মোক্তার হোসেন মোল্লা, সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) থেকে
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আগামীকাল দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়েও হতে যাচ্ছে এ নির্বাচন। অন্যান্য স্থানের মতো বিএনপির প্রার্থীরা আওয়ামী দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠালেও এখানে চিত্র ভিন্ন। উপজেলাটির ১০ ইউনিয়নের এমনও ইউনিয়ন রয়েছে যেখানে বিএনপি তার দলীয় প্রার্থীও দিতে পারেনি। আর যে কয়েকটিতেই দিয়েছে, তা শুধু নাম মাত্র, তাতেও আবার রয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থী। সোনারগাঁয়ের প্রেক্ষাপটে এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাথে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদেরই হবে মূল প্রতিযোগিতা। তাই, সাধারণ জনগণের মতে, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয়ভাবে যে ব্যক্তিদের নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন, তার মধ্যে বেশিরভাই ভুল সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাছাড়া প্রকাশ্য দিবালোকে অনেক নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করলেও রাতের আঁধারে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা করছেন, যা বন্ধ না হলে বেশিরভাগ ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীদের জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না বলেও মাঠ পর্যায় গুঞ্জন রয়েছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রভাবশালী ইউনিয়ন হিসেবে পরিচিত মোগরাপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরিফ মাসুদ বাবু প্রকৃত পক্ষে আওয়ামী পরিবারেরই সদস্য। তার বাবা, চাচাসহ সকলেই আওয়ামী লীগের পরিক্ষিত কর্মী ও ত্যাগী নেতা। তাছাড়া বাবু’র ব্যক্তি ইমেজও রয়েছে যথেষ্ট। অপরদিকে, বিএনপি প্রার্থী পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী চপল নির্বাচনী মাঠে এতটাই আনাড়ি যে, স্থানীয়দের দাবি-ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বার হওয়ার যোগ্যতাও রাখে না বিএনপির এ প্রার্থী। উপজেলার শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত পিরোজপুর ও কাঁচপুর ইউনিয়নে হাড্ডা হাড্ডি লড়াই হবে বলে মাঠ পর্যায় জানাগেছে। পিরোজপুর ইউনিয়নে সরকার দলীয় প্রার্থী যুবলীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম গত ইউপি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী রফিকুল ইসলাম বিডিআর এর সাথে পরাজিত হলেও এবার তার অবস্থান অনেকটা ভাল। তবে সাধারণ জনগণের দাবি, স্থানীয় অনেক আওয়ামী লীগ নেতাই বিএনপির প্রার্থীর রফিকুল ইসলামের বর্তমান শেলটার দাতা। যারা রাতের আঁধারে তার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে নির্বাচনে তার জয়ের নীলনকশা কষছেন। সে সকল নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সাথে আন্তরিক হয়ে কাজ না করলে জয় অনিশ্চিত। অপরদিকে, কাঁচপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ নেতা মোশারফ ওমর দলীয় মনোনয়ন পেলেও ইউনিয়নের ৬ চার বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা ফজলুল হকের রয়েছে ব্যাপক ব্যক্তি ইমেজ। তাছাড়া, বিএনপি সরকারের সময় তার ছেলে সেলিমুল হক রুমি ও অন্যান্য ছেলেদের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের ঘটনায় এখনো আতকে উঠে স্থানীয় নির্যাতিতরা। তাছাড়া, এখানে রয়েছে আওয়ামী লীগের অন্তঃদ্বন্দ্ব। আর মোশারফ ওমর ও তার ভাই বাবু ওমরের নানান সন্ত্রাসী কর্মকা-ে এমনিতেই অতিষ্ঠ কাঁচপুরের সাধারণ মানুষ। সার্বিকভাবে কাঁচপুরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর চেয়ে বিএনপি প্রার্থী অনেকটাই এগিয়ে। জামপুর ইউনিয়নে হামিম শিকদার শিপলু আওয়ামী লীগ প্রার্থী হলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক প্রভাবশালী নেতা তার পক্ষে কাজ করলেও চাউর আছে রাতের আঁধারে তার বিপক্ষে কাজ করার। তাছাড়া, স্থানীয় এলাকায় তার বিরুদ্ধে রয়েছে সন্ত্রাসী কর্মকা-, জোর করে সাধারণ নিরীহ মানুষের জমি দখল ও জমির মাটি কেটে নেয়ার গুরুতর অভিযোগ। স্থানীয়রা জানায়, নির্বাচনের আগে স্থানীয় কৃষি জমির মাটি কেটে পুকুর বানিয়েছে আর নির্বাচনে জয়ী হলে না-কি বানাবে সমুদ্র। অপরদিকে, বিএনপি প্রার্থী আনোয়ার জাহিদ টুলু’র বিপক্ষে রয়েছেন আরেক বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান লিটন। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাহ মোহাম্মদ আবু হানিফও রয়েছে যথেষ্ট সুনাম। ইউপির সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন এখানে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে খায়রুজ্জামান লিটনের সাথে বর্তমান চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আবু হানিফের। সম্ভুপুরা ইউনিয়নে উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেন্ত্রী এডভোকেট নুর জাহান বেগমের বিপক্ষে রয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোস্তফা মেম্বার। এ ইউনিয়নে জাতীয় পার্টির আব্দুর রব ও বিএনপির প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেনসহ ৪জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোস্তফা মেম্বার ও জাতীয় পার্টির আব্দুর রব’র মধ্যে। সনমান্দী ইউনিয়নে ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয় যুবলীগ নেতা জাহিদ হাসান জিন্নাহ আওয়ামী লীগ প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছে আরেক আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিন সাবু। এখানে প্রায় প্রতিদিনই সাবু’র সমর্থকদের উপর নির্যাতন ও পোস্টার ছিলে ফেলার ঘটনা সাবু’র অবস্থান আরো দৃঢ় করছে বলেও এলাকার সাধারণ নিরব ভোটারদের দাবি। অপরদিকে, এ ইউনিয়নে রয়েছে আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী আমান উল্লাহ আমান। এই ইউনিয়নে বিএনপির কোন প্রার্থী না থাকায় ত্রিমুখী নির্বাচন হবে আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিদ্রোহীদের মধ্যেই। বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নে আওয়ামী দলীয় প্রার্থী আল আমিন সরকারের বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী মাহবুব হোসেন সরকার। তাছাড়া আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন ডা. আব্দুর রউফ। অপরদিকে, বিএনপি প্রার্থী হিসেবে আছেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গাজী আবু তালেব। এ ইউনিয়নেও রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে রাতের আঁধারে কাজ করার অভিযোগ। বারদী ইউনিয়নে কামাল হোসেন ও আমিনুল ইসলাম ভুইয়া আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান জহিরুল হকের সাথে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আমিনুল ইসলাম ভুইয়ার সাথে। অপরদিকে, বিএনপি প্রার্থী সেলিম হোসেন দিপুকে এখনো সাধারণ ভোটাররা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দেখছেন বাচ্চা হিসেবেই। নোয়াগাঁও ইউনিয়নে মোট চেয়ারম্যান প্রার্থী ৪ জন। আওয়ামী দলীয় প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান দেওয়ান উদ্দিন চুন্নু, বিদ্রোহী প্রার্থী মাওলানা ইউসুফ দেওয়ান, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ডা. মিজানুর রহমান ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান সামসুল আলম সামসু। এই ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাওলানা ইউসুফ দেওয়ান মাঠ পর্যায়ে এখনো এগিয়ে আছেন। আর দেওয়ান উদ্দিন চুন্নু মাঠে আছেন প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে। সাদীপুর ইউনিয়নে সরকার দলীয় প্রার্থী ও বতর্মান চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ মোল্লা, বিএনপি প্রার্থী কামরুজ্জামান মাসুম ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী আবুল হাশেম। এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুর রশিদ মোল্লার সাথে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি প্রার্থী কামরুজ্জামান মাসুমের সাথে। এ ধাপে সোনারগাঁও উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ৫ শতাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ১০ জন, বিএনপি মনোনীত ৯ জন, জাতীয় পার্টি মনোনীত ২ জন ও বিদ্রোহী প্রার্থীসহ মোট ৫৩ জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন