পটিয়া (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের মধ্যে আগামী ২৮ মে ২১টি ও আগামী ৪ জুন ১টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের চেয়ে প্রার্থীদের কাছে সন্ত্রাসীদের কদর বেশি। দিনের বেলা গণসংযোগ করলেও রাত হলে অনেক চেয়ারম্যান মেম্বার প্রার্থী এলাকার চিহ্নিত পেশি শক্তির লোক ও সন্ত্রাসীদের সাথে গোপন বৈঠক করে চলছেন। কে কীভাবে কোনো কোনো কেন্দ্র দখল করবে এখন থেকে সে ছক তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক এলাকায় চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীরা সন্ত্রাসী বাহিনী বুকিং করেও নিয়েছেন। কিছু কিছু ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বহিরাগত লোকজন নিয়ে মোটরসাইকেল শোডাউন দিচ্ছেন। ভোটারদের আগেভাগেই অনেক চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তারা বলছেন, কেন্দ্রে গেলে মারপিট হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এধরনের আচরণে ভোটারদের মধ্যে নির্বাচনে ভোট দেয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এর মধ্যে সরকারদলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় সংঘাত হানাহানির আশঙ্কা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। পটিয়ায় এধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ইউনিয়ন রয়েছে কমপক্ষে ১০টি। এ ইউনিয়নগুলোর মধ্যে রয়েছে শিকলবাহা, কচুয়াই, কুসুমপুরা, বড়লিয়া, হাবিলাসদ্বীপ, বড়উঠান, ছনহরা, কোলাগঁাঁও, শোভনদ-ী, জুলধা। শিকলবাহা ইউনিয়নে আ.লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম বকুলের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক কর্ণফুলী থানা আ.লীগের সদস্য জাহাঙ্গীর মেম্বার। এ ইউনিয়নে সংঘর্ষ হানাহানি এমনকি খুন খারাপি হওয়ার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। কচুয়াই ইউনিয়নে আ.লীগের প্রার্থী ইনজামুল হক জসিম ও বিএনপির প্রার্থী খলিলুর রহমান বাবু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এ দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী এলাকার শক্তিধর লোক। জসিম ইতোমধ্যে বাবুকে দুর্বল বানাতে বেশ কয়েকবার বহিরাগত লোকজন নিয়ে মোটরসাইকেল শোডাউন দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ইউনিয়নে সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে উভয়পক্ষের লোকজন হতাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ছনহরা ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী আবদুর রশীদ দৌলতী আর আ.লীগ প্রার্থী কামাল উদ্দীন। উভয়ে এখন থেকে পাল্টাপাল্টি কার্যকলাপ শুরু করে দিয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে এ ইউনিয়নে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। বড়লিয়া ইউনিয়নে আ.লীগ প্রার্থী শাহিনুল ইসলাম শানু, বিএনপি প্রার্থী কায়সারুল ইসলাম রণি, ইসলামী ফ্রন্ট ও স্বতন্ত্র আরো দুইজন চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছে। শাহিনুল ইসলাম শানু ইতোমধ্যে ভোটারদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে অন্য প্রার্থীরা অভিযোগ করেছে। আ.লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহিনুল ইসলাম শানু একজন সন্ত্রাসী হিসেবে অভিযোগ এনে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে উপজেলা আ.লীগ সভাপতি রাশেদ মনোয়ার শানুর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে থানায় জিডি করেছে। এখানেও লাশ পড়ার সম্ভাবনা আছে বলে এলাকাবাসী জানায়। হাবিলাসদ্বীপ ইউনয়িনে আ.লীগের প্রার্থী ফৌজুল কবির কুমার ও বিএনপির মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছে শফিকুল ইসলাম। দু’জনই স্থানীয় ক্যাডার। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে এ ইউনিয়নে হত্যাকা-ের মতো ঘটনা ঘটতে পারে বলে এলাকাবাসীর অভিমত। আগামী ৪ জুন ইউপি নির্বাচনে শোভনদ-ী ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ইউনিয়নে আ.লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এহসানুল হক ও বিএনপির মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী সামশুল আলম। এহসানুল হক ইতোমধ্যে এলাকায় বিভিন্ন বহিরাগত লোক নিয়ে শোডাউন দিচ্ছে বলে বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ। বর্তমানে বেশ কয়েকদফা বিএনপির সমর্থকদের পুলিশি হয়রানি করা হয়েছে। সরকারদলীয় প্রার্থী বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোট আদায় করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে বিএনপি প্রার্থী হাজী সামশুল আলম জানান। শোভনদ-ী ইউনিয়নের বলীর বাড়ি থেকে প্রার্থী হয়েছেন এহসানুল হক। মল্ল বাড়ি থেকে প্রার্থী হয়েছেন হাজী সামশুল আলম। লোকজনের আশঙ্কা এ ইউনিয়নে নির্বাচন নয় বলি আর মল্লের মধ্যে মল্লযুদ্ধ হবে। তাই এসব ইউনিয়নে সংঘাত হানাহানির ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধ করতে এবং হত্যাকা-ের মতো ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এলাকাবাসী প্রশাসন ও সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন