শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

দখল হয়ে গেছে সিংহভাগ জমি অস্তিত্ব হারানো গজারমারীর বুকে ফসলের আবাদ

প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এস কে সাত্তার, ঝিনাইগাতী (শেরপুর) থেকে
এককালের খরস্রোতা গজারমারী নদী এখন মৃত-ফসলি জমি। এই নদীর বিস্তীর্ণ অঞ্চল ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীটি ফসলি মাঠে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর পাহাড়ি ঢলের পানির সাথে ভারত থেকে নেমে আসা বালি এবং পলি জমে নদীটি ভরাট হয়ে গেছে। ফলে ক্রমেই বেদখল হয়ে যাচ্ছে নদীটি। গ্রাস করে নিচ্ছে প্রভাবশালী মহল। বর্তমানে প্রাচীন এ নদীটি বর্ষা মৌসুম ছাড়া অন্য সময় মৃত। এই সুযোগে এলাকার ভূমিখেকো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নদীতে ইরি-বোরো চাষাবাদ করে জমি দখল প্রতিযোগীতায় মেতে ওঠায় বেদখল হয়ে যাচ্ছে ‘গজারমারী নদী’। সরকার নদীটি পুনঃখনন বা সংস্কারের উদ্যোগ না নেয়ায় এবং কতৃপক্ষ এসব দেখেও না দেখার ভান করায় দ্রুত বেদখল হয়ে যাচ্ছে গজারমারী নদী। নদীটি ভরাট হতে হতে বর্তমানে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বর্ষা না এলে কেউ বিশ্বাসই করতে চাবে না যে এখানে এক দিন নদী ছিল। এতে ধ্বংসের সম্মুখীন হচ্ছে জীববৈচিত্রসহ জলজ প্রাকৃতিক পরিবেশ। জানা যায়, উপজেলার নিন্মাঞ্চল ধলী বিলের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া গজারমারী নদী পানির আঁধার হিসেবে পরিচিত। শুস্ক মৌসুমে বিল এলাকার অধিকাংশ কৃষি জমিতে সেচ সুবিধার মাধ্যমে বোরো আবাদ করা হয়। আর বর্ষা মৌসুমে বিলের পানিকে কেন্দ্র করে প্রজননসহ মাছের অবাধ বিচরণ ভূমি তৈরি করা হতো। অপরদিকে অপরিকল্পিতভাবে বিলের কৃষিজমির উপর বাড়িঘর, গাছ ও রাস্তা নির্মাণের ফলে দ্রুত বিলও নদী এলাকা জেগে উঠছে। আবার একশ্রেণীর ভূমিখেকো তা দখল ও করে নিচ্ছে। কেউবা জাল কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমেও বিলও নদীর দখল অব্যাহত রেখেছে বলেও জানা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কৃষি বিভাগের এক মাঠ কর্মকর্তা জানান, গজারমারী নদী ও ধলী বিলে অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। অপরিকল্পিত এবং অবৈজ্ঞানিক উপায়ে বিলের কৃষি জমি ভরাট করে বাড়িঘর, রাস্তা-বাঁধ নির্মাণ এবং গাছপালা রোপণ করে অদুর ভবিষ্যতে বিলের জলজ, জীববৈচিত্রের মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনবে। অভিজ্ঞমহলের মতে গজারমারী নদী ও ধলী বিল এই এলাকার পানির আঁধার হিসেবে পরিচিত। অতীতে সামান্য বৃষ্টিতেই সেখানে পানি জমা হতো। কিন্তু বর্তমানে পূর্বের ন্যায় আর পানিতো জমেই না, বরং এখন বর্ষা মৌসুমে বন্যায় পলি-বালি জমে বিল ও নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়াও সরকারি খাস জমি বন্দোবস্ত এবং একশ্রেণীর ভূমিখেকো জাল কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমেও বিপুল পরিমাণ জমি দখল করে নেয়ায় এক সময়ের খর¯্রােতা গজারমারী নদী ও ধলি বিলের অস্তিত্ব আজ মারাত্মক হুমকির মুখে। এছাড়া ও ঝিনাইগাতীর অন্যান্য বিল ও নদীর অবস্থাও তথৈবচ। প্রসঙ্গত এসব বিল ও নদী বর্ষা মৌসুমে মাছের জন্য ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে। বিলে মাছের ডিম পাড়ার জন্য মাইগ্রেট রোড থাকতে হয়। কিন্তু অপরিকল্পিত কার্যক্রমের জন্য বিল ও নদী সঙ্কুচিত হওয়ায় মাছের গতিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে মাছের উৎপাদন ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে এবং জীববৈচিত্র সংরক্ষণে ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন