সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রথম থেকে পঞ্চম ধাপ পর্যন্ত কুমিল্লায় বেশিরভাগ ইউনিয়নে নির্বাচন ঘিরে খুন, সহিংসতা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, কেন্দ্র দখল, ভোট জালিয়াতির ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় ষষ্ঠ ধাপের ভোট গ্রহণ নিয়ে কুমিল্লার মুরাদনগরের ২১ ইউনিয়নে বিএনপি, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থী এবং ভোটাররা আতঙ্কে রয়েছেন। ভোট কেন্দ্রগুলোতে প্রভাব বিস্তার ও কেন্দ্র দখলের ছকে ব্যস্ত সময় পার করেছেন প্রভাবশালী প্রার্থীরা। ছক অনুযায়ী দখল বাস্তবায়নে স্থানীয় ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের মধ্যে কেন্দ্র বিন্যাসের তালিকাও সম্পন্ন করেছে প্রভাবশালী প্রার্থীরা। আবার কোন কোন ইউনিয়নে বিএনপি দলীয় লোকদের ধড়পাকড় শুরু করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যে স্থানীয় ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে ভোটকেন্দ্রে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টির প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত করেছে প্রভাবশালী চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীরা। মুরাদনগরের বাইরে বসবাসকারি ভোটারদের ভোটের দিন এলাকায় না আসার চাপ প্রয়োগের ঘটনাও গত সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে। আগামী ৪ জুন অনুষ্ঠিতব্য ষষ্ঠ ধাপের নির্বাচনে মুরাদনগর উপজেলার ২১ ইউনিয়নের সাধারণ ভোটাররা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেয়ার নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানিয়েছেন। কুমিল্লার মুরাদনগরের ২১ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামি শাসনতন্ত্র জাসদ ও স্বতন্ত্র থেকে চেয়ারম্যান পদে ১২৮ জন প্রার্থী হয়েছেন। ১৮৯টি ওয়ার্ডে মেম্বার প্রার্থী ৬০৫ জন ও মহিলা মেম্বার প্রার্থী ১৪৭ জন। দলীয় প্রতীকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ২১ জন করে চেয়ারম্যান প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী রয়েছে ৬০ জনের বেশি। আওয়ামী লীগ ও তাদের বিদ্রোহীদের বেসামাল হুঙ্কারে নির্বাচনের দিন নিজের ভোটটি দিতে পারবেন কিনা এমন সংশয় দেখা দিয়েছে মুরাদনগরের সাধারণ ভোটারদের মাঝে। দিন যতো ঘনিয়ে আসছে প্রতিটি ইউনিয়নে আতঙ্ক বাড়ছে। বিশেষ করে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের জামাই আদরে আনার সব ব্যবস্থাই চূড়ান্ত করেছে প্রভাবশালী প্রার্থীরা। কেন্দ্র দখলের ছক তৈরি করে দায়িত্ব বন্টনের কাজও শেষ। এখন অপেক্ষা ভোটের দিন কেন্দ্র দখল করে জয় ছিনিয়ে নেয়া। অভিযোগ পাওয়া গেছে, ইতিমধ্যে মুরাদনগর সদর ইউনিয়নের ১১টি ভোটকেন্দ্র দখলের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীরা। সদর, দুলালপুর, আলীরচর, দধিরামপুর, ইউসুফনগর ভোটকেন্দ্র দখলের জন্য একটি স্থানীয় গ্রæপকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। গ্রæপের রয়েছে ফারুক, রফিক হিন্দি, হকিস্টিক রাসেল, হিলোল। তাদের নেতৃত্বে ওইসব ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপারে সিল মারার দায়িত্বে থাকবে বাহিনীর দেড় শতাধিক লোক। করিমপুর কেন্দ্র দখলের জন্য শতাধিক বহিরাগতদের চুক্তি করা হয়েছে। এছাড়াও মুটকিরচর, সোনাল্লুলা, ঘোড়াশাল কেন্দ্র দখলের জন্য মেঘনা উপজেলা থেকে বহিরাগতদের আনা হবে। জাহাপুর ইউনিয়নের দড়িকান্দি, সুশন্দা কেন্দ্র দখলের জন্য তিতাস, হোমনা থেকে বহিরাগতদের আনার চুক্তি সম্পন্ন করেছে প্রভাবশালী চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীরা। বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নে সরকার দলীয় প্রার্থী, সমর্থকরা স্থানীয় সন্ত্রাসীদের চুক্তি করে ওই ইউনিয়নের বেশকটি কেন্দ্র দখলের ছক তৈরি করেছে। অন্যদিকে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের নির্বাচনের আগে আটকের জন্য পুলিশের সাথেও সরকার সমর্থকরা আলোচনা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে গত কয়েকদিন ধরে মুরাদনগর সদর, বাঙ্গরা পশ্চিম, জাহাপুর থেকে বিএনপি দলীয় প্রায় ৬/৭ জনকে পুলিশ ৫৪ ধারায় আটক করেছে। অন্যদিকে নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী কামাল উদ্দির ভূইয়াকে গুমের হুমকি দিয়েছে আওয়ামী লীগ দলীয় লোকজন। সবমিলে মুরাদনগরের সবকটি ইউনিয়নে নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজনদের আচরণ নির্বাচনমুখী না হয়ে মারমুখী হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন ইউনিয়নের ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকেরা কাজ শুরু করেছে। এলাকাগুলোতে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দাপট শুরু হয়ে গেছে। প্রতিপক্ষের প্রার্থীরা যাতে পুলিং এজেন্ট দিতে না পারে এজন্য খোঁজখবর নিয়ে হুমকি ধমকিও শুরু হয়েছে। ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে ভোটকেন্দ্রে গোলযোগ হবে, যাতে ভোটাররা না যায়। মুরাদনগরের অধিবাসীদের মধ্যে যারা ঢাকাসহ অন্যান্য জায়গায় অবস্থান করছেন তাদেরকে ভোটের দিন মুরাদনগর না আসার জন্য হুমিকি ধমকি দেয়া হচ্ছে। মুরাদনগরে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে বিএনপি, জাপা, জাসদ, ইসলামি শাসনতন্ত্রের চেয়ারম্যান, মেম্বার প্রার্থী ও সাধারণ ভোটাররা সংশয় প্রকাশ করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন