বোরহানউদ্দিন উপজেলা সদর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দক্ষিণে দেউলা ও সাচড়া ইউনিয়নে যেতে পাকা সড়কের পাশেই কালের সাক্ষি হয়ে দাড়িয়ে আছে প্রাচীণ স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন চৌধুরী বাড়ি জামে মসজিদ। ঐতিহ্যবাহী চৌধুরী বাড়ির নামেই এ মসজিদের নামকরণ করা হয়েছে। ওই বাড়ির প্রবেশপথেই ঘাটলা বাঁধানো পুকুরসহ দৃষ্টিনন্দন মসজিদের দিকে সবার চোখ একবারের জন্য হলেও আটকে যায়। একশ’ বছরের বেশী সময় ওই এলাকার একমাত্র মসজিদে দূর-দূরান্ত থেকে মুসুল্লীরা নামাজ পড়তো। চৌধুরী বাড়ির প্রবীণ ব্যক্তি ও মসজিদের তত্ত¡াবধায়ক মাহাবুব চৌধুরী জানান, ১৮৬০ সালে তৎকালীন জমিদার বোরহানউদ্দিন চৌধুরী মসজিদটি নির্মাণ করেন। তিনি ভারতের দিল্লী থেকে শ্বেতপাথর এবং রাজমিস্ত্রিদের এনে মসজিদের অবকাঠামো সাজিয়েছেন। মসজিদে ব্যবহৃত লোহার বিমগুলো আনা হয়েছিল সুদূর বেলজিয়াম থেকে। দরজা-জানালায় ব্যবহার করা বাদামী রঙের কাঠগুলো নতুনের মতো একই রকম বিবর্ণহীন।
মসজিদের ভেতর বাইরে অপূর্ব কারুকাজ। এই মসজিদে ব্যবহৃত প্রদীপগুলোতে একসময় সরিষার তেল জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। মসজিদটির পশ্চিমপাশে রয়েছে তালগাছবেষ্টিত শান বাঁধানো পুকুর। এককালে মসজিদের পূর্ব পাশে ছিল তিনটি কাঁচারি। ওই কাঁচারিতেগুলোতে শত শত মুসাফির আশ্রয় নিত। এক একর ৪০ শতাংশ জমির ওপর মসজিদটি নির্মাণ করা হয়।
একসময় মসজিদের নিজস্ব ২৬০ বিঘা জমির আয় দিয়ে মুসাফিরদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হতো। কালের আবর্তে তেঁতুলিয়া নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় ২০০ বিঘা জমি। বর্তমানে মাত্র ৫০ বিঘা জমির আয় দিয়ে মসজিদের কার্যক্রম চালাতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান মাহাবুব চৌধুরী। দীর্ঘদিন পর ২০০৮ সালে প্রথম মসজিদটি সংস্কার করা হয়।
সরেজমিনে মসজিদের বাইরের অংশে রঙ করতে দেখা যায়। তারাবিহ নামাজের হাফেজ নূরে আলম জানান, এখন আশপাশে অনেক মসজিদ হওয়ায় মুসুল্লীর সংখ্যা কম। ইফতারির সময় প্রায় দেড়শ’ মুসুল্লী একসাথে ইফতার করে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। মসজিদের নিয়মিত ইমাম মাওলানা মো. মনছুর ও মুয়াজ্জিন হাফেজ মোহাম্মদ আলী বলেন, এ মসজিদে প্রত্যেক ওয়াক্তে ৪০ থেকে ৫০ জন ও জুমার নামাজে ২০০ থেকে ২৫০ জন মুসুল্লী নামাজ আদায় করেন। এ ছাড়া ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজে আশপাশের কয়েক হাজার মুসুল্লী অংশ নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন মুসুল্লী জানান, মোতাওয়াল্লি নিয়ে ওয়ারিশদের মধ্যে দ্বন্ধ থাকার কারণে ঐতিহ্যবাহী চৌধুরী বাড়ি জামে মসজিদের অতীত ঐতিহ্য ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন