কুড়িগ্রামের উলিপুরে বুড়িতিস্তা নদী খননে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কোথাও জায়গা না কেটে, আবার কোথাও নদীর তীর বা পার না বেঁধেই (স্লোভ) খনন করা হয়েছে। এমনকি দখলদারদের অবৈধ স্থাপনা রক্ষায় ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে নদীর গতিপথ। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ একটি মসজিদ। এদিকে বিত্তশালীদের স্থাপনা না সরিয়ে, গরিব কৃষকদের আধা-পাঁকা ধান নষ্ট করে খনন করায় প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এরকম অনিয়মের অভিযোগে বিক্ষুব্ধ ও ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসী ও বুড়িতিস্তা বাঁচাও-উলিপুর বাঁচাও আন্দোলনের কর্মিরা নদী খনন কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
জানা গেছে, উলিপুর পৌর-শহরের গুনাইগাছ ব্রিজের মুখ ভরাট করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকে কেন্দ্র করে উলিপুর প্রেসক্লাব ও রেল,নৌ যোগাযোগ পরিবেশ উন্নয়ন গণ-কমিটি বুড়িতিস্তা বাঁচাও-উলিপুর বাঁচাও আন্দোলন শুরু করেন। সম্প্রতি সরকার ডেল্টা প্ল্যানের আওয়তায় বুড়িতিস্তা নদী খননের কাজ শুরু হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তারা মিলে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে। অবৈধ দখলদারের সাথে গোপন আঁতাত করে নানা কৌশলে ব্রিজের মুখে খনন শুরু না করে কালক্ষেপন করতে থাকেন। পরে স্থানীয়দের চাপের মূখে স্কেভেটর মেশিন দিয়ে কাজ শুরু করেও রহস্যজনক কারনে কাজ না করে মেশিন সরিয়ে নিয়ে যায়।
সরেজমিন দেখা গেছে, নদী খননে নানা অনিয়মের চিত্র। গুনাইগাছ ব্রিজের মুখ ভরাট করে মার্কেট গড়ে তুলেছেন অপু নামের এক স্থানীয় প্রভাবশালী। সেখানে মার্কেটের অর্ধেক অংশে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করে রাখলেও তা অপসারণ করা হয়নি। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদার ওই স্থাপনা অপসারণ না করে ব্যক্তিমালিকানা জায়গা খনন করে নদীর গতিপথ পাল্টে দিয়েছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ একটি মসজিদ। এছাড়াও নদী খননের মাটি ইটভাটায় বিক্রি করারও গুরুত্বর অভিযোগ রয়েছে। নদী খননে উঁচু তলদেশে ১০ ফুট ও নিচু তলদেশে ৮ ফুট খননের নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।
সূত্র জানায়,উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার সাড়ে ৩১ কিলোমিটার নদী খননে উঁচু তলদেশে ১০ ফুট ও নিচু তলদেশে ৮ ফুট খননের জন্য প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে দু’টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় বুড়ি তিস্তার খনন কাজ শুরু হয়।
উলিপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু সাঈদ সরকার বলেন, বুড়িতিস্তা নদী দখল করে বিপণী বিতান গড়ে তোলার বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছিলাম। উলিপুরের হাজারো মানুষ সে আন্দোলনে অংশ নেয়। যদি ওইসব স্থাপনা না সরানো হয়, তাহলে উলিপুর বাসী আবার আন্দোলন গড়ে তুলবে।
ঠিকাদার এমদাদ হোসেন বলেন, নিয়ম মাফিক কাজ করা হচ্ছে। এখানে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, অবৈধ দখলদারদের স্থাপনা অপসারণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন