মোহাম্মদ জসিমউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা উত্তর থেকে
রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ কুমিল্লা-১ আসনের দাউদকান্দি উপজেলা। এখানে আগামী ৪ জুন তৃণমূলের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রথম দলীয় প্রতীকে তৃণমূলের নির্বাচন হওয়ায় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি এলাকার নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের মাঝে বইছে উৎসবের আমেজ। মূলত এখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে। অনুষ্ঠিত আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা সবচেয়ে বেশি জমে উঠেছে গৌরীপুর ইউনিয়ন, দাউদকান্দি উত্তর, জিংলাতুলি, সুন্দলপুর, ইলিয়টগঞ্জ উত্তর, ভিটেশ্বর, পাঁচগাছিয়া ও গোয়লমারি। এসব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পদচারণায় এখানকার প্রত্যন্ত জনপদ সরগরম হয়ে উঠেছে। প্রার্থীরা নাওয়া-খাওয়া ভুলে গভীর রাত পর্যন্ত গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের সাথে উঠান বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন। নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনের ভোটের মাঠের দৃশ্যপট ততই বদলে যাচ্ছে, বদলে যাচ্ছে ভোটের হিসাব-নিকাশও। ভোটাররা প্রার্থীদের নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন এবং প্রার্থীদের বিগত দিনের কর্মকা- নিয়ে হিসাব কষছেন। পাশাপাশি এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা এমন শঙ্কাও প্রকাশ করছেন ভোটাররা। সবমিলে এখানে এখন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা তুঙ্গে অবস্থান করছে। গৌরীপুর ইউনিয়ন : এখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি আবুল হাসেম সরকার (নৌকা) ও বর্তমান চেয়ারমান এবং উপজেলা বিএনপির সেক্রেটারী আবুল হাসেমের (ধানের শীষ) মধ্যে লড়াই হবে। আওয়ামী লীগের গত ৭ বছরের শাসনামলে সভাপতি হিসেবে আবুল হাসেম সরকার এলাকার আর্থÑসামাজিক উন্নয়ন ও দলীয় নেতাকর্মীদের সুখেÑদুঃখে পাশে দাঁড়ায়নি বলে এমন অভিযোগ উঠেছে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে। ফলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ তার পক্ষে প্রচারণায় নামেনি। যার কারণে ভোটের হিসেবে তিনি বেকায়দায়ই আছেন। এদিকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সফল চেয়ারম্যান আবুল হাসেমের এলাকায় যেমন জনপ্রিয় তেমনি তার এলাকায় যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। গত ৫ বছরে তিনি এলাকার আর্থÑসামাজিক উন্নয়নে যুগান্তকারী সাফল্য দেখিয়েছেন। এলাকার সর্বস্তরের মানুষের সুবিধায়-অসুবিধায় আবুল হাসেম পাশে দাঁড়িয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মীসহ এলাকার নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ বিএনপির এই প্রার্থীর সাথে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন। এলাকার মানুষ আশাবাদী, সুষ্ঠু ভোট হলে বিশিষ্ট সমাজসেবি সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি আবুল হাসেম বিজয়ী হবে। তিনি প্রচার-প্রচারণায় ও ভোটে অনেক দূর এগিয়ে আছেন। সুন্দলপুর ইউনিয়ন : এখানে মোঃ মাসুদ আলম (নৌকা), আরিফ মাহামুদ (ধানের শীষ) ও আ’লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র বর্তমান চেয়ারম্যান আসলাম মিয়াজী (আনারস)। প্রচারÑপ্রচারণায় ও ভোটে নৌকা মার্কার প্রার্থী মাসুদ আলম এগিয়ে আছেন। আর বিদ্রোহী আনারস মার্কার প্রার্থী আসলাম মিয়াজীর বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান থাকাকালীন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, দখলবাজিসহ নানা কুকর্মের অভিযোগ থাকায় এলাকার মানুষ তার প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তিনি প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ভোটারদের ভয়ভীতি ও প্রতিপক্ষের প্রচারণায় হামলার অভিযোগে গত সপ্তাহে থানায় মামলা রুজু হয়েছে। এদিকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আরিফ মাহামুদ গত ৫ দিন যাবৎ হঠাৎ রাজধানীর মর্ডান হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ফলে তার কর্মী-সমর্থকরা হতাশ। গোয়ালমারি ইউনিয়ন : জসিম হাসান (নৌকা), বিদ্রোহী স্বতন্ত্র নূরে আলম ভুলু (আনারস) ও আহম্মদ হোসেন তালুকদার (ধানের শীষ)। ধানের শীষ মার্কার প্রার্থীর তেমন একটা প্রচারণা নেই বললেই চলে। নৌকা মার্কার প্রার্থী দীর্ঘদিন এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় জনসমর্থন তেমন একটা নেই। ফলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সুশীল সমাজসহ নানা পেশার মানুষ স্বতন্ত্র প্রার্থী নূরে আলম ভুলুর পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রচারণায় নেমেছে। নূরে আলমের বিজয় নিশ্চিতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি ভোটে ও প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন। জিংলাতুলি ইউনিয়ন : এখানে মনির হোসেন সরকার (নৌকা), মোস্তাক হোসেন খান (ধানের শীষ) ও আ’লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আলমগীর হোসেনের (আনারস) মধ্যে লড়াই হবে। বিএনপি প্রার্থী প্রচারণায় গাঁ-ছাড়া ভাব, ফলে প্রচারণায় ও ভোটে বিশিষ্ট সমাজসেবক নৌকার মার্কার প্রার্থী মনির হোসেন সরকার এগিয়ে রয়েছেন। নৌকার সমর্থক ও ভোটাররা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমাদের প্রার্থী মনির হোসেন বিজয়ী হবেন। কেননা এলাকায় তার যেমন গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তেমন জনপ্রিয়ও। পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন : বিশিষ্ট সমাজ সেবক বর্তমান চেয়ারম্যান জামাল চৌধুরী (নৌকা) ও সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান সরদারের (ধানের শীষ) মধ্যে লড়াই হবে। তবে শাহজাহান সরদারের এলাকায় বহু বদনাম রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষের সাথে তার কোন প্রকার যোগাযোগ ছিল না। ফলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ বর্তমান চেয়ারম্যান নৌকার মার্কার প্রার্থী জামাল চৌধুরীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তিনি ভোটে ও প্রচারণায় সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। তার সমর্থকরা আশাবাদী সুষ্ঠু ভোট হলে আমাদের প্রার্থী জামাল চৌধুর বিজয়ী হবে ইনশাআল্লাহ। ভিটেশ্বর ইউনিয়ন : এখানে নৌকা মার্কার প্রার্থী জেবুন্নেছা ও ধানের শীষের প্রার্থী নুরুল আমিন মীরের সাথে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে। ইলিয়টগঞ্জ উত্তর ইউনিয়ন : জসিম প্রধান (নৌকা) ও হুমায়ুন কবিরের সাথে (ধানের শীষ) তুমুল লড়াই হবে। তবে প্রচার-প্রচারণায় ও ভোটে জসিম প্রধান এগিয়ে আছেন। দাউদকান্দি উত্তর ইউনিয়ন : উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের সেক্রেটারী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সালাম (নৌকা) ও মো: আব্দুস সাত্তার দেওয়ানের (ধানের শীষ) সাথে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। গত ৫ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে নৌকা মার্কার প্রার্থীর বিরুদ্ধে বহু বদনামের অভিযোগ রয়েছে। আর এলাকার ক্লিন ইমেজের তরুণ ব্যক্তিত্ব আব্দুস সাত্তার দেওয়ানের বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। তার আচার-আচরণে ও ব্যবহারে ভোটাররা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ভোটাররা বলছেন, সুষ্ঠু ভোট হলে তরুণ নেতা আব্দুস সাত্তার দেওয়ান বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন