জ্যৈষ্ঠের শুরুতেই রসালো ফলের মৌ মৌ ঘ্রাণে মাতোয়ারা মীরসরাইয়ের হাট-বাজারগুলো। আম, লিচু, কাঁঠাল, আনারস, গোলাপ জামসহ ফলের সমারহে আকৃষ্ট হয়ে উঠছে ক্রেতারা। বিভিন্ন হাটবাজারে এখন মিষ্টি ফলের সুবাস। এরই মধ্যে মীরসরাইয়ের করেরহাট, বারইয়ারহাট, জোরারগঞ্জ, মিঠাছরা, মীরসরাই, আবুতোরাব, বড়তাকিয়া, নিজামপুর, বড়দারোগারহাটসহ বিভিন্ন বাজারে আসতে শুরু করেছে মধুমাসের নানা জাতের ফল। মীরসরাইয়ের মৌসুমি ফলের জন্য বিখ্যাত করেরহাট বাজার। এখানে প্রায় মৌসুমি ভিত্তিক সব ফল পাওয়া যায়। করেরহাট বাজারের পূর্বের এলাকা কয়লা, হেঁয়াকো, ভাঙ্গাটাওয়ার, রামগড়, ফটিকছড়ি, খাগড়াছড়ি ইত্যাদি স্থান থেকে প্রতি দিন বিশেষ করে সপ্তাহের দুই দিন রবি ও বুধবার প্রচুর পরিমান মৌসুমী ফল আসে। ফলগুলোর মধ্যে কাঁঠাল, আম, আনারস, লিচু ইত্যাদি উলেখযোগ্য। এছাড়াও ঋতুভিত্তিক সব ফল এখানে পাওয়া যায়। খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখান থেকে মৌসুমী ফল ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করে। নিজস্ব চাহিদা পূরণ করে এসব ফল ফেনী, চট্টগ্রাম, ঢাকা ইত্যাদি অঞ্চলে প্রেরন করা হয়। এতে করে বিক্রেতারা তাদের ন্যায্য দাম পাচ্ছে এবং ব্যবসায়িরাও স্বাবলম্বী হচ্ছে।
করেরহাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থান থেকে ফল চাষীরা মৌসুমী ফল আম, কাঁঠাল, লিচু ও আনারসের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। মীরসরাই উপজেলা, ফেনী, চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে বিভিন্ন আড়তদার, ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা মৌসুমী ফল কিনতে এসেছেন। এখানে দেশি আম প্রতিকেজি ৬০-৭০ টাকা, আনারসে জোড়া ১০০-১২০ টাকা, লিচু প্রতি শত ১৮০-২০০টাকা, আর ছোট সাইজের কাঁঠালের মূল্য ৫০-৬০ টাকা, মাঝারি সাইজের মূল্য ১০০-১২০ টাকা এবং বড় সাইজের মূল্য ১৫০-২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
করেরহাটের কয়েকজন ফল চাষীরা জানান, এই মধুমাসে মৌসুমী রসালো ফল বিক্রি করে আমাদের জীবন জীবিকা চলে। তবে হিমাগার না থাকায় বেশি দিন রাখা যায়না এসব মৌসুমী ফল। ফলে অল্প সময়ে স্বল্প মূল্যে বিক্রয়ের কারণে লাভটাও তেমন বেশি হয় না বলে জানান তারা। তবে গরমে ফলের চাহিদা বেশি হওয়ায় দুর-দূরান্ত থেকে আগত ক্রেতাদের কাছে এসব ভাল মানের ফলগুলো ভাল দামে বিক্রয় করা হয় বলে জানান কয়েকজন স্থানীয় চাষী।
করেরহাট বাজারে মৌসুমী ফল কিনতে আসা ক্রেতা কামরুল ও সোহেল জানান, রামগড় ও খাগড়াছড়ি থেকে আসা পাহাড়ে চাষ হওয়া কাঁঠাল, আম ও লিচু এখানে খুবই জনপ্রিয়। তবে কিছু আম ও কাঁঠাল পরিপক্ব হওয়ার আগেই কৃত্রিমভাবে ইথিলিন দিয়ে পাকিয়ে এবং ফরমালিন ব্যবহার করে বাজারে বিক্রি করছেন অধিক মুনাফা লোভী কিছু খামারি। এসব ফল খেলে স্বাস্থ্যের খুব ক্ষতি হয়। তাই আমরা দেখে শুনে ফল কেনার চেষ্টা করছি।
এই ফলের হাটের বিষয়ে করেরহাট ইউনিয়নের স্থানীয় চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, আগামীতে ফলের হাটটি আরো সুসজ্বিত করে তোলার জন্য আমার বিশেষ উদ্যোগ রয়েছে। আর তা খুব শীঘ্রই বলে জানান তিনি। তবে তিনি গেল বছর ও একই কথা বললে এই পর্যন্ত কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি।
মীরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হওয়ায় মীরসরাইয়ের প্রতিটি বাজারের প্রায় সব মৌসুমি ফলই ফরমালিন তথা বিষমুক্ত। তবে বর্তমান সময়ে বানিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হওয়ায় ফল দ্রুত উৎপাদন ও সংরক্ষণে স্থানীয় চাষীরাও কীটনাশক, রাসায়নিক সার ও ফরমালিন ব্যবহারের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন