শষ্য ও মৎস্যভান্ডার খ্যাত উত্তরবঙ্গের সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, তাড়াশ, উল্লাপাড়া, পাবনার ভাঙ্গুড়া, নাটোরের গুরুদাসপুর, বগুড়া ও নওগাঁ সহ মোট ০৫ জেলাব্যপী বিস্তৃত দেশের বৃহত্তম বিল “চলনবিল”। রাস্তা-ঘাট না থাকায় কৃষিসমৃদ্ধ এই বিলাঞ্চলের মানুষ এখনো অনেকটাই অনগ্রসর। বর্ষা মৌসুমে নৌ যানে পণ্য পরিবহন ও চলাচল সহজ হলেও, শুষ্ক মৌসুমে বিলাঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষকে বিভিন্ন পন্য পরিবহন ও যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এই ভোগান্তি থেকে বিলাঞ্চলের মানুষকে মুক্তির পথ দেখাচ্ছে চলনবিলের বুক জুড়ে নির্মিত সাড়ে আট কিলোমিটারের ডুবোসড়ক (সাব মারসিবল রোড)। শুষ্ক মৌসুমে যাতায়াত সহজ করে তোলার পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে অবাধ নৌ যান চলাচলেও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে না এই সড়কটি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়, তাড়াশ উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, তাড়াশ, উল্লাপাড়া, পাবনার ভাঙ্গুড়া, নাটোরের গুরুদাসপুর, বগুড়া ও নওগাঁ সহ মোট ৫ জেলাব্যপী বিস্তৃত দেশের বৃহত্তম বিল “চলনবিল”। এই বিল অধ্যুষিত এলাকাগুলো থেকে উৎপাদিত কৃষি ও মৎস্যপন্য দেশের চাহিদার বৃহৎ একটি অংশ পূরন করার ফলে চলনবিল মৎস্য ও শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত। বিল এলাকার বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী হাট কৃষিপন্য বেচাকেনায় সারাদেশে সুপরিচিত।
কিন্তু এই এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলির একটি যাতায়াত ব্যবস্থা। বিলাঞ্চলের কিছু এলাকার যাতায়াত ব্যাবস্থা ভালো থাকলেও তাড়াশ উপজেলার মাগুড়াবিনোদ ও সগুনা ইউনিয়ন, গুরুদাসপুরের মর্শিন্দা ও চাটমোহরের ছাইকোলা ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম সড়ক যোগাযোগের আওতার বাইরে। এই এলাকাগুলোর উৎপাদিত কৃষিজ পন্য পরিবহন করা হয় একমাত্র বর্ষা মৌসুমে। ফলে এই এলাকার কৃষকেরা যেমন ন্যায্যমুল্যবঞ্চিত তেমনি যাতায়াতেও ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছিল যুগের পর যুগ।
এই সমস্যার সমাধানে ২০১৬ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় ডুবোসড়ক নির্মানের উদ্যেগ গ্রহন করে। এই সড়কটির বৈশিষ্ট হচ্ছে, শুষ্ক মৌসুমে এই সড়কে যানবাহন চলাচল করবে, আবার বর্ষায় সড়কটি তলিয়ে যাবে পানির নিচে, যাতে এই অঞ্চলের প্রধান বাহন নৌযান চলাচল বিঘ্নিত না হয়। বিশেষ প্রযুক্তিতে নির্মিত এই সড়ক পানিতে তলিয়ে থাকলেও এর কোন ক্ষয়ক্ষতি হবে না।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ওয়াবদা বাঁধ থেকে নাদো সৈয়দপুর বাজার পর্যন্ত ৮.৫৩ কিলোমিটার সাবমারসিবল সড়কটির নির্মান ব্যায় ১০ কোটি ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৪৯০ টাকা। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া এই ডুবোসড়কের নির্মান কাজ ২০১৮ সালের জুনের পূর্বেই শেষ হবার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। নির্মান পন্য পরিবহন সমস্যার কারনে নির্মান কাজ শেষ করার সময় বর্ধিত করে ২০১৯ সাল করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই সড়কের ৯৫ ভাগ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এখন চলছে শেষ মুহুর্তের কাজ। চলতি বছরের জুন মাসের আগেই এই ডুবোসড়কটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন বা নির্মানকাজ শতভাগ শেষ না হলেও এই অঞ্চলের মানুষকে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি থেকে মুক্তির পথ দেখাচ্ছে এই সড়কটি। ইতিমধ্যেই এই সড়ক ব্যাবহারের মাধ্যমে কৃষি ও মৎস্যপন্য পরিবহন ও যাতায়াত শুরু হয়েছে। সিমীত আকারে কিছু যানবাহন চলাচলেই এই এলাকাগুলোর অবস্থার পরিবর্তনর শুরু হয়েছে।
তাড়াশের মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম আতিকুল ইসলাম বলেন, চলনবিলের মাঝে নির্মিত সড়কটি এই জনপদের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাবে। সড়ক নির্মানের ফলে তাড়াশ উপজেলা সদরের সাথে প্রত্যান্ত অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়ে উঠবে। ফলে কৃষিপন্যের মুল্য নিশ্চিত হবার পাশাপাশি এই এলাকার মানুষের উপজেলা সদরে অবস্থিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা গ্রহন সহজ হবে।
তাড়াশ উপজেলা প্রকৌশলী আহম্মেদ আলী জানান, তাড়াশ ওয়াবদা বাঁধ থেকে নাদো সৈয়দপুর বাজার পর্যন্ত নবনির্মিত সাবমারসিবল সড়ক উপজেলা সদরের সাথে তাড়াশ উপজেলার মাগুড়াবিনোদ ও সগুনা ইউনিয়ন এবং গুরুদাসপুরের মর্শিন্দা ইউনিয়নকে সংযুক্ত করবে। এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে সড়কটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হলে এই অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ এর পূর্নাঙ্গ সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন