পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে পাকুন্দিয়া উপজেলায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। নৌকা, ধানের শীষ ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা (স্বতন্ত্র) মাঠ দখলের লড়াইয়ে কোমর বেঁধে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে। এতে সংঘাত-সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে ভোটাররা। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে নির্বাচন শেষ ধাপে ৪ জুন অনুষ্ঠিত হবে। গত ১৯ মে মনোনয়ন প্রত্যাহার শেষে এখন চূড়ান্তভাবে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা ৪১জন। গত শুক্রবার প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে চলছে মাঠ দখলের লড়াই। আওয়ামী লীগে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকায় ক্রমেই ভোটার ও সমর্থকদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে। এদিকে উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়নে গত শনিবার রাতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ক্যাম্পে থাকা টিভি ও চেয়ার টেবিলসহ ক্যাম্পটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রতিপক্ষ বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. কামাল উদ্দিনের লোকজন। এসময় তারা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ৪ জনকে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে রাতেই নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আঃ মান্নান বাদী হয়ে পাকুন্দিয়া থানায় বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. কামাল উদ্দিনসহ ১৫জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৮০/৯০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলা সূত্রে জানা যায়, চরফরাদী ইউনিয়নের আলীশাহ বাজারে আ.লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আঃ মান্নানের নির্বাচনী ক্যাম্পে কয়েকজন কর্মী সমর্থক বসে টিভি দেখছিল। এসময় রাত ৯টার দিকে প্রতিপক্ষ কামাল উদ্দিনের কিছু লোক রামদা, লোহার রড, হকিস্টিক ও লাঠি সোটা নিয়ে ওই ক্যাম্পে অতর্কিত হামলা করে। এসময় ক্যাম্পে থাকা টিভি, চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে প্রায় ২ লক্ষ টাকার ক্ষতি করে। হামলাকারীদের এলোপাতাড়ি আঘাতে গুরুতর আহত হয় গান্ধারচর গ্রামের মোক্তার হোসেন ও মো. আল আমিন, ঝাউগারচর গ্রামের মো. সুজন মিয়া এবং চরফরাদী গ্রামের মো. উজ্জল মিয়া। তাদের ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন দৌড়ে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে তাদের উদ্ধার করে পাকুন্দিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ ব্যাপারে বিএনপির মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মো. কামাল উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমার কর্মীরা ওই ক্যাম্পে হামলা করেনি। ওরা নিজেরাই তাদের ক্যাম্প ভাঙচুর করে আমার কর্মী-সমর্থকদের হয়রানি করার জন্য এ মামলা দায়ের করেছে। অন্যদিকে একই রাতে সুখিয়া ইউনিয়নের হর্ষী বাজারে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আঃ হামিদ টিটুর নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করেছে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী (আনারস) আজিজুল হক তোতার কর্মী-সমর্থকরা। আনারসের সমর্থকরা এই হামলা করেছে বলে টিটু অভিযোগ করে বলেন, পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার জন্য তারা আমার নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা চালিয়েছে। গত শুক্রবার রাতে উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের সদর বাজারে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. রফিকুল হক টিটুর নৌকার গেইট আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বত্তরা। এসময় পাশে থাকা নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্পটিও ভাঙচুর করা হয়। এ ব্যাপারে টিটু বাদী হয়ে পাকুন্দিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে মামলা দায়ের করেছেন। উপজেলার জাংগালিয়া ইউনিয়নে আ.লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সরকার শামীম আহম্মেদ অভিযোগ করেছেন, প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুছ ছাত্তার (আনারস) ও তার কর্মীরা তাকে প্রচারণায় বাধা দিচ্ছেন। নানাভাবে ভোটারদের হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে মর্মে অভিযোগ করেন তিনি। একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে চন্ডিপাশা ইউনিয়নের সরকার দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. মঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ করা হয়েছে প্রতিপক্ষকে ভোটের মাঠে কোনঠাসা করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন ওই প্রার্থী। তিনি নিজেই নানাভাবে ভোটারদের হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। এ ব্যাপারে পাকুন্দিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ হাসান আল মামুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন