কৃষকদের বিক্ষোভের মুখে ঝালকাঠিতে সরকারিভাবে বোরো ধান কেনা শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। খাদ্য গুদামের সামনে বুধবার সকালে কৃষকরা ধান নিয়ে এসে বিক্ষোভ মিছিল করার পরে ধান কিনতে বাধ্য হয় খাদ্য বিভাগ। কৃষকদের অভিযোগ, ধান বিক্রির জন্য খাদ্য বিভাগে যোগাযোগর করেও কোন সারা মিলছে না। তার ওপরে বাজারে ধানের দাম কম। এ অবস্থায় ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন কৃষকরা। এদিকে মঙ্গলবার একজন কৃষকের কাছ থেকে ছয়টন ধান কেনা হয়েছে, এ খবর পেয়ে শতাধিক কৃষক তাদের ধান নিয়ে খাদ্য গুদামের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক গিয়ে তাদেরকে শান্ত করে ধান ক্রয় কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
জানা যায়, সারা দেশে সরকার গত ২৫ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কৃষকদের ধান কেনার কার্যক্রম শুরু করে। এ কার্যক্রমের আওতায় ঝালকাঠি জেলায় এ বছর তালিকাভুক্ত একেকজন কৃষকের কাছ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে মোট ৩২১ মেট্রিকটন ধান কেনা হবে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৬২ মেট্রিকটন এবং নলছিটি উপজেলায় ১৫৯ মেট্রিকটন ধান কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কার্যক্রম শুরুর প্রায় এক মাস পার হতে চললেও সরকারিভাবে এ জেলার ধান কেনার কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। ঈদের পরে ধান কেনা হবে বলে খাদ্য বিভাগ ঘোষণা দেয়। এতে আরো ক্ষিপ্ত হয় কৃষকরা। খাদ্য বিভাগ ঈদের পরে ধান কেনার ঘোষণা দিয়ে মঙ্গলবার এক জন কৃষকের কাছ থেকে ছয় মেট্রিকটন ধান কিনে গুদামজাত করে। এ খবরে ছড়িয়ে পড়লে সদর উপজেলার শতাধিক কৃষক তাদের উৎপাদিত ধান নিয়ে জেলা খাদ্য গুদামের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। এ বিষয়ে ঝালকাঠি খাদ্য গুদাম কতৃপক্ষ জানান, এক কৃষকের কাছ থেকে ছয় মেট্রিকটন ধান কেনা হয়নি। ২১ মে কার্যক্রমের উদ্বোধন করার কথা থাকায় নমুনা হিসেবে এটা গুদামে রাখা হয়।
খাদ্য গুদামে ধান নিয়ে আসা বাসন্ডা ইউনিয়নের কৃষক মো. শাহ্জাহান, চৌপলা গ্রামের জয়নাল আবেদিন, তাজিনূর বেগম, নথুল্লাবাদ ইউনিয়নের শেখ নূরুল আমিনসহ আরো অনেকে অভিযোগ করে বলেন, খাদ্য গুদামের কিছু অসাধু কর্মকর্তা গত বছর নিয়ম ভঙ্গ করে একটি ইউনিয়ন থেকে ধান কেনেন। এতে অন্য কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হয়। এবার সরকার ২৫ এপ্রিল ধান কেনা কার্যক্রম শুরু করলেও আজ পর্যন্ত আমাদের ধান না কিনে গুদাম কর্মকর্তারা দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছে। তারা কমদানে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে গুদামজাত করার পায়তারা করছেন। ২১ মে ধান ক্রয়ের কার্যক্রম শুরু করার কথা থাকলেও তা না করে এক জন কৃষকের কাছ থেকে ছয় মেট্রিকটন ধান ক্রয় করে গুদামজাত করা হয়। তাই এই খবর পেয়ে আমরা আমাদের উৎপাদিত ধান নিয়ে খাদ্য গুদামে এলে উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক ওমর ফারুক বলেন, এই মুহুর্তে আমাদের পর্যাপ্ত ধানের বস্তা মজুদ না থাকায় এবং ধান ক্রয় কর্মসূচির উদ্বোধন করা যাবে না। ঈদের পরে কৃষকদের ধান নিয়ে আসতে বলা হয়।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি খাদ্য গুদামের সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা গাজী মো. মাজহারুল আনোয়ার বলেন, এক কৃষকের কাছ থেকে ছয় মেট্রিকটন রাখা ধান কেনা হয়নি। ২১ মে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করার কথা থাকায় নমুনা হিসেবে এটা গুদামে রাখা হয়।
ঝালকাঠি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম বলেন, আমাদের যথেষ্ট পরিমানে ধান কেনার বস্তা মজুদ রয়েছে। কিন্তু কৃষি অফিস থেকে ইউনিয়ন ভিত্তিক ধান উৎপাদনের তালিকা প্রেরণে দেরি করায় এ কার্যক্রম বিলম্বিত হয়েছে। তবে এ কার্যক্রম উদ্বোধনের জন্য ছয় মেট্রিকটন ধান না রাখলেও হতো। এবার ধানের উৎপাদন বেশি হওয়ায় সদর উপজেলায় ১৬২ মেট্রিকটনের স্থলে প্রায় দুই হাজার মেট্রিকটন ধান সংগ্রহের বরাদ্দ দেওয়া উচিত ছিল। বরাদ্দের পরিমান কম হওয়ায় কৃষকদের মাঝে ধান বিক্রয় করতে না পারার হতাশার কারনে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে যারা ধান নিয়ে এসেছে আমরা চেষ্টা করবো সবার ধানের আদ্রতা পরীক্ষা করে নিয়ে নেয়ার।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন, জেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্র কিছুটা কম হয়েছে। প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকেই ধান ক্রয় করা হবে। ব্যবসায়ী কিংবা অন্য কোন মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের কোন অভিযোগ এলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন