রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মেঘনায় উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত

মোক্তার হোসেন মোল্লা, সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

ঘুম ভেঙেছে বিআইডবিøউটিএ’র। মেঘনা নদীর রক্ষায় অভিযান চলছে। প্রতিদিনই নদীর জায়গা উদ্ধার করতে গিয়ে বড় বড় স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। উচ্ছেদ অভিযানে প্রভাবশালীরা বাধা দেয়ার চেষ্টা করেও সফল হতে পারছে না। মেঘনা নদী দখলমুক্ত করার অভিযানে স্থানীয় বাসিন্দারা বেজায় খুশি। তাদের দাবি, নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দেয়া হোক।
গত ১৯ মে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মেঘনা নদীর তীরবর্তী ‘দখল’ উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে বিআইডবিøওটিএ। কোথাও স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে আবার কোথাও দখলকারীদের দু’একদিনের মধ্যে নিজেদের স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। দেশের প্রভাবশালী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের জমির পাশের মেঘনা নদী, নদীর তীরবর্তী খাস ভ‚মি, সরকারি খাল এবং ফোরশোর ল্যান্ডভুক্ত ভ‚মিতে বালু ভরাট করে প্রাচীর দিয়ে দখল করায় স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ ছিল দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু দখলদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। দৈনিক ইনকিলাবে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নদী দখলমুক্ত করার অভিযানে স্থানীয় মানুষ বেজায় খুশি।
বিআইডবিøওটিএ জানায়, মেঘনার পাড় দখলমুক্ত করতে অভিযান অব্যাহত থাকবে। মেঘনা নদী দখল করে বিভিন্ন কোম্পানি বহুতল ভবন নির্মাণসহ বালু দিয়ে ভরাট করে রাখে। এ নিয়ে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত সোমবার থেকে মেঘনা নদী দখল মুক্ত করার অভিযান শুরু করে ছয়দিন অভিযান চলবে বলে জানায় বিআইডবিøওটিএ। গতকাল বৃহস্পতিবার অভিযানের চতুর্থ দিনে অভিযান চালানো হয় উপজেলার হাড়িয়া এলাকার মেঘনা নদীর তীরবর্তী আমান সিমেন্টের দখনকৃত এলাকায়। আমান সিমেন্টের নদী দখল নিয়ে গত ২ মার্চ দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় ‘আমানের পেটে ১৫শ’ বিঘা জমি’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বিআইডবিøউটিএ এর উচ্ছেদ অভিযানের চতুর্থ দিনে সোনারগাঁওয়ের বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের হাড়িয়া এলাকায় মেঘনা নদী ভরাট করে গড়ে তোলা আমান গ্রæপের নির্মাণাধীন ফুড এন্ড বেভারেজ কোম্পানি এবং আমান সিমেন্টের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বিআইডবিøউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ।
বিআইডবিøওটিএ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে এবং নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের যুগ্ম-পরিচালক গুলজার আলীর তত্ত¡াবধানে এ অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
একই সাথে নদী ভরাটের কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমান বালু নিলামে তুলে ৯৬ লাখ ২৬ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। নদী ভরাট ও দখলের অভিযোগে আমান গ্রæপের শীর্ষ দুই কর্মকর্তা ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নাদিরুজ্জামান ও নির্বাহী পরিচালক (কর্পোরেট এ্যাফেয়ার্স) রবিউল হককে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
উচ্ছেদ অভিযানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিআইডবিøউটিএর নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের উপ-পরিচালক মো. শহীদুল্লাহসহ টেকনিক্যাল বিভগের কর্মকর্তারা। নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ন-পরিচালক গুলজার আলী জানান, নদী দপ্তরের অনুমোদন থাকলেও এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি সরকারি আদেশ ভঙ করে নদীর জায়গা দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণসহ নদীর বিরাট অংশ ভরাট করে ফেলেছে।
বিআইডবিøউটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নদীর নির্ধারিত সীমানায় যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে নদী দখল করেছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মেঘনা নদীতে আরো দুই দিন অভিযান চালিয়ে ছয়দিন ব্যাপী এই উচ্ছেদ অভিযান সমাপ্ত করা হবে।
জানা গেছে, সোনারগাঁও উপজেলার হাড়িয়া চক্রবর্তীপাড়া, হাড়িয়া গোবিন্দী ও সোনাময়ী, বড় তীলক এবং ছোট দেওভোগ এলাকায় মেঘনা নদী অবৈধভাবে দখল করে ভরাট, সরকারি হালট ও খাল এবং কৃষকের কৃষি জমি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ উঠে আমান গ্রæপের বিরুদ্ধে। এছাড়াও মেঘনা নদীর শাখা ঐতিহাসিক রান্দীর খালের দক্ষিণ দিকের প্রায় ২ কিলোমিটার বালু দিয়ে ভরাট করে দখল করে আমান গ্রæপ। উপজেলার সোনাময়ী এলাকায় আমান গ্রæপের বিশাল সিমেন্ট কারখানা নির্মাণ করা হয় মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে।
এমনকি, নদীর প্রায় সাত শত ফুট ভিতরে বাঁশের বেড়া দিয়ে বালু ভরাট করে এবং সিটি পাইলিং করে স্থায়ী ভাবে নদী দখলের চেষ্টা করে আমান গ্রæপ। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় চরম পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
আমান গ্রæপ প্রথমদিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি কিনে সেখানে সাইনবোর্ড লাগায়। এরপর নির্বিচারে নদীর জমি দখল করে সেখানে বালু ফেলে। একই সঙ্গে অনেকের ধানিজমি দখল করে নেয় তারা।
তৎকালীন সময়ে সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমি এখনই লোক পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে দিচ্ছি। কাউকে নদী দখল করতে দেওয়া হবে না। দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিবো। তবে, দুই মাস অতিবাহিত হলেও কার্যত কোন ব্যবস্থাই নেয়নি।
অবশেষে দৈনিক ইনকিলাবে সংবাদ প্রকাশের পর ঘুম ভেঙেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিআইডবিøউটিএ কর্তৃপক্ষের। বিআইডবিøওটিএ এর অভিযানে বেজায় খুশি সোনারগাঁবাসী। পুনরায় যাতে আমান সিমেন্ট নদী দখল করতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিআইডবিøওটিএ ও স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন