ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা
দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না কর্মজীবী মানুষের। স্বজনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগ করতে যারা ঈদের ছুটিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শত দুর্ভোগ সহ্য করে বাড়িতে এসেছিলেন, ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার সাথে সাথে কর্মস্থলে ফিরতে গিয়েও একই দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে তাদেরকে। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও মিলছে না বাসের টিকিট, ট্রেনের টিকিট কাউন্টারে না পেলেও উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে চায়ের দোকানে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে দূরপাল্লার বাস কাউন্টার ও রেলস্টেশনে কর্মক্ষেত্রে ফেরা মানুষের দুর্ভোগ। রেলের টিকিট যেন সোনার হরিণ, অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও মিলছে না বাসের টিকিট। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন ও বাসের ছাদেই ঠাঁই নিয়ে ফিরতে হচ্ছে কর্মস্থলে। ফুলবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিদিন ফুলবাড়ী রেলস্টেশন দিয়ে ঢাকা শহরে ৩টি, খুলনায় ২টি ও রাজশাহীতে ২টি আন্তঃনগর ট্রেন যাতায়াত করে। এই স্টেশনে ঢাকা যাতায়াতকারী যাত্রীদের জন্য ২০টি করে ৩টি ট্রেনে মাত্র ৬০টি সিট বরাদ্দ আছে, এছাড়া খুলনাগামী ট্রেনে ৮টি করে ২টি ট্রেনে ১৬টি ও রাজশাহীগামী ট্রেনে ৮টি করে ১৬টি আসন বরাদ্দ আছে, এছাড়াও ঈদ উপলক্ষে কেবল ঢাকা যাত্রীদের জন্য একটি বিশেষ ট্রেন যাতায়াত করছে, সেই ট্রেনে মাত্র ৩৪টি সিট বরাদ্দ রয়েছে। অথচ প্রতিদিনে এই স্টেশনে দু’শতাধিক যাত্রী টিকিটের জন্য ভিড় করছেন। তিনি আরো বলেন, যাত্রীদের অনুরোধে আসন নম্বর ছাড়াও নরমাল টিকিট বিক্রি করতে হচ্ছে। সেই টিকিট নিয়ে যাত্রীরা ট্রেনে দাঁড়িয়ে গন্তব্যস্থলে যাচ্ছে। ঢাকাগামী কোচ কাউন্টার হানিফ এন্টারপ্রাইজের ফুলবাড়ী কাউন্টার ম্যানেজার আজিজার রহমান বলেন, এই রোডে তাদের সারাদিনে ১৮টি বাস যাতায়াত করে। ১৮টি বাসে তাদের ৯০টি সিট রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন প্রায় ২ শতাধিক যাত্রী তাদের কাছে টিকিটের জন্য ভিড় করছে। ফলে স্বল্পসংখ্যক আসন দিয়ে যাত্রীদের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, ফুলবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ট্রেনের অধিকাংশ টিকিট কালোবাজারিতে বিক্রি করার ফলে ট্রেনের টিকিট অতিরিক্ত দামে স্টেশনের অনেক চায়ের দোকানেও বিক্রি হচ্ছে। ট্রেন যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, ফুলবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনটি যাতায়াতের কেন্দ্রবিন্দু। এই স্টেশন দিয়েই দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ীসহ চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ যাত্রী যাতায়াত করেন। এছাড়া ফুলবাড়ীর সন্নিকটে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড, বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও উত্তরাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিনোদন কেন্দ্র স্বপ্নপুরীতে আসা দূর-দূরান্তের যাত্রীরাও এই স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। ফলে শুধু ঈদ মৌসুম নয় সারা বছরেই ফুলবাড়ী স্টেশনে ট্রেন যাত্রীদের ভিড় লেগে থাকে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্টেশনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তারা সারা বছরেই কালোবাজারিতে টিকিট বিক্রি করে থাকে। এ বিষয়ে সহকারী স্টেশন মাস্টার আব্দুস সাত্তার আংশিক স্বীকার করে বলেন, অনেকেই কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনে সেই টিকিট বাহিরে বিক্রি করছেন। ফলে তাদের সঙ্গে স্টেশনের কোনো কর্মকর্তা- কর্মচারী জড়িত নেই। তিনি আরো বলেন, ফুলবাড়ীতে প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেনে কমপক্ষে ৫০টি করে আসন প্রয়োজন। সেখানে কর্তৃপক্ষ মাত্র ১০ হতে ২০টি আসন দিয়ে রেখেছে। সে কারণেই টিকিটের সংকট সবসময় লেগে থাকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন