মো. সাদত উল্লাহ, বান্দরবান থেকে : বান্দরবান সদর হাসপাতালে চরম অব্যবস্থাপনায় চলছে চিকিৎসা সেবা। এতে দিনদিন জনদুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। সদর হাসপাতালে রোগী আছে, কিন্তু ডাক্তার নেই। আবার ডাক্তার থাকলে ওষুধ নেই। এছাড়াও কোন জরুরি রোগীকে চট্টগ্রামে রেফার করতে চাইলেও অ্যাম্বুলেন্স নেই। নেই কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। শিশু চিকিৎসকের মাধ্যমে করানো হচ্ছে হৃদরোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা। আবার অনেক সময় কোন ডাক্তারও পাওয়া যায় না জরুরি অবস্থায়। এভাবে চরম অব্যবস্থাপনায় চলছে বান্দরবান সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। প্রতিনিয়ত রোগী ও রোগীর আত্মীয়স্বজনের কান্নায় ভারী হয়ে উঠে সদর হাসপাতাল। এ ধরনের ভয়াবহ তথ্য ও অভিযোগ উঠে এসেছে সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে। ডাক্তার-নার্স ও কর্তৃপক্ষের অবহেলায় স্বাস্থ্য সেবার মান দিন দিন খারাপ দিকে যাচ্ছে। এতে ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে। স্থানীয়দের অভিযোগে উঠেছে সদর হাসপাতালে যে কয়েকজন ডাক্তার রয়েছে তারা হাসপাতালের রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার চেয়েও বেশি সময় দেন বেসরকারি হাসপাতাল ও ফার্মেসিগুলোতে। কারণ এসব ডাক্তাররা নগদ ও অতিরিক্ত টাকা আয় করতে বেশি উৎসাহী। স্থানীয় এক ভুক্তভোগী রোগীর স্বামী তপন কান্তি বড়ুয়া অভিযোগ করেন, গত শনিবার রাতে তার স্ত্রী হৃদরোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। এসময় রোগীর অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত ডাক্তার আমিনুল ইসলাম তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। কিন্তু সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় থাকার কারণে রোগীকে কিভাবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাবে, তার সঠিক উত্তর কর্তব্যরত ডাক্তারের কাছেও জানা ছিল না। এসময় খোদ ডাক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বান্দরবান সদর হাসপাতালের এ অবস্থার উন্নতি না হলে আগামীতে এ অঞ্চলের রোগীরা আরো মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে এ অভিভাবক কর্তব্যরত ডাক্তারের সহায়তায় দ্রুত ফায়ার সার্ভিস, মা ও শিশু হাসপাতাল এবং পৌরসভার কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তাদের অ্যাম্বুলেন্সও অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস বিভাগের বান্দরবান জেলার স্টেশন মাস্টার রনধীর দত্ত ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্স অকেজো থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের দমকল বাহিনীর কোন সদস্য উদ্ধার অভিযানের সময় গুরুতর আহত হলে তাদের দ্রুত চিকিৎসা সেবা দিতে আমরা ব্যর্থ হব। তপন কান্তি বড়ুয়া আরো জানান, সরকারি সংস্থার অ্যাম্বুলেন্সগুলো না পেয়ে দীর্ঘ চেষ্টার পর বেসরকারি একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে তিনি তার স্ত্রীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। এসময় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলোজি বিভাগের ডাক্তার ইব্রাহিম বলেন, রোগীর অবস্থা এতই সঙ্কটাপন্ন ছিল যে, আর অল্প সময় দেরি হলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হতো না। বান্দরবান সিভিল সার্জন ডা. অনুপ দেওয়ান সদর হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার বিষয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে সাংবাদিকদের জানান, ১৪ বছর আগের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে গত একবছর ধরে অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রোগীদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি জানান, সারাদেশের হাসপাতালের চিত্র খুবই ভয়াবহ। শহরের মধ্যমপাড়ার বাসিন্দা সুকোমল বড়ুয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. প্রবীর চন্দ্র বণিকের ভুল চিকিৎসায় আমার স্ত্রী সম্প্রতি মারা যান। এদিকে সদর হাসপাতালে অব্যবস্থাপনার বিষয়টি গত ১০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হলে জেলা প্রশাসক মিজানুল হক চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে ডাক্তার এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, চাকরি করার ইচ্ছে না থাকলে, চাকরি ছেড়ে চলে যান। এসময় তিনি রোগীদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে না ফেলার জন্য ডাক্তারদের কড়া নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসক হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা বিষয়টি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে উপস্থিত সভায় নির্দেশ দেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন