রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

প্রচারণায় বাধা ও হুমকি-ধমকিতে শঙ্কায় বিএনপি

গ্রামীণ জনপদে ইউপি নির্বাচনের হাওয়া

প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৯ এএম, ১৩ মার্চ, ২০১৮

ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) উপজেলা সংবাদদাতা : আগামী ৪ জুন ঘাটাইল উপজেলার ৮ ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৮ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৭৫ হাজার ৭শ ২৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৬ হাজার ৫০২ এবং মহিলা ভোটার ৮৮ হাজার ৫২৪। গত ইউপি নির্বাচনে ১১টি ইউনিয়নের ৮টিতে জয় পায় বিএনপি প্রার্থীরা। তিনটিতে জয়লাভ করে আ.লীগের প্রার্থীরা। এবার আ.লীগ চাইছে জয়ের পাল্লাভারি করতে আর বিএনপি চাইছে জয়ের ধারা অক্ষুণœ রাখতে। নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ থাকলেও শঙ্কাও আছে। বিএনপির প্রার্থীদের দাবি প্রচারে বাধা ও হুমকি-ধামকির কারণে শঙ্কার মধ্যে আছেন তারা। আনেহলা ইউপিতে বিএনপির প্রার্থী প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন এবং লোকেরপাড়া ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির প্রার্থী। এর ফলে এই দুটি ইউনিয়নে বিএনপির কোন প্রার্থী নেই। ৮ ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী আছে। পাশাপাশা প্রতিটি ইউনিয়নে তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীও রয়েছে। আশপাশের নির্বাচনের সার্বিক চিত্র দেখে ভোট হবেতো কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়া যাবেতো এমন নানা শঙ্কা ভোটাদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন বলছে ভোট হবে শতভাগ সুষ্ঠু। প্রার্থী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত মত বিনিময় সভায় জেলা প্রশাসকসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এমনই মনভাবের কথা ব্যক্ত করেছেন। এদিকে এই সভায় সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন প্রার্থীরা। প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার কারণে কিছুটা বেকায়দার রয়েছে নৌকার প্রার্থীরা। ৮ ইউনিয়নে মোট চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩৩ জন সাধারণ সদস্য ২৬২ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী ৭০ জন। দেউলাবাড়ি ইউপিঃÑ এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৫ জন সাধারণ সদস্য ৩৪ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী ৯ জন। ৫ চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কায়সার রহমান খান (কহিনুর খান), বিএনপি মনোনীত প্রার্থী রফিকুল ইসলাম খান। অন্য প্রার্থীরা হলেন সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেন, (আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী) স্বতন্ত্রপ্রার্থী মো. থলিলুর রহমান আকন্দ ও মো. মোতাহার হোসেন। এখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভবনা বেশি। ঘাটাইল ইউপি : এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৪ জন সাধারণ সদস্য ৩১ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী ৭ জন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী, মো. হায়দার আলী, বিএনপি দলীয় প্রার্থী বিআরডবি’র সাবেক চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ, অপর প্রার্থীরা হলেন, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক মেম্বার জাহাঙ্গীর হোসেন খান (আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী), আঃ আজিজ মেম্বার (আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী)। জামুরিয়া ইউপিঃ এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী দুজন। এরা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শহিদুল ইসলাম খান হেস্টিংস। তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান উপজেলা বিএনপির সাংগাঠনিক সম্পাদক ইখলাক হোসেন খান (শামীম খান)। উপজেলার ৮ ইউনিয়নের মধ্যে নির্বাচনী হাওয়া বইলেও জামুরিয়া ইউনিয়নের দুই দলের হেভিওয়েট এই দুই প্রার্থীর নির্বাচনের কলা কৌশলের দিকে দৃষ্টি সকলের। আওয়ামী লীগ প্রার্থী শহিদুল ইসলাম খান হেস্টিংস চাইছেন টানা দ্বিতীয়বারের মত নির্বাচিত হতে আর বিএনপি দলীয় প্রার্থী শামীম খানও চাইছেন দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয়ে চেয়ারম্যানশিপ পুনঃউদ্ধার করতে। এ ইউনিয়নে সাধারণ সদস্য পদে ৩১ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী ৫ জন নির্বাচন করছেন। লোকেরপাড়া ইউপিঃ এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৬ জন বর্তমান চেয়ারম্যান হায়দার আলী তালুকদার বিএনপি দলীয় মনোনয়ন এনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাই এ ইউনিয়নের বিএনপির কোন প্রার্থী নেই। এখানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ শরীফ হোসেন, এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা জহিরুল ইসলাম, এডভোকেট বেলায়েত হোসেন খান কাপাস, জাপার প্রার্থী আহম্মদ আলী, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. গোলজার হোসেন। এছাড়া এ ইউনিয়নে সাধারণ সদস্য ৩২ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী হয়েছেন ১১ জন। সাধারণ ভোটারদের অভিমত এখানে প্রার্থী সংখ্যা বেশি থাকায় কে শেষ মুহূর্তে নির্বাচনী লড়াইয়ে জিতবেন তার জন্য ৪ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আনেহলা ইউপিঃ বিএনপির প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান শফিউর রহমান মুক্তা প্রার্থীতা প্রত্যাহার করায় এখানে বিএনপির কোন প্রার্থী নেই। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান তালুকদার (ডলার শাহজাহান), অন্য প্রার্থীরা হলেন নেতা আনছার আলী (আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী), স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন খন্দকার আঃ রহিম। এছাড়া এ ইউনিয়নে সাধারণ সদস্য ৩০ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী হয়েছেন ১১ জন। এখানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সাথে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সাথেই লড়াই হবে বলে ভোটারদের অভিমত। দিঘলকান্দি ইউপিঃ বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হলেন, রেজাউল করিম মটু, এছাড়া ৫ চেয়ারম্যান প্রার্থীর অন্যরা হলেন, সাবেক চেয়ারম্যান উপজেলা বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শাহিনুর রহমান (বিএনপি বিদ্রোহী), আব্দুল্লাহ আল মামুন বিদুৎ, (আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. খাদেমুল ইসলাম। সাধারণ সদস্য ৩৮ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী হয়েছেন ১০ জন। এখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলেরই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। সকল প্রার্থীই সমান তালে তাদের নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। তাই এ ইউনিয়নে কেউ কারো নাহি হারে সমানে সমান অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শেষ বিকেলে এখানে কে বিজয়ের মালা পড়বে তা বলা মুশকিল। দিগড় ইউপি ঃ এ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান প্রার্থী ৫ জন। এরা বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনছুর আলী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইসমাইল হোসেন, ইউনিয়ন বিএনপিসাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ মামুন (বিএনপি বিদ্রোহী), আওয়ামী লীগ নেতা সানোয়ার হোসেন শাতিল, (আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জামাল হোসেন ও হাবিবুর রহমান। সাধারণ সদস্য পদে ৩৮ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী হয়েছেন ৯ জন। এখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলেরই পথে কাটা বিদ্রোহী প্রার্থী। দেওপাড়া ইউপিঃ এ ইউনিয়নে তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মাইন উদ্দিন তালুকদার তারু, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. আঃ ছালাম। ভোটারদের অভিমত এখানে লড়াই হবে ত্রিমুখী বিজয়ের হাসি কে হাসবে তা বলা মুশকিল সাধারণ সদস্য পদে ২৮ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী হয়েছেন ৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

দুই খানের লড়াই
ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) উপজেলা সংবাদদাতা : আগামী ৪ জুন ঘাটাইল উপজেলার ৮ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসব ইউনিয়নের মধ্যে উপজেলা সদরের সঙ্গে অবস্থিত ৩ নং জামুরিয়া ইউনিয়ন অন্যতম। এ ইউনিয়নে প্রার্থী সংখ্যা দুইজন। রাজনৈতিক বিবেচনায় দু’জনই হেভিওয়েট প্রার্থী। একজন হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শহিদুল ইসলাম খান হেস্টিংস। অপরজন হলেন সাবেক চেয়ারম্যান উপজেলা বিএনপির সাংগাঠনিক সম্পাদক ইখলাক হোসেন খান (শামীম খান)। দু’জনই মনোনয়ন দাখিল করেছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী শহিদুল ইসলাম খান হেস্টিংস-এর নাম বাদ দিয়ে জেলা কমিটি কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে তালিকা পাঠায়। পরে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে আপিল করে অনেকটা চমক দেখিয়ে দলীয় মনোনয়ন লাভ করেন। তারপর থেকেই তিনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। বিএনপি দলীয় প্রার্থী শামীম খান বর্তমানে বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের অন্যতম। তফশিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচনী মাঠে রয়েছে তার সরব উপস্থিতি। আত্মীয়তার সম্পর্ক না থাকলেও দু’জনই খান বংশের লোক। উপজেলার ৮ ইউনিয়নের মধ্যে নির্বাচনী হাওয়া বইলেও জামুরিয়া ইউনিয়নের দুই দলের হেভিওয়েট এই দুই প্রার্থীর নির্বাচনের কলা-কৌশলের দিকে দৃষ্টি সকলের। আওয়ামী লীগ প্রার্থী শহিদুল ইসলাম খান হেস্টিংস চাইছেন টানা দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচিত হতে আর বিএনপি দলীয় প্রার্থী শামীম খানও চাইছেন দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয়ে চেয়ারম্যানশিপ পুনঃউদ্ধার করতে। এ অবস্থায় জমে উঠেছে দুই খানের জমজমাট নির্বাচনী লড়াই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন