শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

হেভিওয়েটদের সাথে পাল্লা দিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন এক ঝাঁক নতুন মুখ

গ্রামীণ জনপদে ইউপি নির্বাচনের হাওয়া

প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এম.হাসানুল হক উজ্জ্বল, বিয়ানীবাজার (সিলেট) থেকে

বিয়ানীবাজার উপজেলার ১০ ইউনিয়নে নির্বাচনী প্রচারণা জমে উঠেছে। প্রার্থী ও সমর্থকদের প্রচার-প্রচারণা, পথসভা, উঠান বৈঠক ও গণসংযোগ ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাচ্ছেন। সমর্থকরাও নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে সর্বত্র চষে বেড়াচ্ছেন। ভোটাররাও অতিতের হিসাব- নিকাশ কষতে শুরু করছেন। প্রবাসী অধ্যুষিত বিয়ানীবাজার উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে আগামী ৪ জুন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে এখানে প্রবাসী প্রার্থীদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। তবে হেভিওয়েট প্রার্থীদের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন একঝাঁক নতুন মুখ। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন আর ক’জন প্রবাসী প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখানের নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ হয়েছে ভিন্ন মাত্রা। এদিকে নির্বাচনের দিন বিয়ানীবাজারের ১০টি ইউনিয়নে ৬ স্থরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ প্রশাসন। এছাড়াও র‌্যাব, বিজিবি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আরো কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে এখানে। দলীয় প্রতীকে এই প্রথম নির্বাচন হওয়ায় এখানের হিসাব-নিকাশ অতিতের তুলনায় অনেকটা পাল্টো গেছে। প্রার্থী ও সমর্থকরা এখন যার যার ইমেজ রক্ষায় মাঠে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বড় দুই দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকায় ভোটার ও সমর্থকদের মধ্যে প্রচারণা নিয়ে দেখা দিয়েছে দ্বিমুখী ভাব। কোন কোন সমর্থক মূল প্রার্থীর সাথে কাজ করলেও কেউ কেউ বিদ্রোহী প্রার্থীর সাথে কাজ করছেন। এখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র প্রথম সারির অনেক নেতা বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও দলের নীতি নির্ধারকরা বলছেন, তালিকা তৈরি করে তাদের বহিষ্কার করা হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়া এবং বড় দুই দলের প্রকাশ্যে বিরোধ থাকায় দলগুলোর মুল প্রার্থীরা তেমন সুবিধা করতে পারবেন না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র অনেক শীর্ষ নেতা এবারের নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ করে অনেকটা হতাশ। তবে তারা নিজ নিজ দলের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। সরেজমিনে বিয়ানীবাজারের ইউনিয়নগুলোতে গেলে দেখা যায়, দলীয় প্রার্থীদের জয়লাভ নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। প্রার্থীরাও বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজের পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। উপজেলার পাড়া মহল্লা, হোটেল-রেস্তোরাঁ, দোকানপাট, অফিস-আদালত, বাড়ি বাড়ি সর্বত্রই চলছে ইউপি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা। ভোটারদের সাথে আলোচনা করে জানা গেছে, অনেক ভোটারই পরিবর্তনের পক্ষে রয়েছেন। তবে অনেক ভোটার জানিয়েছেন, বিপদে-আপদে যাকে কাছে পেয়েছেন তারা তাদের পুনরায় বেছে নিবেন। তবে এবারের নির্বাচনে পুরাতনের তুলনায় নতুন মুখ বেরিয়ে আসবে বলে মত দিয়েছেন সাধারণ ভোটাররা। ১০ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪৮ জন প্রার্থীর মধ্যে ১নং আলী নগর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপির দলীয় প্রার্থী মামুনুর রশীদ মামুন (ধানের শীষ) ও আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নজরুল ইসলাম জায়গীরদার (নৌকা) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে মামুনুর রশীদ মামুনের পক্ষে ভোটারদের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ২নং চারখাই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মাহমদ আলী (নৌকা), জামায়াত সমর্থিত (স্বতন্ত্র) প্রার্থী আমির হোসেন চৌধুরী (চশমা), হোসেন মুরাদ চৌধুরী (আনারস)। এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহমদ আলী ও জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী আমির হোসেনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এখানে মাহমদ আলীর অবস্থা অনেকটা ভালো বলে ভোটারদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে। ৩নং দুবাগ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুস সালাম (নৌকা), বিএনপির দলীয় প্রার্থী নুরুল কিবরিয়া (ধানের শীষ), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নাজিম উদ্দিন (আনারস), জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থী মাওলানা নুরুল ইসলাম (খেজুর গাছ)। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুস সালাম ও বিদ্রোহী প্রার্থী নাজিম উদ্দিনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এখানে আব্দুস সালামের অবস্থা অনেকটা ভালো বলে ভোটারদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে। ৪নং শেওলা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী জহুর উদ্দিন (নৌকা), বিএনপির দলীয় প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আকতার খান জাহেদ (ধানের শীষ), জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থী আব্দুল হামিদ (খেজুর গাছ), শাকিল হোসেন (আনারস), জাসদের প্রার্থী আহমদ আব্দুল হাই (মশাল)। এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জহুর উদ্দিন ও বিএনপি প্রার্থী আকতার হোসেন খান জাহেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। মাঠ পর্যায়ে জহুর উদ্দিনের অবস্থা অনেকটা ভালো বলে ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। ৫নং কুড়ার বাজার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হাজী মাহমদ আলী (নৌকা), বিএনপির দলীয় প্রার্থী আবু তাহের (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টি প্রার্থী আলকাছ আলী (লাঙ্গল), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী তুতিউর রহমান (আনারস), আসলাম আহমদ (চশমা), আজিজুল ইসলাম (মোটরসাইকেল)। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আলকাছ আলী ও বিএনপির প্রার্থী আবু তাহেরের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। মাঠ পর্যায়ে আবু তাহেরের অবস্থান অনেকটা ভালো বলে ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। ৭নং মাথিউরা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী শিহাব উদ্দিন (নৌকা), বিএনপির দলীয় প্রার্থী জাকির হোসেন সুমন (ধানের শীষ), বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী কছির আলী আব্দুর রব (আনারস), আব্দুল ফাত্তাহ বকসী (ঘোড়া), আমিনুল এহসান সাহেদ (চশমা)। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সিহাব উদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কছির আলী আব্দুর রব ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিমুল এহসান সাহেদের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে। এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সিহাব উদ্দিনের পক্ষে ভোটারদের সমর্থন অনেকটা বেশি রয়েছে বলে জানা গেছে। ৮নং তিলপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী এমাদ উদ্দিন (নৌকা), বিএনপির দলীয় প্রার্থী মো. আব্দুস ছাত্তার (ধানের শীষ), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. ইসলাম উদ্দিন (ঘোড়া), আব্দুল্লাহ সুফিয়ান (মোটরসাইকেল), মো. আজিম উদ্দিন (অটোরিক্সা), স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুবুর রহমান (চশমা), হাফিজ আব্দুল বাছিত জবলু (আনারস)। বর্তমান চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইসলাম উদ্দিনের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তবে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী আজিম উদ্দিনের পক্ষেও ভোটারদের অনেকটা সমর্থন রয়েছে। ৯নং মোল্লাপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম (নৌকা), বিএনপির দলীয় প্রার্থী এম এ মতলিব (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টি’র দলীয় প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন (লাঙ্গল), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এম এ কাদির (ঘোড়া), বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল মান্নান (আনারস), জাকারিয়া আহমদ (মোটরসাইকেল)। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম, বিএনপি প্রার্থী আব্দুল মতলিবের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর আব্দুল মন্নানের পক্ষে ভোট অনেকটা বাড়ছে। ১০নং মুড়িয়া ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ও জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল খায়ের (আনারস) আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী সামছুদ্দিন মাখন (নৌকা) এবং বিএনপির দলীয় মনোনীত প্রার্থী ছাদ উদ্দিন সোনা মিয়া (ধানের শীষ), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ওহিদুর রেজা মাসুম (ঘোড়া), আব্দুল হাছিব (চশমা)। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সামছ উদ্দিন মাখন ও বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল খায়েরের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ভোটারদের হিসাব মতে, আবুল খায়েরের পাল্লা অনেকটা ভারি। ১১নং লাউতা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী এম এ জলিল (নৌকা), বিএনপির দলীয় মনোনীত প্রার্থী আব্দুল হক আক্তার (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টি প্রার্থী আজিজুল ইসলাম লুকু (লাঙ্গল), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গৌছ উদ্দিন (আনারস), জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন (ঘোড়া)। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল জলিল ও জামায়াতের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তবে বিদ্রোহী প্রার্থী গৌছ উদ্দিনের পক্ষেও ভোটারদের মত রয়েছে। সব মিলিয়ে আলীনগর ইউনিয়নে বিএনপির দলীয় প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ মামুন, চারখাই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মাহমদ আলী, দুবাগ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম, শেওলা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী জহুর উদ্দিন, কুড়ারবাজার ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী আবু তাহের, মাথিউরা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান শিহাব উদ্দিন, তিলপারা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুবুর রহমান, মোল্লাপুর ইউনিয়নে বিএনপির দলীয় প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতলিব, ১০নং মুড়িয়া ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী আবুল খায়ের, ১১নং লাউতা ইউনিয়নে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন এগিয়ে রয়েছেন। এদিকে বিয়ানীবাজার উপজেলা বির্নবাহী কর্মকর্তা মুহ. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, নির্বাচনে বিয়ানীবাজার উপজেলা ও থানা প্রশাসন ৯৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৬৯ কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসাবে চিহ্নিত করেছে। চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীদের অবস্থান এবং কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারসহ ভোট প্রদানে নানা রকম অনিয়ম হওয়ার আশঙ্কা থেকে ৬৯টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ জুবের আহমদ বলেন, আমরা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও কেন্দ্রগুলোর দিকে নজর রাখছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন