মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা
সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে উপজেলার বলেশ্বর নদে বাগদা ও গলদা চিংড়ি মাছের রেণু পোনা নিধনের মহোৎসব চলছে। তুষখালী থেকে খেতাছিড়া পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলো মিটার বলেশ্বর নদে অবৈধভাবে হাজার হাজার সুক্ষ্ম ফাঁসের নেট বেন্দি জাল দিয়ে রেণু পোনা নিধনের মহাযজ্ঞ চলছে। প্রশাসন দায়সারাভাবে বছরে ২/৩ বার অভিযান চালিয়ে কিছু জাল পুড়িয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করে। অভিযানের পর পরই জেলেরা পূর্ণোদ্যমে নির্বিঘেœ রেণু পোনা নিধন শুরু করে। চিংড়ির রেণুর সাথে অন্যান্য মাছের রেণু পোনা নিধনে বিরুপ প্রভাব পড়ছে সামুদ্রিক বিশাল মৎস্য ভা-ারে। জানা যায়, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে নদীতে বাগদা ও গলদা চিংড়ি মাছের ছাড়া ডিম থেকে রেণু পোনার সৃষ্টি হয়। এসময়ে অসাধু জেলেরা সুক্ষ্ম ফাঁসের নেট বেন্দি জাল দিয়ে রেণু ধরে পাইকারদের নিকট বিক্রি করে। পাইকাররা জেলেদের নিকট থেকে ক্রয় করে বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষিরা, যশোর ও কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মাছের ঘেরে ভাল দামে সরবরাহ করে। সরেজমিনে বলেশ্বরের বুকে জেগে উঠা মাঝর চরে গিয়ে দেখা গেছে চরের প্রায় ২ শত জেলে পরিবারের বৃদ্ধ থেকে শুরু করে শিশু পর্যন্ত সব বয়সের নারী ও পুরুষ রেণু পোনা নিধন যজ্ঞে ব্যস্ত সময় পার করছে। জোয়ারের সময় চরের চতুর্দিকে অসংখ্য (সুক্ষ্ম ফাঁসের) নেট বেন্দি জাল ফেলে ও হাতে টানা জাল দিয়ে জেলেরা রেণু পোনা ধরে জাল তীরে নিয়ে আসে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা (স্ত্রী ও সন্তানরা) দীর্ঘ সময় নিয়ে ঝিনুক ও চামচ দিয়ে বাগদা ও গলদা চিংড়ির রেণু পোনা অন্যান্য মাছের রেণু পোনা থেকে আলাদা করে। এসময়ে তপস্বি, চাপিলা, কাচকি ও পোমাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের অসংখ্য রেণু পোনা মারা যায়। এভাবে রেণু পোনা নিধনের ফলে সামুদ্রিক বিশাল মৎস্য ভা-ারে বিরুপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। মাঝের চরের জেলে মো. হানিফ ফকির (৫৫) জানান, পাইকারদের নিকট থেকে দাদন নিয়ে বাগদা ও গলদার রেণু পোনা ধরে পাইকারদের নিকট এক একটি রেণু পোনা দেড় থেকে ২ টাকা দামে বিক্রি করে সংসার চালান। রেণু পোনা আলাদা করার কাজে ব্যস্ত জেলে আবুল কালাম তালুকদারের স্ত্রী হাজেরা বেগম (৩০) জানান, সারাদিনে ৬ শত থেকে ১ হাজার রেণু পোনা সংগ্রহ করেন। আবার কোন কোন দিন একটিও রেণু পোনা ধরা পরে না বলে তিনি জানান। সরকারি নির্দেশ অমান্য করে কেন তারা রেণু পোনা ধরেন জানতে চাইলে জেলেরা জানান, বছরের এই ২ মাসে নদে বড় মাছ পাওয়া যায় না। তাই তারা জীবিকার তাগিদে রেণু পোনা নিধনে বাধ্য হন। এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ইকবাল আহমদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রেণু পোনা নিধনের কথা স্বীকার করে জানান, জনবলের অভাবে তারা নিয়মিত অভিযান চালাতে পারেন না। অবৈধভাব রেণু পোনা নিধন বন্ধে নৌ-পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের তৎপরতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন