পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা
পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়া সরকারি খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে খাদ্যশস্য সংগ্রহে বিভিন্ন প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে গত ১৫ মে জেলা প্রশাসক পঞ্চগড়ের বরাবরে একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। তিনি গত ২৫/৮/১৫ইং তেতুঁলিয়া খাদ্যগুদামে যোগদান করার পর হতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলেছেন। ইতোপূর্বের ন্যায় এবারও তিনি নানা কৌশলে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় খাদ্যশস্য সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তেতুঁলিয়া খাদ্যগুদামে চলতি গম সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭২৭ মেট্রিক টন। তিনি গত এক সপ্তাহ তার কৌশল অনুযায়ী প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অসঙ্গতিপূর্ণভাবে প্রায় ৫শ’ মেট্রিক টন গম সংগ্রহ করেছেন বলে অভিযোগ উঠছে। এ ব্যাপারে তার সাথে এক সপ্তাহ আগে কথা বললে তিনি জানান, মাত্র তিন মেট্রিক টন গম কিনেছেন বলে অভিযোগ অস্বীকার করেন। সময় কম, এই কম সময়ে ১৭২৭ মেট্রিক টন গম কিভাবে ক্রয় করবেন জানতে চাইলে তিনি জানান, সংগ্রহ কমিটি কি করে দেখি। অভিযোগ রয়েছে, অতি ধূর্ত এই কর্মকর্তা নানা কৌশলে নিজের ক্ষমতা অপব্যবহার করে খাদ্য সংগ্রহ করে আসছেন। অভিযোগ রয়েছে, গত ১৬/ ৫/১৬ ইং তেতুঁলিয়া ইউনিয়নের কালারাম জোতের কৃষক মো. সহিরুল ইসলাম ও মো. আবিদুর ইসলাম তাদের ক্ষেতের গম নিয়ে তার গুদামে গেলে খাদ্য তেতুঁলিয়া গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আমজাদ হোসেন বলেন, আমি উপজেলা সিন্ডিকেট কমিটির সুপারিশ ছাড়া গম নিতে পারব না। এদিকে তেঁতুলিয়া উপজেলার সিপাহী পাড়ার বাসিন্দা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সাবেক উপজেলা খাদ্য সংগ্রহ কমিটির সদস্য মো. রিয়াজুল ইসলাম মোল্লাহ জানান, কালারাম জোতের সহিরুল ইসলাম ও আবিদুর ইসলামের গম ফেরৎ দেওয়াতে একটি গণ স্বাক্ষরিত অভিযোগ খাদ্যমন্ত্রী ও রংপুর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক, জেলা প্রসাশক পঞ্চগড় এর বরাবরে আনায়ন হয়েছে। ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, খাদ্য বিভাগ রংপুরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশীর্বাদপুষ্ট ওই খাদ্য কর্মকর্তা মো. আমজাদ হোসেন গত ২৫ আগস্ট/১৫ তেতুঁলিয়ায় যোগদান করার পর ভিজিডি’র ৩০ কেজি বস্তায় ২৯ কেজি, সরকারের খালি বস্তা আত্মসাৎ করেন। এছাড়াও তার খাদ্যগুদামের নিরাপত্তা প্রহরীর যোগসাজসে তার এহেন দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে। খাদ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের বরাবরে আনিত ওই অভিযোগে বলা হয়, এই খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মো. আমজাদ হোসেনের অন্যত্র বদলিসহ তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত দাবি করা হয়। এ ব্যাপারে তেতুঁলিয়া খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ওই কালারামজোতের সহিরুল ও আবিদুর গম এনেছিল ঠিক, কিন্তু উপজেলা কমিটির নির্দেশনা ও সুপারিশ না থাকায় তা আমি ফিরিয়ে দিয়েছি। জানা গেছে, ওই খাদ্যগুদামের নিরাপত্তা প্রহরীর যোগসাজসে কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীদের ম্যানেজ করে মো. আমজাদ হোসেন নিজে একটি কৃষকের মনগড়া লিস্ট তৈরি করেন তারা আদৌ কৃষক নয় বলে অভিযোগকারী মো. রিয়াজুল মোল্লাহ জানান। তিনি আরো জানান, দুর্নীতিবাজ খাদ্য কর্মকর্তা মো. আমজাদ হোসেন ওই কৃষি কার্ডধারীকে নগদ ৫শ’ টাকা ধরিয়ে দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট করে দেন এবং একটি ব্লাউং চেক কেটে নেন। পরবর্তীতে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের নিকট হতে গম সংগ্রহ করে ওই প্রতি টন গমে তিনি নগদ তিন হাজার টাকা উৎকোচ আদায় করেন। এভাবে তিনি গত একসপ্তাহে ৫শ’ মেট্রিক টন গম সংগ্রহ করেছেন বলে মো. রিয়াজুল ইসলাম মোল্লাহ অভিযোগ করেন। বলা বাহুল্য যে, প্রতি টনে তিন হাজার টাকা হলে ১৭০০ মেট্রিক টনে উৎকোচ বাণিজ্য হবে একান্ন লাখ টাকা। অভিযোগ করা হয়েছে, মো. আমজাদ হোসেন গত আমন সংগ্রহ মৌসুমে তিনি দিনাজপুর হতে সুকৌশলে তার মনপূতঃ চাল মিল মালিকদের নিকট হতে চাল সংগ্রহ করেন। জানা যায়, তিনি দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তরে নাজির ছিলেন এবং সে সময়ের জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদোন্নতি পেয়ে রংপুরে চলে যান। তারাই আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে এখানে চাকরি করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তার এ ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপ তেতুঁলিয়ায় প্রকাশ পাওয়ায় স্থানীয় সচেতন নাগরিক ও বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে ওই অভিযোগ আনায়ন করেন। এ ব্যাপারে মো. আমজাদ হোসেন তেতুঁলিয়া খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা বলেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়। হোক তদন্ত, মানুষ তো বলবেই। আপনারা লেখেন কি করবো। সচেতন নাগরিক সমাজ ও স্থানীয় কৃষক অনতি বিলম্বে এই দুর্নীতিবাজ খাদ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন