দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেল কারখানায় ৪০টি কোচ (বগি) মেরামতের কাজ চলছে। প্রতি বছরের মতো এবারও আসছে ঈদুল ফিতরে ঘুরমুখো মানুষকে যাত্রীসেবা দিতে ৪০ টি কোচের (বগি) মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে চলতি গোটা রমজান মাস জুড়ে কারখানায় ওই মেরামত কাজ চলবে। মেরামত করা এ সব কোচ আগামী ১ জুনের মধ্যে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সৈয়দপুর কারখানা থেকে লালমনিরহাট ও পাকশী পরিবহন বিভাগে হস্তান্তর করা হবে। আসন্ন ঈদে ওই সব কোচ (বগি) অতিরিক্ত কোচ হিসেবে যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোয় জুড়ে দিয়ে বেশি সংখ্যক যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানা গেছে। ঈদের ঘরমুখী যাত্রীদের বেশি সেবা দিতে প্রতিবছর এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে রেল কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন পেশার মানুষ কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরতে কিংবা বাড়ি থেকে কর্মস্থল ফিরতে নানা সুযোগ-সুবিধার জন্য রেলভ্রমনেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকেন। ফলে প্রতি বছর ঈদে রেলওয়ের ওপর মানুষের চাপ বেড়ে যায় অনেক। আর তাই ঈদে বেশি সংখ্যক যাত্রী পরিবহন ও অধিকতর যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিশেষ ট্রেন ছাড়াও যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোয় অতিরিক্ত বগি (কোচ) সংযোগ করে থাকে।
রেলওয়ে বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশের রেল কোচ মেরামতের দুইটি কারখানায় রয়েছে। এর একটি পশ্চিমাঞ্চলের সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা। অপরটি পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে অবস্থিত রেল কারখানা। এবারে ঈদেও দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেল কারখানায় ৪০ টি কোচ মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এসব কোচ মেরামতে রাজস্ব খাত হতে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার নিয়মিত কাজের বাইরে ওই কোচগুলো মেরামত করা হচ্ছে। গত ৭ মে অর্থাৎ গেল ১ রমজান থেকে ওই মেরামত কাজ শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কারখানার বগি শপ, ক্যারেজ শপ, জেনারেল ওভার হোলিং শপ, পেইন্ট শপসহ ২৮টি শপে শ্রমিক-কর্মচারীদের কর্মব্যস্ততা। কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন কোচ মেরামতের কাজ। তবে কারখানায় লোকবল সঙ্কটের কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে শ্রমিক-কর্মচারীদের।
রেলওয়ে কারখানার সূত্র জানায়, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় শ্রমিক-কর্মচারীদের মঞ্জুরীকৃত পদ রয়েছে ৩ হাজার ১৭১ জন। বর্তমানে এখানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১ হাজার ২০ জন শ্রমিক-কর্মচারী। ফলে বর্তমানে ৬৭ ভাগ জনবল ঘাটতি রয়েছে এ কারখানাটিতে। তারপরও কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়মিত কাজের বাইরে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য অতিরিক্ত কাজ করতে হচ্ছে। তবে ঈদের ৪০টি কোচ সরবরাহকে বাড়তি চাপ মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
কারখানার ক্যারেজ শপের ইনচার্জ ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান জানান, ঈদ এলে আমাদের কাজের গতি বহুগুণ বেড়ে যায়। কেন না এ সময় যাত্রীসেবার বিষয়টি মাথায় রেখে অতিরিক্ত কোচ মেরামতের চাপ থাকে। ঈদে ঘরমুখী মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে অতিরিক্ত কাজ করতে হয় শ্রমিক-কর্মচারীদের। একই শপের কয়েকজন শ্রমিক জানান, অতিরিক্ত কাজের জন্য এবার ওভারটাইম সুবিধা দেয়া হয়নি। অথচ ওভারটাইম ডিউটি পেলে শ্রমিকরা মূল বেতনের সঙ্গে বাড়তি আয় করতে পারতেন। প্রতিবছরের মতো এবারও ওভারটাইম ডিউটি দাবি জানান তারা।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) মো. জয়দুল ইসলাম বলেন, কারখানায় যে জনবল সংকট রয়েছে, তা দ্রুততম সময়ে কেটে যাবে। আর এবারের ঈদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কারখানায় কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীরা আন্তরিকভাবে তাদের কাজ করে চলেছেন। আশা করি নির্দিষ্ট সময়ে আমরা লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সক্ষম হবো। এছাড়াও শ্রমিক-কর্মচারীদের ওভারটাইমের বিষয়টি দেখা হচ্ছে। খুব শিগগিরই কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা ওভারটাইম পাবে বলে জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন