিল। দুটি গ্রুপের মধ্যে উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার ৩১ কিলো মিটার দৈর্ঘ্য ও ৮০ ফুট প্রস্ত এ নদী খননে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
ইতোমধ্যে বুড়িতিস্তা নদী খনন কাজ শুরু হয়েছে। ঠিকাদাররা খনন কাজের জন্য এস্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে নদী খননের কাজ শুরু করেছেন। এ লক্ষ্যে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদসহ নদের পুরোজমি পুনরুদ্ধার করে মাইকে ঘোষনা দিয়ে চিহিৃত লাল নিশান ও লাল রং দেয়া খুটি স্থাপন করা হয়। খননকাজ সম্পন্ন হলে নদী তীরবর্তি এলাকায় সেচ সুবিধা সহ বুড়িতিস্তা তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে। এতে উপকৃত হবে উপজেলার কয়েক লক্ষাধিক মানুষ। রক্ষা পাবে এলাকার জীববৈচিত্র।
উল্লেখ্য, বুড়িতিস্তা নদী রক্ষায় গত ২০১৭ সালের ১৩ মার্চ মানববন্ধন, ২১ মার্চ বাইসাইকেল র‌্যালি ও ১১ এ্রপ্রিল বুড়িতিস্তার পাড়ে প্রতীকি পানির ঢল কর্মসূচি পালন করে সংগঠন দুটি। এছাড়াও ৫ মে ঢাকাস্থ উলিপুর সমিতি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। ফাঁসিদাহ বাজারের সন্নিকটে নদী খননের কাজ দেখতে গিয়ে কথা হয় কয়েকজন স্থানীয় লোকজনের সাথে তারা বলেন, প্রমত্তা বুড়িতিস্তা যখন তার নাব্যতা হারিয়ে ফেলে ঠিক তখনি এক শ্রেণীর প্রভাবশালী নদীর বেশিরভাগ জমি দখল স্থাপনা, পুকুর খনন ও চাষাবাদ শুরু করেন। ধীরে ধীরে বুড়িতিস্তা মরা খালে পরিণত হয়। তারা আরও জানান খননের মধ্য দিয়ে এখন মুক্ত নদের সেচ সুবিধাসহ বিভিন্ন সুবিধাভোগ করতে পারবে স্থানীয়রা।
কুড়িগ্রাম-৩ (উলিপুর) আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন বলেন, বুড়িতিস্তা নদীর খনন কাজ সম্পন্ন হলে বুড়িতিস্তা তিস্তার দু’পাশে ইরি-বোরো চাষাবাদ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা হবে এবং সেই সাথে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন