আলহাজ্ব আবুল হোসেন
৩০ মে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে কিছু বিপথগামী উদভ্রান্ত এবং বিদেশি উসকানিতে বিভ্রান্ত হাতেগোনা কয়েকজন অফিসারের হাতে তিনি নির্মমভাবে শহীদ হন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুতে সেদিন সারা দেশের লোক শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিল। কারণ জিয়াউর রহমান তার সততা, দৃঢ়তা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে নিরলস পরিশ্রম করে তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে নিয়ে ছিলেন।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, তার প্রজ্ঞার ব্যবহার ঘটিয়েই মধ্যপ্রাচ্যের সাথে বাংলাদেশের কূটিনৈতিক সম্পর্কের অচলাবস্থার ইতি ঘটান। ফলে সেখানকার শ্রমবাজারে ব্যাপকহারে যুবকদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। আজ আমাদের অর্থনীতিতে বিদেশি রেমিটেন্সের যে রমরমা অবস্থা সেটা শহীদ জিয়ার একক কৃতিত্ব।
বাঙালি জাতীয়তাবাদের কারণে শেখ মুজিবের সময় থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদ শুরু হয়। ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পাকিস্তানিদের এক সময়কার সহযোগী চাকমারা সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করে। সেটি মোকাবেলায় এবং বৃহত্তর ঐক্যের জন্যই শহীদ জিয়া, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদি রাজনীতি শুরু করেন।
এছাড়া বাংলাদেশকে নতজানু করার বদ মতলব থেকে উদ্ভূত ফারাক্কা বাঁধ নামের অবৈধ কর্মকা-ের মাধ্যমে বাংলাদেশকে মরুকরণ করতে চাইলে, স্বাধীনচেতা জিয়া, জাতিসংঘে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যার ব্যাপারে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ফলে ভারত বাধ্য হয় বাংলাদেশের ন্যায্য পানি দিতে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর জিয়া বাংলাদেশের কূটনৈতিক নীতিমালায় বিশেষ পরিবর্তন আনেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশের প্রতি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তির দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে বিশেষ একটি কূটনৈতিক অবস্থানের সৃষ্টি হয়, ফলে বাংলাদেশের সাথে প্রতিবেশী ভারতসহ সোভিয়েত ইউনিয়নের বন্ধুতা এবং অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক নৈকট্য গড়ে তুলেছিল। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আন্তর্জাতিক স্নায়ু যুদ্ধের তৎকালীন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির উল্লেখযোগ্য সংস্কার করেন, যার দুটি মূল দিক ছিল সোভিয়েত ব্লক থেকে বাংলাদেশের সরে আসা ও মুসলিম বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক স্থাপন করা। জিয়াউর রহমান সোভিয়েত ইউনিয়ন ব্যতীত প্রাচ্যের আরেক পারমাণবিক শক্তি চীনের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগী হন। তার পররাষ্ট্রনীতি সংস্কার প্রক্রিয়ার আওতায় আরও ছিল বাংলাদেশের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আরব বিশ্বের সাথে সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণ, যে সম্পর্কে স্বাধীনতার পর থেকেই শৈথিল্য বিরাজ করছিল। মধ্যপ্রাচ্যের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের সুবিধা ও উপকারিতা বাংলাদেশ আজও পুরোমাত্রায় উপভোগ করছে, কেননা বর্তমানে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যে বিপুল পরিমাণ বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকদের কর্মস্থলে পরিণত হয়েছে তার রূপরেখা জিয়াই রচনা করে গিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের সাথে স্থাপিত সম্পর্ক অনেকটা অর্থনৈতিক হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সাথে স্থাপিত সম্পর্কে সামরিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক ইস্যুগুলোও প্রাসঙ্গিক ছিল। বিশেষ করে চীনের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করার মাধ্যমে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর পুনর্গঠনের কাজ অনেকটা তরান্বিত করেছিলেন। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অস্ত্রাগারের দিকে তাকালে সেই সত্যই প্রতিফলিত হয়। সামরিক পুনর্গঠনের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর সাথে উন্নত কূটনৈতিক সম্পর্কের কারণে জিয়া রাষ্ট্রীয় বিমান পরিবহন সংস্থা বিমানের আধুনিকীকরণও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এছাড়াও প্রেসিডেন্ট জিয়ার পররাষ্ট্র নীতির সাফল্যে বাংলাদেশ ১৯৭৮ সালে শক্তিশালী জাপানকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য নির্বাচিত হয়।
প্রাথমিকভাবে এসব সংস্কার বৃহত্তর প্রতিবেশী ভারতের সাথে সামান্য দূরত্ব সৃষ্টির ইঙ্গিত বহন করলেও জিয়াউর রহমান যে আঞ্চলিক সহায়তাকে গুরুত্ব দিতেন সেই সত্যের প্রতিফলন ঘটে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহায়তা সংস্থা (সার্ক) গঠনে তার উদ্যোগ ও অবদানের মধ্য দিয়ে। যেহেতু ভারত সে সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের অত্যন্ত বন্ধুভাবাপন্ন ছিল, স্নায়ুযুদ্ধের অপরপক্ষ অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশ কূটনৈতিক নৈকট্য ভারতের সাথে দূরত্ব সৃষ্টির একটি কারণ হতে পারত। চীনের সাথে বাংলাদেশের তৎকালীন সদ্যস্থাপিত সুসম্পর্কও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু জিয়াউর রহমান উপলব্ধি করেছিলেন যে আঞ্চলিক প্রতিযোগিতার বদলে সহযোগিতা স্থাপিত হলে বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে যার ফলে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলো উপকৃত হবে। এই লক্ষ্যে তিনি সার্কের রূপরেখা রচনা করেন, যা পরে ১৯৮৫ সালে বাস্তবে রূপ নেয় ও প্রতিষ্ঠিত হয় সার্ক।
বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন একটি দেশে পরিণত করতে গিয়ে শত্রুদের চক্ষুশুল হয়ে দেশের জন্য তাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। প্রেসিডেন্টে জিয়াউর রহমানের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে যুগান্তকারী অবদানের জন্য জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে তাকে স্মরণ করবে। দেশ ও জাতি গঠনে জিয়াউর রহমানের অবদান ইতিহাসে উল্লেখ থাকবে।
শহীদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান ও একজন বীরউত্তম খেতাব প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম। বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক শহীদ জিয়া ছিলেন বাংলার আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র। স্বাধীনতা উত্তর দুর্ভিক্ষ পিড়িত জনগণ শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর যখন শুধু অনিশ্চয়তা আর হতাশা ছাড়া আর কিছুই চোখে দেখছিল না, ঠিক তখনই জিয়া জ্বালিয়েছিলেন আশার আলো, বাংলাদেশের জনগণ বুকে বেঁধেছিল অনেক বড় স্বপ্ন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন এবং পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন।
বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত। এটা হয়েছে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার ফলেই। আমরা জানি, পাঁচ হাজার বছর আগেও এ ভূখ-ের অধিবাসীদের বীরত্ব সম্পর্কে সমীহ করা হতো। মহাবীর আলেকজান্ডারের সঙ্গীরা এই বীর জাতির শৌর্যবীর্যের প্রশংসা করেছেন। আড়াই হাজার বছর আগে রোমান কবি ভার্জিলের কবিতায় গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের অধিবাসীদের বীরবন্দনা প্রকাশ পেয়েছে। সেই প্রাচীনকালে বাঙালি বীর বিজয় সিংহ লঙ্কা জয় করে দূর দেশেও নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের কৃতিত্ব দেখান। তারপরও বলা যায়, ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা এ ভূখ-ের মানুষের ইতিহাস খুব একটা সুখকর নয়। এ দেশের সম্পদ লুণ্ঠনের জন্য বিদেশি হানাদাররা বারবার আঘাত হেনেছে। বৈদেশিক আধিপত্যে এক পর্যায়ে বাঙালি তার স্বকীয় মর্যাদাও হারিয়ে ফেলে।
বাঙালি মুসলমানদের অগ্রণী ভূমিকায় ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলেও শুরুতেই ষড়যন্ত্রের শিকার হয় পদ্মা মেঘনা যমুনা বুড়িগঙ্গা পাড়ের মানুষ। সংখ্যালঘিষ্ঠ পশ্চিম পাকিস্তানিরাই এ দেশের ভাগ্য-বিধাতা হয়ে ওঠে। শোষণ ও নির্যাতনের শিকারে পরিণত হয় বাঙালিরা।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন পূর্ব পাকিস্তানের নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর বর্বরের মতো ঘৃণ্য হামলা চালায়, তখন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ চলে যান আত্মগোপনে। জনগণ তখন দিশেহারা হয়ে পড়ে। এই সঙ্কটময় মুহূর্তে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় পশ্চিম পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর আক্রমণের পর জিয়াউর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করে বিদ্রোহ করেন এবং ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
বাংলাদেশি পতাকা জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সামনে পৃথিবীর সব দেশের পতাকার মাঝে গৌরবের সাথে উড়ছে। আমরা আজ স্বাধীন জাতি। এই স্বাধীনতা ছিল বাঙালি জাতির দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন। পরম আকাক্সিক্ষত বস্তু। আমাদের স্বপ্ন ছিল, আত্মবিশ্বাস ছিল। তাই আমরা ধৈর্য হারাইনি। সফল হয়েছি। আর এই সফলতার নায়ক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
শহীদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান ও একজন বীরউত্তম খেতাব প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম। বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক শহীদ জিয়া ছিলেন বাংলার আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র। স্বাধীনতা উত্তর দুর্ভিক্ষ পিড়িত জনগণ শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর যখন শুধু অনিশ্চয়তা আর হতাশা ছাড়া কিছুই চোখে দেখছিল না, ঠিক তখনই জিয়া জ্বালিয়েছিলেন আশার আলো, বাংলাদেশের জনগণ বুকে বেঁধেছিল অনেক বড় স্বপ্ন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন এবং পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন।
জিয়াউর রহমানের জন্ম ১৯ জানুয়ারি ১৯৩৬ সালে বগুড়ার বাগবাড়ীতে। তার বাবা মনসুর রহমান একজন রসায়নবিদ হিসেবে কলকাতাতে সরকারি চাকরি করতেন। তার শৈশবের কিছুকাল বগুড়ার গ্রামে ও কিছুকাল কলকাতাতে কেটেছে। দেশ বিভাগের পর (১৯৪৭) তার বাবা করাচি চলে যান। তখন জিয়া কলকাতার হেয়ার স্কুল ত্যাগ করেন এবং করাচি একাডেমী স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে তিনি ঐ স্কুল থেকে তার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন এবং তারপর করাচিতে ডি.জে. কলেজে ভর্তি হন।
১৯৫৩ সালে তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমীতে শিক্ষানবিস অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে তিনি সেকেন্ড লেফটেনেন্ট হিসেবে কমিশন প্রাপ্ত হন। তিনি সেখানে দুই বছর চাকরি করেন, তারপর ১৯৫৭ সালে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে বদলি হয়ে আসেন। তিনি ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়োন্দা বিভাগে কাজ করেন। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে তিনি খেমকারান সেক্টরে একটি কোম্পানির কমান্ডার ছিলেন এবং তার কোম্পানি যুদ্ধে বীরত্বের জন্য যে সব কোম্পানি সর্বাধিক পুরষ্কার পায়, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল। ১৯৬৬ সালে তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমীতে একজন প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পান। ১৯৬৯ সালে তিনি জয়দেবপুরস্থ সেকেন্ড ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে নিয়োগ পান। উচ্চ প্রশিক্ষণের জন্য তিনি পশ্চিম জার্মানীতে যান। ১৯৭০ সালে একজন মেজর হিসেবে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং চট্টগ্রামে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে নিয়োগ পান।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন এদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর বর্বরের মতো ঘৃণ্য হামলা চালায় তখন এর আকস্মিকতায় দিশেহারা হয়ে পড়ে সর্বস্তরের জনগণ। ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর আক্রমণের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করে ২৭ মার্চ চট্টগ্রামস্থ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন জিয়াউর রহমান। পরবর্তী স্বাধীনতা যুদ্ধে জিয়াউর রহমান যুদ্ধের পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১-এর জুন পর্যন্ত ১নং সেক্টর কমান্ডার ও তারপর জেড-ফোর্সের প্রধান হিসেবে তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বের জন্য তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম রাষ্ট্রপতি হলেও তিনি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত ছিলেন না। এর বিপরীতে ১৯৭৮ সালে গণভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। গণভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম ঘটেছিল। জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রথম রাষ্ট্রপতি।
১৯৮১ সালের ৩০ মে গভীর রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে কতিপয় বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার অভ্যুত্থানে জিয়া নিহত হন। জিয়াউর রহমানকে ঢাকার শেরে বাংলা নগরে দাফন করা হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়ার জানাজায় বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ জনসমাগম ঘটে, যেখানে প্রায় ২০ লক্ষাধিক মানুষ সমবেত হয়।
বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে চলছে রাজনৈতিক সংকট। আর এই সংকট মুহূর্তে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জাতির কাছে আমার প্রশ্ন, যদি আমরা ৯ মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করতে পারি তাহলে কেন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পদ্ধতি নির্ধারণ করতে পারবো না? তাই বলছি আমাদেরকে নতুন একটি মুক্তিযুদ্ধ প্রয়োজন। সেই মুক্তিযুদ্ধ দেশ স্বাধীন করার জন্য নয়, দেশ গড়ার জন্য। পরিশেষে বলতে চাই, লাখো প্রাণের বিনিময়ে, রক্তের দামে কেনা স্বাধীনতা তখনই অর্থবহ হবে, যখন দারিদ্র্যমুক্ত হবে দেশ, দেশের সব মানুষ হবে স্বনির্ভর।
ষ লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ পরিষদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন