ঈদের ছুটি শেষে ঢাকামুখী মানুষের চাপ বাড়ছে। বাস, ট্রেন ও লঞ্চে ভিড়। তবে যানজটমুক্ত মহাসড়ক এবং ট্রেনের শিডিউল ঠিক থাকায় এবার স্বস্তি নিয়ে ফিরছে মানুষ। প্রায় ৯ দিনের ছুটি শেষে আজ রোববার থেকে খুলছে অফিস-আদালত। এ কারণে এক দিন হাতে রেখেই কর্মজীবীরা ঢাকায় ফিরছেন। ফিরতি পথে ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই ঢাকায় পৌঁছাতে পেরে দারুণ খুশি ঢাকাফেরত মানুষেরা।
এবার দেশের প্রধান মহাসড়কগুলোতে যানজট নেই। আগে থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ায় ফেরিজট হয়নি দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া-শিমুলিয়া ঘাটে। দেশের প্রধান চারটি মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঈদের আগেও ছিল যানজটমুক্ত। শুধু ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঈদযাত্রায় যানজট হয়েছে। তবে সেটির জন্য মহাসড়ক কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়। বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায় বন্ধ থাকায় ঈদের আগের দিন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ৩০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়ে হাজার হাজার যানবাহন আটকা পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই দিন গাড়ির চাপে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আদায়ের কম্পিউটার সাময়িক বিকল হয়ে পড়ায় টোল আদায় বন্ধ রাখা হয়। এতেই যানজট সৃষ্টি হয়ে হাজার হাজার মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায়ে সিএনএসের সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। এবার রেলের টিকিট বিক্রিতেও একই প্রতিষ্ঠানের (সিএনএস) সফটওয়্যারের কারণে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটতে পারেনি যাত্রীরা। ট্রেনের যাত্রীদের ভোগান্তির শুরু সেই ২২ মে থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করতে গিয়ে। এবার ঈদের অগ্রিম টিকিটে সমস্যা হওয়ায় ইতোমধ্যে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন দুঃখ প্রকাশ করেছেন। একই সাথে তিনি চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে সিএনএসকে বাদ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
সকালে কমলাপুর রেল স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ট্রেন নির্ধারিত সময়েই স্টেশনে আসছে। তবে ঈদযাত্রার মতো উপচেপড়া ভিড় ছিল না কোনো ট্রেনেই। তবে ফিরতি ট্রেনে যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। অনেকেই ছুটি এক দিনের বেশি নিয়েছেন। এ কারণে পুরো সপ্তাজুড়েই গ্রাম থেকে মানুষ ঢাকায় আসতে থাকবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
দিনাজপুর থেকে একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি গতকাল সকালে নির্ধারিত সময়ের কিছুটা পরে কমলাপুর এসে পৌঁছায়। ওই ট্রেনের যাত্রী আক্তার যুথি জানান, বাবা-মাসহ আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করে অফিসের কারণে শনিবার তাকে ঢাকায় ফিরতে হয়েছে। আসার পথে তেমন কোনো ঝামেলা হয়নি। ট্রেনে যাত্রী বেশি থাকলেও নিরাপদে ঢাকায় ফিরে তিনি দারুণ খুশি।
কিশোরগঞ্জ থেকে এগারসিন্ধুতে ফিরেছেন ডা. এমদাদুল হক। তিনি বলেন, পেশাগত কারণেই দ্রæত ফিরতে হলো। পরিবার-পরিজন রেখেই চলে এসেছি। বাকিরা আগামী সপ্তাহে ফিরবে। নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিট পর ট্রেন কমলাপুরে এসে পৌঁছালেও নিরাপদে ফিরতে পেরেছেন, এতেই তিনি খুশি বলে জানান। কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক বলেন, ঈদের আগে চারটি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছিল। ঈদ উপলক্ষে ট্রেনগুলোর সাপ্তাহিক ছুটি বন্ধ থাকায় ঈদের আগে আর সেগুলোকে নির্ধারিত সময়ে ফেরানো যায়নি। তবে ঈদের পর সবগুলো ট্রেনই শিডিউল অনুযায়ী চলছে। ২০-৩০ মিনিট যা বিলম্ব হচ্ছে তা যাত্রীদের ওঠানামার কারণে। বেশি যাত্রীর উঠতে নামতে সময় একটু বেশি লাগছে। স্টেশন ম্যানেজার ঢাকায় ফিরতে গিয়ে ট্রেনগুলো খানিকটা বিলম্ব হলেও ছাড়তে গিয়ে আবার সেই সময় মেকআপ করে সঠিক সময়ে ছাড়ছে। এ দিকে, রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে দূরপাল্লার বাস আসছে যাত্রী নিয়ে। তবে ঢাকা থেকে অনেকটাই খালি যাচ্ছে বাসগুলো। শুধু চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বাসগুলো যাত্রীতে পরিপূর্ণ।
বাসে করে নাটোর থেকে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী সজল। তিনি জানান, শনিবার থেকেই অফিস খোলা। এ কারণে রাতেই বাসে উঠেছেন। সকাল সকাল ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। আসার পথে তেমন কোনো যানজটে পড়তে হয়নি বলেও তিনি জানান।
সিরাজগঞ্জ থেকে ফিরেছেন আরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধু সেতুর কাছে যানজটে পড়লেও ফেরার সময় কোনো যানজট ছিল না। ঠিক সময়েই ফিরে এসেছি। তবে পরিবারের সঙ্গে কাটানো ঈদের সময়গুলো ছিল অনেক আনন্দের। তাদের রেখে চলে আসায় মনটা খারাপ বলেও তিনি জানান।
গাবতলী বাস টার্মিনালের হানিফ পরিবহনের ম্যানেজার জাকির মল্লিক বলেন, ঈদ শেষে প্রচুর যাত্রী ঢাকায় ফিরছে। প্রতিটি বাসই পূর্ণ হয়ে আসছে। আসার পথে কোনো বাসেই এখন সিট খালি নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্রাক বন্ধ থাকায় মহাসড়কে কোনো যানজট নেই। ফেরিঘাটে হয়তো একটু সময় লাগছে। তবে আসার পথে এবার যাত্রীদের কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না। কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসা সজিব বলেন, প্রতিবার ফেরার পথে জয়দেবপুরের যানজটে পড়ি, কিন্তু এবার তা হয়নি। তাই মাত্র তিন ঘণ্টার মতো সময় লেগেছে। তবে ২০০ টাকার ভাড়া ২৫০ টাকা রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
কুমিল্লা থেকে আসা রফিক বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কোনো যানজট নেই। গাড়ির সংখ্যাও খুব বেশি নয়। বিশেষ করে মহাসড়কে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান না থাকায় একেবারে নিরাপদে আসছে বাসসহ অন্য গাড়িগুলো। মেঘনা, গোমতী ও কাঁচপুর সেতুতে নির্বিঘেœ চলছে যানবাহন। কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসতে ২ ঘণ্টার মতো লেগেছে। তিনি বলেন, অল্প সময়ে আসতে পেরে ভালো লেগেছে। তিনিও বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন। মহাখালী টার্মিনালের এনা ট্রান্সপোর্টের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) সৈয়দ আতিকুল আলম বলেন, শনিবার সকাল থেকেই প্রচুর যাত্রী আসছে। বিকালের দিকে ঢাকামুখী যাত্রীর চাপ বেড়েছে। আর রাস্তায় যানজট না থাকায় যাত্রীরা এখন অল্পসময়ে ঢাকায় আসতে পারছেন।
অন্যদিকে লঞ্চেও শুক্রবারের তুলনায় গতকাল ভিড় ছিল বেশি। তবে সেই ভিড় উপচেপড়া নয় বলে জানান বিআইডবিøউটিএ’র একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এবার লম্বা ছুটির কারণে মানুষ সময় বেশি পেয়েছে। সময় নিয়ে তারা ফিরবেন বলেই অন্যান্যবারের মতো উপচেপড়া ভিড় হওয়ার আশঙ্কা নেই। বরিশাল থেকে লঞ্চে করে ফিরেছেন শম্পা আক্তার ও তার পরিবার। তিনি জানান, ১১ জুন থেকে বাচ্চার স্কুল খুলবে। তাছাড়া আজ রোববার থেকে অফিস ডিউটি শুরু। এ কারণে কষ্ট হলেও বাবা-মাকে রেখে দ্রুতই ফিরতে হয়েছে। তবে সুন্দরভাবে ঢাকায় ফিরতে পেরে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন