দেশী পণ্য কিনে হও ধন্য, এটা শুধু মুখেই বলা যায়। বাস্তবে তা প্রযোজ্য হয় না। একইভাবে প্রধানমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী রোজায় কোন পণ্যের দাম বাড়বে না বললেও সেটা কানে তোলেন না ব্যবসায়ীরা। সিরাজগঞ্জে নিত্যপণ্যের বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যেই আগুন। রোজার শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় প্রায় সব ভোগ্যপণ্যই বিক্রি হচ্ছে অতিরিক্ত দামে। বিভিন্ন বাজার ঘুড়ে এবং ক্রেতা-বিক্রেতার সাথে কথা বলে এই তথ্য জানা যায়।
বিগত কয়েক বছরের চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রোজার আগেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আকস্মিকভাবে বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। রমজান মাসে সেই বাড়তি দামেই পণ্য বিক্রি করেন তারা। আর গণমাধ্যমের কাছে ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, রমজানে কোনো পণ্যের দাম বাড়াননি।
গত দুই তিন বছর ধরে রোজা শুরুর বেশ আগে থেকেই কৌশলে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন। সেই সঙ্গে বাড়িয়ে দেন পণ্য মজুদের পরিমাণও। ফলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বাজার তদারকিতে গেলেও, মেলে না তাৎক্ষণিক মূল্য বৃদ্ধির প্রমাণ। এতে করে, আগে যেখানে শুধু রমজান মাসে বেশি দামে কিনতে হতো, এখন এক-দেড় মাস আগে থেকেই গুনতে হচ্ছে বেশি মূল্য। এ বছরও সিরাজগঞ্জ জেলায় তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। রোজা শুরু হতে না হতেই বেড়ে গেছে অধিকাংশ পণ্যের দাম।
সিরাজগঞ্জ বাজার ঘুরে জানা যায়, গত এক মাসে দেশি পেঁয়াজের দাম ১০ শতাংশ বাড়লেও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম অপরিবর্তিত। সবশেষ প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২২-৩০ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২২-২৫ টাকায়। এক মাস আগে দেশি পেঁয়াজ ২২-২৫ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল ২২-২৫ টাকা। এছাড়া বর্তমানে দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৫০-৭০ টাকা ও আমদানি করা রসুন ১০০-১২০ টাকা। আর আদা মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১৬০ টাকায়।
সিরাজগঞ্জ শহরের ফজলুল হক রোডস্থ পাইকারী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি পণ্যের দামই গত সপ্তাহের চেয়ে বেড়েছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই তারা বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। আদা ও রসুনের দাম কেজি প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে।
সবজির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মাছ, গোশত ও ডিমের দামও। গত বছর এ সময়ে ব্রয়লার মুরগির কেজি প্রতি দাম ১৩০-১৪০ টাকার মধ্যে থাকলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৬৫ টাকায়। এক বছর আগের তুলনায় ব্রয়লার মুরগির দাম এখন ২০ শতাংশ বেশি। কক মুরগির কেজি এখন ২৮০-২৯০ টাকা, যা স্বাভাবিক দামের চেয়ে ৫০ টাকার মতো বাড়তি। দেশি মুরগির কেজি ৪৫০-৪৬০ টাকা, যা সাধারণত ৪০০ টাকার কাছাকাছি থাকে। আর গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা।
সস্তা পাঙ্গাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা দরে, এক মাস আগেও ছিল ১২০ টাকা কেজি। গত দুই মাস ধরে ক্রমাগত বেড়েই চলেছে ডিমের দাম। প্রতি ডজন ফার্মের ডিম যেখানে ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা দরে।
এভাবে পণ্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া ছুটে চললেও কারো যেন কিছুই করার নেই। ভূক্তভোগীদের এ প্রশ্নের জবাব দেবে কে?
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন