আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শুরু হয়েছে বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে বাস কাউন্টারগুলোতে রয়েছে টিকিট প্রত্যাশীদের ভিড়। যাত্রীদের কাছে ২ থেকে ৪ জুনের টিকিটের চাহিদা বেশি। সকালে রাজধানীর গাবতলী, আসাদগেট, শ্যামলী, কলাবাগান, সায়েদাবাদ ও ফুলবাড়িয়া টার্মিনালে গিয়ে টিকিট প্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
ঈদের আগের তিন দিন অর্থাৎ ২ থেকে ৪ জুনের টিকিট সংগ্রহ করতে ভোররাত থেকে কাউন্টারগুলোতে ভিড় করেছেন টিকিট প্রত্যাশীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও তারা কাঙিক্ষত টিকিট পাচ্ছেন না। অনেকের অভিযোগ, কাউন্টারের লোকজনকে অতিরিক্ত টাকা দিলেই কাঙিক্ষত টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হলেও টিকিট সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ভোর থেকেই কাউন্টারের সামনে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন অনেকে। নাজধানীর শ্যামলী ও গাবতলী বাস টার্মিনালে হানিফ, শ্যামলী, একে ট্রাভেলস, এস আলমসহ বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টারে রয়েছে মানুষের দীর্ঘ লাইন। সায়েদাবাদে বাস টার্মিনালে রয়েল, হানিফ, শ্যামলী, একে ট্রাভেলস স্টার লাইন, তিশা, দোয়েল, ঈগল বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টারে রয়েছে মানুষের দীর্ঘ লাইন।
টিকিট কিনতে আসা কাইয়ুম জানান, চট্টগ্রামের জন্য ৩ জুনের টিকিট কিনতে ভোররাতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। এস আলম কাউন্টারে সকাল ৮টায় টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার দুই ঘণ্টা পর কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে টিকিট শেষ। পরে কাউন্টারের লোকজনকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করেছেন। রয়েল পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার রুবেল জানান, ২ জুন থেকে ৫ জুনের টিকিটের চাহিদা বেশি। ঢাকা-কুমিল্লার ভাড়া ৩০০ টাকায় টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। কারো কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে না। সায়েদাবাদ হানিফ বাস কাউন্টারে কথা হয় আবুল কাশেমের সঙ্গে তিনি বলেন, অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হওয়ার তিন ঘণ্টার মধ্যেই ২ থেকে ৪ জুনের সব টিকেট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। ৪ জুন পরিবার নিয়ে বাড়ি যাব, তাই ৪০০ টাকার টিকিট ৬০০ টাকা দিয়ে সংগ্রহ করেছি। সায়দাবাদ এলাকার হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার জি এম তসলিম বলেন, আগামী ২ থেকে ৪ জুনের চট্টগ্রাম, বরিশাল বিভাগের ৩০টি বাসের ১২০০ টিকিট বিক্রি হয়েছে। আগামীকাল থেকে আবারো টিকিট বিক্রি করা হবে। যারা আজকে টিকিট সংগ্রহ করতে পারেনি তারা শনিবার টিকিট পাবেন। তিনি বলেন, যাত্রীদের বেশি চাপ থাকলে অতিরিক্ত বাস যোগ করা হবে। সবাই টিকিট পাবেন।
৫ জুন ঈদুল ফিতরের সম্ভাব্য দিন ধরে টিকিট বিক্রি চলছে। ৩০ মে বৃহস্পতিবার ২৪ রমজান। পরের দু’দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। এরপরের দিন ২ জুন (২৭ রমজান) শবে কদরের ছুটি। ৩ জুন সবশেষ কর্মদিবস। যে কারণে এবার ৩০ মে ও ৩ জুনের টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। রাজধানীর কল্যাণপুর, শ্যামলী, গাবতলী, মহাখালী ও আসাদগেট বাস কাউন্টারে দেয়া হচ্ছে অগ্রিম টিকিট। দিনাজপুর রুটের যাত্রী আসিফ আলী বলেন, টিকিট পাই নাই তা নয়, পাইছি। কিন্তু যে দিনের চাহিদা সেদিনের পাই নাই। যদি পরিবহন কর্তৃপক্ষ ভাবতো, চাহিদা যেদিন বেশি সেদিন গাড়ি ২-৩টা বাড়ায় দেব তাহলে আর টিকিটের হাহাকার কম হইতো। পরিবহনের বাসে বাড়ি ফিরব। সেটা আর হইলো না। আবার পরদিন সকালের এসি টিকিটও নেই। কাউন্টারে টিকিট যেন সোনার হরিণ।
গাবতলী হানিফ পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার মোশারফ হোসেন বলেন, ‘সকাল থেকেই যারা লাইনে দাঁড়িয়েছেন, তাদের ৯০ শতাংশের চাহিদা ৩ তারিখের টিকিট লাগবে। এক যাত্রী একাধিক টিকিট কিনছেন। এরআরের টিকিট বিক্রেতা জানান, চাহিদা বেশি থাকায় ৩০ মে ও ৩ জুনের টিকিট শেষ। তবে অন্যদিনের টিকিট মিলছে। শ্যামলী পরিবহনের ৪টি কাউন্টার থেকে দেয়া হচ্ছে ঈদুল ফিতরের বাসের টিকিট। কল্যাণপুর কাউন্টার থেকে গাইবান্ধা, রংপুর কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর রুটের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। শ্যামলী থেকে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, বালিয়াডাঙ্গী ও রানীশংকৈলের টিকিট, আসাদগেট থেকে ফুলবাড়ী- দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারীর বং টেকনিক্যাল মোহনা পাম্পের কাউন্টার থেকে দেয়া হচ্ছে পাবনার টিকিট।
শ্যামলীতে পঞ্চগড়ের যাত্রী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘হানিফে এসি বাসের ভাড়া চায় ২০০০ টাকা। বাধ্য হয়ে টিকিট না কেটে শ্যামলীতে আসছি। এখানে এসেও বিশেষ পার্থক্য পাইনি। এখানে ১৮০০ টাকা। বাধ্য হয়ে কেনা।
কল্যাণপুরে শ্যামলী পরিবহনের ম্যানেজার আলমগীর কবীর বলেন, এবার গরম বেশি হওয়ায় এসি বাসের টিকিটের আগ্রহ বেশি। সবাইকে কাঙ্ক্ষিত দিনের টিকিট দেয়া সম্ভব না। একটু কম বেশি তো হয়ই। তবে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে যাত্রীদের কাঙ্ক্ষিত টিকিট দিতে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন