এম এ ছালাম, মহাদেবপুর (নওগাঁ) থেকে : গরম অথবা শীত বলে কথা নেই। সেখানে পাখিদের মেলা বসে গরম এবং শীতসহ সারা বছর। একেক পাখির ডাক একেক রকম। বিচিত্র তাদের কলরব। শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নানান পাখির আনাগোনা একটু বেশি থাকলেও সেখানে বছরের ১২ মাসই খেলা করে পাখিদের ঝাঁক। নানান পাখির আড্ডা আর কলরবে সেজেছে যে গ্রাম সেই নয়নাভিরাম গ্রামটি হচ্ছে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার চান্দাস ইউনিয়নের বাছড়া গ্রাম। ওইগ্রামের উত্তরপাড়া জামে মসজিদ ঘেঁষা কবরস্থান। গ্রামের সহজ-সরল আর সাদা মনের মানুষের সহযোগিতায় তৈরি মসজিদটি দেখতে যেমন সুন্দর আর এ মসজিদ ঘেঁষা কবরস্থানটিও তেমন বৃহৎ পরিসরের। সেই কবরস্থানেই জন্মেছে করই ও নিমসহ নানান গাছপালা। রয়েছে পুরনো কিছু বাঁশঝাড়। এসব গাছের কোনটির বয়স শতাধিক বছর বলেও স্থানীয় মুরুব্বীরা জানান। গাছগুলো বেশ মোটা এবং উঁচু। বাসা বেঁধে নিরাপদে থাকতে মসজিদ ঘেঁষা কবরস্থানের প্রাচীন এ গাছগুলোকেই বেছে নিয়েছে পাখিরা। তাদের সংখ্যা অনেক। গণনা করা যায় না। আশপাশের মধ্যেই আসা আর যাওয়াতে ব্যস্ত থাকে পাখিদের দল। রং-বেরংয়ের নানান পাখির এ রকম দৃশ্য সেখানে সারাবছর লেগে থাকে। পাখিদের দল পাশের ছাতড়া বিল থেকে খাদ্যের বেশিরভাগ যোগান পেয়ে থাকে। বিভিন্ন স্থানে পাখিদের নির্ভয়ে চলাফেরা করা যেখানে কঠিন, সেখানে পাখিদের কিচির-মিচিরে মেতে থাকা পুরো একটি গ্রাম দেখে যে কেউ একদিকে বিস্মিত অপরদিকে পুলোকিত না হয়ে পাড়ে না। এরকম দৃশ্য সচারচর কল্পনা করা না গেলেও বাছড়া গ্রামের নারী-পুরুষরা তাদের এলাকাকে পরিণত করেছেন পাখিদের অভয়ারণ্যে। কি শিত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, বসন্ত ও শরৎ সব সময়ই পাখিদের কলকাকলীতে মুখর এ অভয়ারণ্যে চোখ রাখলেই প্রাণ জুড়িয়ে যায় গ্রামের মানুষের। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শিকারীদের হাত থেকে এখানকার পাখিরা শতভাগই নিরাপদ। কোন শিকারীই এ গ্রামে প্রবেশ করার সাহস পায় না। কেউ সাহস দেখাতে গেলে তার বিধিবাম। এ গ্রামে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি ওড়ার দৃশ্য। পাখি সমাজ ও পরিবেশের পরম বন্ধু এ কথা ওইগ্রামের মানুষরা উপলব্ধি করতে পেরেছেন বলেই পাখিদের নিরাপত্তা দিতে ব্যস্ত থাকেন সকলেরই। স্থানীরা জানান, শীতকালে হাজার হাজার অতিথি পাখি আসে এ অভয়ারণ্যে। স্থানীয় পাখিদের সাথে অতিথি পাখিরা যোগ হয়ে ঘুরে বেড়ায় নির্বিঘেœ। পাখির ডাকেই ঘুম ভাঙ্গে এলাকাবাসীর। পাখি প্রেমের অনন্য নজিরও তৈরি করেছেন স্থানীয়রা। পাখি রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা প্রদানসহ নানান সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন বাসিন্দারা। বিভিন্ন প্রজাতির বক, পানকৌড়ি, শামুকখোল, রাতচোরা, ঘুঘু, ডাহুক, শালিক, ও বাবুইসহ নাম না জানা আরো নানান পাখির বসবাস সেখানে। পাখিগুলো প্রজনন শেষে বাচ্চা ফুটিয়ে বড় করে তুলছে সেখানকার গাছপালায়। যেন একেক পাখির একেক পরিবার গড়ে উঠেছে ডালে ডালে। সেখানকার যেসব গাছপালা এবং বাঁশঝাড়ে পাখিরা বসবাস করে সেসব গাছপালা ও বাঁশঝাড় যতœসহ সংরক্ষণ করে রেখেছেন গ্রামের মানুষজন। আবার সচেতনতার বন অধিদপ্তর সেখানে বেশ কিছু সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিয়েছেন। কয়েকজন মুরুব্বী জানান, স্থানীয়রা যেন সন্তানের মত আগলে রেখেছেন পাখিগুলোকে। গ্রামের সকলেই যেন পাখিগুলোর সাথে গভীর ভাব জমিয়েছেন। ঝড়-বৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগে পাখি অথবা তাদের বাচ্চারা মাটিতে পড়ে গেলে গ্রামের যে কেউ দেখামাত্র যতœ সহকারে পাখিদের তুলে দেন নীড়ে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন