শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বাজার ব্যবসায়ীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ : সরকারি সম্পত্তি দখল করে প্লট বাণিজ্যের অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রতন বৈষ্ণব ত্রিপুরা, রামগড় (খাগড়াছড়ি) থেকে
রামগড়-মানিকছড়ি সীমান্তবর্তী হাতিমুড়া বাজারের দোকান প্লট বাজার ফান্ডে রেকর্ডভুক্ত করা এবং  সরকারি জায়গা জবর-দখল করে দোকান প্লট বিক্রির বাণিজ্যে নেমেছে প্রভাবশালী একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এতে বেহাত হতে চলেছে সড়ক ও জনপথের কোটি টাকার সম্পত্তি। আর এ জবর-দখলকে ঘিরে স্থানীয় ও ব্যবসায়ীদের মাঝে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। সরেজমিন ঘুরে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, রামগড়-মানিকছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী হাতিমুড়া বাজারটির মধ্যদিয়ে অতিবাহিত হয়েছে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক। আর এ বাজারটি নব্বই দশকের পূর্ব পর্যন্ত ছিল মানিকছড়ির অন্দরে। পরবর্তীতে দু’উপজেলার সীমানা চিহ্নিত করতে গিয়ে সেটি রামগড় উপজেলার অন্দরে চিহ্নিত হয়। ফলে এ বাজারটি প্রতিনিয়ত অবহেলার শিকার। বাজারে উন্নয়নের ছোঁয়া নেই। অথচ প্রতিবছর  বাজার ফান্ড এ বাজার থেকে কয়েক লক্ষ টাকার রাজস্ব আয় করছে। বর্তমান বাজার কমিটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে আ’লীগ ও যুবলীগের নেতারা। কমিটির হর্তা-কর্তারা বাজার উন্নয়ন, দোকান প্লট বাজার ফান্ডে রেকর্ডভুক্তকরণসহ নানা কারণ দেখিয়ে অসহায় ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। বাজারের ১২৬টি দোকান প্লট বাজার ফান্ডে রেকর্ডভুক্ত করার  নামে ১ম ধাপে ৮৬টি দোকান থেকে (প্রতিটি) দেড় হাজার টাকা (২০০২-০৩ সালে) ২য় ধাপে ৪০টি (২০১৪-১৫সালে) থেকে (প্রতিটি) ৬ হাজার টাকা হারে হাতিয়ে নিয়েছে সরকার দলীয় নেতারা। মূল সড়কের উভয় পার্শ্বে সড়ক ও জনপথ বিভাগ গড়ে ৬০ ফুট ভূমির পরে দোকান প্লট তৈরি হলেও সম্প্রতি বর্তমান বাজার কমিটিতে থাকা আ’লী ও যুবলীগ নেতারা সংঘবদ্ধ হয়ে সড়ক ও জনপথের বিশাল জায়গা জবর-দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে ১৫*১২= ১৮০ বর্গফুট বিশিষ্ট একটি দোকান প্লট বিক্রি করা হয়েছে দেড় লক্ষ টাকা। এটি ক্রয় করেছেন মো. জাকির সিকদার পিতা. নাছির সিকদার। বর্তমানে ১৫*১২= ১৮০ বর্গফুট বিশিষ্ট ৮টি দোকান প্লট বিক্রি বাবদ ১৫ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই চক্রটি! আর এ কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাজার কমিটির সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম, বাজার কমিটির সেক্রেটারি মো. জাহেদুল ইসলাম (যুবলীগ নেতা), সহ-সভাপতি মংপ্রু মারমা ও মো. শাহাদাৎ হোসেন রিপনসহ একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট! দীর্ঘ দিন ধরে এ বাজার সিন্ডিকেট চক্রের থাবায় ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেও স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের ভয়ে প্রতিবাদকারীরা তটস্থ! ওই সিন্ডিকেট চক্রটি এতই শক্তিশালী যে তাদের কারণে-অকারণে প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে অহেতুক মিথ্যা তথ্য দিয়ে জেলা আ’লীগ নেতা ও প্রশাসনিক কর্তা-ব্যক্তিদের ক্ষেপিয়ে নিজেরা লাভবান হচ্ছে, পক্ষান্তরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অসহায় ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে বর্তমানে সড়ক ও জনপথের বিশাল জায়গা জবর-দখল করে দোকান প্লট নির্মাণে সফল হলে আশে-পাশের ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমিতে অনধিকারে প্রবেশ করে দোকানপ্লট বানিয়ে বিক্রি করতে দ্বিধা করবে না সংঘবদ্ধ চক্রটি! হাতিমুড়ার ব্যবসায়ী মো. আবুল কালাম জানান, এ বাজারের উন্নয়নের নামে কমিটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের হয়রানিতে ফেলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কমিটি। এখন যুবলীগ নেতা মো. জাহিদ প্রভাব খাটিয়ে সরকারি (সড়ক ও জনপথ) জায়গায় দোকান প্লট বিক্রি করছে দেদারসে! এছাড়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাজারের ২০/২৫ জন ব্যবসায়ী জানান, প্রতিনিয়ত কমিটিতে সরকার দলীয় লোকেরা এসে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি করছে। বাজারের সামনে সরকারি (খাস) জায়গায় বছরের পর বছর খুঁচরা ব্যবসায়ীরা তরি-তরকারি বেচাকেনা করতো। বাজারের এ খালি জায়গায় মালামাল, আনারস, আদা-হলুদ লোড-আনলোড করতে ট্রাক দাঁড়াত, এখন সেটি জবর-দখল হয়ে গেল! ফলে পুরো বাজারটি যেমন তার সৌন্দর্য হারাতে বসেছে, তেমনি সরকারের কোটি টাকার সম্পত্তি বেহাত হলো! তাই অচিরেই সরকারি ভূমি জবর-দখলের মহোৎসব বন্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাজার কমিটির সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে যেখানে দোকান-প্লট বরাদ্দ চলছে সেটি সড়ক ও জনপথের জায়গা। আমি এ কাছে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছি না। আমাকে প্রভাবশালীরা ডেকে এ ব্যাপারে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। বাজার সেক্রেটারি ও যুবলীগ নেতা মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, বাজারের নামে ৮ একর সম্পত্তি রয়েছে। কতিপয় ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতার কারণে সেটির অফিসিয়াল কাজ এতো দিনে অগ্রসর হয়নি। তাই এখন প্লট বঞ্চিত ব্যবসায়ীদের মাঝে ন্যায্যমূলে প্লট দিচ্ছি! বর্তমানে যে প্লটগুলো বিক্রি হচ্ছে সেটির সরকারি জায়গায় কী না জানতে চাইলে তিনি তা এড়িয়ে যান। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুদ জানান, হাতিমুড়া বাজার এলাকায় চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের উত্তর পাশে ৬০ ফুট এবং দক্ষিণ পাশে ৬০ ফুট ফাঁকা (খালি) জায়গা সড়ক ও জনপথের সম্পত্তি। এই জায়গায় কেউ দখল (স্থাপনা তৈরি) করতে চাইলে বা করলে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন