ঋতু পরিক্রমায় প্রকৃতির খালে বিলে আসছে জোয়ার ও বর্ষার পানি। নতুন পানিতে ছোটাছুটি শুরু করেছে চিড়িং, বাইলা সহ দেশিয় প্রজাতির নানান মাছ। সেই মাছ ধরাকে উপলক্ষ করে নেছারাবাদের বিভিন্ন হাট-বাজারে জমে উঠেছে চাঁইয়ের হাট। এ উপজেলার বৃহৎ চাঁইয়ের হাট বসে আটঘর কুড়িয়ানায় মানপাশা বাজারের খালে জলে রাস্তার পাশে। মৌসুমের প্রতি সোম ও শুক্রবার বসে উপজেলার এ ঐতিহ্যবাহি বিখ্যাত চাঁইয়ের হাট। প্রতি হাটে কয়েক লক্ষাধিক টাকার চাঁই বিক্রি হয় এখানে। এক কুড়ি(২০টি) চাঁই ২হাজার পাঁচশত টাকা থেকে ৩ হাজার পাঁচশত টাকা দামে বিক্রি হয়ে থাকে। অত্র উপজেলার বিভিন্ন এলাকাসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁই কিনতে লোকেরা আসে হাটে। হাটে এসে একসাথে অনেকগুলো চাঁই কিনে নৌকা, ভ্যানগাড়ী ও নসিমন করে চাঁইয়ের উপর চাঁই সাজিয়ে নিয়ে যান দূর-দূরান্তে। বাংলা মাসের জৈষ্ঠ্য থেকে শুরু করে ভরা ভাদ্র মাস পর্যন্ত চলে চাঁই বিকিকিনি। এ উপজেলার আটঘরে কয়েক যুগ ধরে চলে আসা এই চাঁই ব্যবসাকে ঘিরে এসময়ে ঘটে নানান মানুষের কর্মসংস্থান।
মৌসুম শুরুর প্রায় মাস দেড়েক পূর্ব থেকেই কাঁচা বাঁশ সংগ্রহ করে চাঁই বুনন করে থাকেন কারিগররা। সাধারণত এ পেশার সাথে জড়িত সবাই গৃহস্থলীর অন্যান্য কাজের ফাঁকে এ কাজ করে থাকেন। মূলত হিন্দু পরিবারের লোকজন এ পেশার সাথে বেশি সম্পৃক্ত। এখানকার হাটে বাজারে ওঠা বেশিরভাগ চিংড়ি মাছ আহরিত হয়ে থাকে এ চাঁই থেকে। আর এ জন্য গ্রামের বিভিন্ন হাটবাজরে বসে চিংড়ি মাছের অস্থায়ি ডিপো। চাঁই দিয়ে মৎস্য আহরণকারীরা মাছ ধরে এনে প্রতিদিন ডিপো গুলোতে বিক্রি করে থাকেন। ডিপো থেকে আবার প্রতিদিন এ মাছ রাজধানী ঢাকাসহ চলে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে।
লতা, ময়ূরপঙ্খি, গোল ও চাপা চাঁইসহ বাহারি নামে বিভিন্ন দামের চাঁই আসে হাটে। হাটে চাঁই নিয়ে আসা ক্রেতা, বিক্রেতা ও প্রকৃতিপ্রেমী উৎসুখ মানুষের সমাগমে সৃষ্টি হয় নয়নাভিরাম দৃশ্য।
শ্রীরামকাঠির জয়পুর থেকে হাটে আসা চাঁই ব্যবসায়ী দিপক হালদার(৪২) বলেন, তিনি ১৮-২০ বছর যাবত এ ব্যবসার সাথে জড়িত। এক কুড়ি মাঝারি সাইজের ময়ূরপঙ্খি চাঁই বুননে তার খরচ পড়ে ১হাজার দুইশত টাকা থেকে তেরশত টাকা। হাটে চাঁই নিয়ে আসতে তার প্রতি কুড়ি চাঁইয়ে যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে এক থেকে বারশত টাকা লাভ হয়ে থাকে। তবে হাটের বাজার মন্দা হলে লোকসানের আর সীমা থাকেনা। তিনি আরো জানান, একদিনে ২জন লোকে ৭ থেকে ১০ টি চাঁই বুনতে পারেন। তিনি জানান শুক্রবার(১৭ মে) তিনি এ হাটে শতাধিক চাঁই নিয়ে এসেছেন। বেঁচা-বিক্রি মোটামুটি ভাল হয়েছে। উপজেলা কলারদোয়ানিয়া থেকে হাটে চাঁই নিয়ে আসা চাঁন মিয়া(৬৫) বলেন, তিনি ৩৪ বছর যাবত এ ব্যবসার সাথে জড়িত। তিনি বলেন একটি ২৫০ টাকার বড় সাইজের বাঁশ দিয়ে ১৩-১৫টি চাঁই হয়। ১০টি চাঁই তৈরীতে তিনজনের সময় লাগে একদিন। গড় চাঁই মজুরীসহ সব মিলিয়ে তার খরচ পড়ে ৬০-৭০টাকা। হাটে প্রতিটি চাঁই বিক্রি হয় ৯০-১০০ টাকায়। ব্যাবসায় প্রায় দ্বিগুন লাভে বাড়ীর মহিলারাসহ কোন কোন শিক্ষিত বেকার ছেলেরাও জড়িয়ে পড়ছে চাঁই বুনন কাজে। তবে তিনি জানান এ ব্যবসায় এখন আর লাভের মুখ দেখা খুবই দুরহ ব্যপার। আগে গ্রামে গঞ্জে বাঁশ পাওয়া যেত। এখন দিন দিন বাঁশ ঝাড় উদাও হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য চাঁই বুনতে তিনি দূর-দূরান্ত থেকে বাঁস সংগ্রহ করে থাকেন বিধায় খরচপাতি অনেক পড়ে যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন