মে দিবসেও অর্ধাহারে-অনাহারে রয়েছে খুলনার পাটকলগুলোর শ্রমিকরা। এসব শ্রমিকের অনেকের ৮ থেকে ১০ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। ধারদেনা করে চলছে পাটকল শ্রমিকদের সংসার।
শ্রমিকরা নিয়মিত মজুরি না পেয়ে পরিবার নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন অতিবাহিত করছেন। পাটকল শ্রমিকরা তাদের সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন দিতে পারছে না। এমনকি সন্তানদের জন্য তিন বেলা খাবারও যোগাতে পারছেন না। এমন দুর্দশায় পাটকল শ্রমিকদের মে দিবসের আনন্দ ম্লান।
বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় পালিত হয় মহান মে দিবস। বিশ্বব্যাপী শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণার উৎস এ দিন। মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা আর শ্রমিকদের শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটানোর স্বপ্ন দেখারও দিন এটি। তবে মহান মে দিবসেও বকেয়া মজুরি ও বেতন পায়নি খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের ৩৩ হাজার শ্রমিক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট জুটমিলের সিবিএর সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, ‘মে দিবসেও খুলনার কোনো পাটকলের শ্রমিকরা মজুরি পায়নি। মে দিবস শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের দিন। কিন্তু এ দিনেও পাটকলের শ্রমিকরা অর্ধাহারে-অনাহারে রয়েছে। আমাদের এখানের শ্রমিকরা ১০ মাস মজুরি পায় না। ধারদেনা করে শ্রমিকরা আর কত দিন চলবে?’
প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক নেতা খলিলুর রহমান বলেন, ‘৬ থেকে ১০ সপ্তাহ মজুরি না পাওয়া পাটকল শ্রমিকরা মে দিবসের মানে বোঝে না। তারা বোঝে, পেট ভরে ভাত খেতে হবে। মজুরি প্রদানসহ ৯ দফা দাবি না মানলে আমরা আবার আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব। অধিকার আদায়ের দিনেও রুটি-রুজির ন্যায্য পাওনা পাচ্ছে না শ্রমিকরা।’
বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, স্টার, খালিশপুর, দৌলতপুর, ইস্টার্ন, আলিম এবং যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলে স্থায়ী শ্রমিক রয়েছে ১৩ হাজার ১৭০ জন এবং বদলি শ্রমিক সংখ্যা ১৭ হাজার ৪১৩ জন। পাটকলগুলোতে শ্রমিকদের ৬ থেকে ১০ সপ্তাহের মজুরি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৪ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। তাদের পাওনার পরিমাণ প্রায় ৫২ কোটি টাকা।
পাটকলগুলোর কর্মকর্তারা জানান, খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত খালিশপুর, দৌলতপুর, ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, স্টার, ইস্টার্ন, আলীম, জেজেআই ও কার্পেটিংসহ মোট ৯টি জুট মিলের প্রায় ৩৩ হাজার শ্রমিক রয়েছে। তাদের ৬ থেকে ১০ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। আর্থিক সংকটের কারণে তাদের নিয়মিত মজুরি প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে, মিলগুলোতে উৎপাদিত প্রায় ৩০০ কোটি টাকার পাটজাত পণ্য অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এসব পণ্য বিক্রি করা সম্ভব হলে শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব হতো।
উল্লেখ্য, শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধসহ নয় দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে ৩ মে জনসভা এবং পরবর্তীতে লাগাতার ধর্মঘট ও অবরোধের আল্টিমেটাম দিয়েছেন পাটকল শ্রমিকরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন