শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

রাজবাড়ীতে মিলছে না চিকিৎসাসেবা

উদয়পুর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র পরিত্যক্ত!

রাজবাড়ী থেকে মো. নজরুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

অবহেলা-অযত্মে ও পরিত্যক্ত অবস্থায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের উদয়পুর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মিলছে না চিকিৎসা সেবা। এতে করে এলাকার গর্ভবতি মা ও শিশুসহ কয়েক হাজার পরিবার স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে। 

এলাকাবাসীর দাবি, দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক এক থেকে দুই ঘণ্টার বেশি সময় থাকেন না। আবার কোন কোন সপ্তাহ বা মাসে একেবারেই আসেনই না। গ্রামের প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা নিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন গর্ভবতী মায়েরা।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহের বুধবার কেন্দ্রটিতে ডাক্তার বসা কথা থাকলেও সকাল ১০টা থেকে প্রায় সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মেলেটি ডাক্তারের দেখা। কেন্দ্রের মুল ফটকের গেটসহ কেন্দ্রের ডাক্তার বসার ভবনের মূল দরজায় ঝুলছে তালা। ভেতরের ঢুকলেই চোখে পড়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান ভবনের চারপাশেই ছনের ক্ষেত। চারপাশে কয়েকটি রুমে পালন করা হচ্ছে ছাগল। কেন্দ্রের অফিস সহায়ক কমেলা বেগমের খোঁজ করতে গেলে কথা হয় তার মেয়ে লিমা সাথে। কেন্দ্রের নোংরা পরিবেশের বিষয় জানতে চাইলে, প্রতিবেদকের সাথে রেগে বলেন- যা জানার ডাক্তার মালি মন্ডলের সাথে কথা বলেন। তার স্বামীও কিন্তু সাংবাদিক।
চিকিৎসা নিতে আসা ইউনিয়নের খালিসা সোনাপুর গ্রামের রইচউদ্দিন শেখের স্ত্রী গর্ভবতি সোহানা বেগম (২৫) জানান, স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী মজনু ডাক্তার আমার এই কেন্দ্রে আসতে বলে। এখানে নাকি মহিলা ডাক্তার বসে। আসতে অনেক কষ্ট হয়েছে ভাই। কিন্তু এসে তো বন্ধ দেখছি। গেটটাও খুলে রাখেনি, ভেতরে ঢুকতে অনেক কষ্ট হয়েছে।
কলেজ শিক্ষার্থী নাসরিন আক্তারসহ একাধিক স্কুল ছাত্রী জানান, উদয়পুর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রেটি আমাদের কলেজ ও স্কুলের পাশেই। বিভিন্ন সময় আমাদের সমস্যার কারণে আসলে ডাক্তার খুজে পাই নাই। স্কুল ও কলেজে যাওয়া আসার সময় কোনদিনও কেন্দ্রের গেট খোলা পায়নি। দূর থেকে কেউ দেখলে ভুতের বাড়ি মনে করবে।
স্থানীয় ফারুক হোসেন মিলন, শফিকুল ইসলাম জোয়াদ্দার, নিজাম শিকদার, সালাম শেখ, মিন্টু মিয়াসহ এলাকাধি ব্যক্তি জানান, আমার বাজারে ব্যবস্থা করি। কোনদিনও দেখলাম না এটা খোলা রয়েছে। কবে ডাক্তার আসে-আর কবে আসেনা কেউ দেখে না। অফিস সহায়করা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভেতরে থাকলেও কোনদিন পরিষ্কার করেন। নোংরা পরিবেশ দেখে দূর থেকে আসা রোগীরা পরিত্যক্ত ভেবে চলে যায়।
উদয়পুর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. মানি মন্ডল মোবাইল ফোনে জানান, আজ আমার উদয়পুর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে থাকার কথা থাকলেও উর্দ্ধতণ কর্মকর্তাদের নির্দেশে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে অবস্থান করতে হয়। কর্মস্থলের ব্যাপারে তথ্য দিতে অস্বীকার করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, আপনি আমার উদয়পুর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়েছেন, আমাকে কী আগে থেকে জানিয়েছেন যে আপনি যাবেন ?
রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এ.এ হান্নান জানান, উদয়পুর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি নেদারল্যান্ড এর প্রজেক্ট মাত্র। ওই কেন্দ্রে সরকারি কোন বরাদ্দ নেই এবং সরকারি কোন ডাক্তার নেই।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এড. ইমদাদুল হক বিশ্বাস দু:খ প্রকাশ করে মোবাইলে জানান, উদয়পুর বাজারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি পরিত্যক্ত বললেই চলে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ৭ জন ডাক্তার ডেপটিশনে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে রয়েছেন। রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: এস.এম.এ হান্নান নিকট আমি লিখিতভাবে দুই জন সাব সেন্টারে ডাক্তার বসন্তপুর সাব সেন্টার ও সুলতান পুরে শ্যাম নগর সাব সেন্টারে পেশন তুলে সাব সেন্টারে যোগদানসহ আরো ৫ জন ডাক্তারসেহ কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন