জয়নাল আবেদীন জয়, উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) থেকে : সারাদেশে ৫ম ধাপের ইউপি নির্বাচন শেষ হতে না হতেই ৬ষ্ঠ ও শেষ ধাপের ইউপি নির্বাচনের উত্তাপে সরগম সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলা। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী আর কর্মী সমর্থকদের অবিরাম প্রচার-প্রচারণা মুখর প্রতিটি পাড়া-মহল্লা। নির্বাচনের দিন সময় যত ঘনিয়ে আসছে প্রচার-প্রচারণায় যুক্ত হচ্ছে ভিন্নমাত্রা। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ভোটের মাঠে পরিস্থিতি বদল হচ্ছে প্রার্থীদের অবস্থান। নিজেদের যোগ্যতা অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রার্থীরা ভোটারদের নানাভাবে সমর্থন ও মনজয় করার চেষ্টা করছেন। উল্লাপাড়া উপজেলা শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত এলাকার পাড়া মহল্লা এবং হাট বাজারে এখন আলোচনার মূল কথাই নির্বাচন। পাড়া মহল্লার গুরুত্বপূর্ণ স্থান আর হাট বাজারে প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকরা একে অপরের সাথে নিজ নিজ প্রার্থীদের কর্মকাÐ নিয়ে তর্ক-বির্তকে জড়িয়ে পড়ছেন। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৬৬ জন ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন দল ৪টি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ২৩ জন। বাকি ৪৩ জনের মধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ১৩ জন ও বিএনপির ৩ জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নেমেছেন। এরা স্বতন্ত্র প্রার্থী পরিচয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। ইউপি নির্বাচনে উল্লাপাড়ার প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিপরীতে ভোটের মাঠে তীব্র প্রতিদ্ব›দ্বী প্রতিপক্ষ এখন নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে তৃর্ণমূল নেতাকর্মীদের সমর্থন আদায় করে সরকার দলীয় টিকেট নিয়ে ক্ষমতার দাপটে জনপ্রতিনিধি বনে যাওয়ার গুড়ে বালি এখন নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। দলীয় প্রতীকের নির্বাচনে যেখানে আওয়ামী লীগের ভোট যুদ্ধ হওয়ার কথা বিএনপির প্রার্থীর সাথে সেখানে এখন ভোট যুদ্ধ হচ্ছে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সাথে। শত বাধা-বিপত্তি আর বহিষ্কারের হুককি-ধমকিতেও ভোটের মাঠ থেকে নিজ দলের বিদ্রোহীদের সরাতে পারেনি আ.লীগ। ভোটের মাঠে এরা রীতিমত পেশি শক্তি নিয়ে ভোটের মাটে জাল জালিয়াতি প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছেন। তাই উল্লাপাড়ার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টি ইউনিয়নে আ.লীগের প্রার্থীর সাথে বিএনপি প্রার্থীর রীতিমত ভোট যুদ্ধ হবে। বাকি ৯টি ইউনিয়নে আ.লীগের প্রার্থীর সাথে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের তীব্র প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে। অনেক ইউপিতে বিদ্রোহীদের জনপ্রিয়তা ও দাপটে ভোটের মাঠে নিজেদের অবস্থানই ধরে রাখতে পারছে না নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। তাই বিদ্রোহীদের ভোটের মাঠের ঝড়ো দাপটে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বা মাঝিরা। এই ৯ ইউনিয়নের মধ্যে কয়েকটিতে বিদ্রোহীদের বিজয়ের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তৃর্ণমূলের ভোটে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের সময় থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে গেছে। তাছাড়া উল্লাপাড়া উপজেলা আ.লীগের মধ্যে আগে থেকে কোন্দলে দুই ভাগে বিভক্ত থাকায় প্রতিটি ইউনিয়নে নেতাকর্মীরা কেউ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। ইউপি নির্বাচন কে কেন্দ্র করে তৃর্ণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। উল্লাপাড়ার উধুনিয়া ইউনিয়নে ৪ জন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। এখানে রেজাউল করিম বাচ্চু (আ.লীগ), আব্দুল হামিদ সরকার (বিএনপি), আব্দুল জলিল (স্বতন্ত্র)। এই ইউপিতে আ’লীগ প্রার্থী রেজাউল করীম বাচ্চুর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন নিজ দলের আব্দুল জলিল (সতন্ত্র) এখানে নিজ দলের প্রার্থীর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় সুবিধায় রয়েছে বিএনপির প্রার্থী। তবে ভোটের মাঠে প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে আ.লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে। তবে আ.লীগ প্রার্থীর বিজয়ের সম্ভাবনা বেশি। বড়পাঙ্গাশী ইউনিয়নে ৬ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন মো. হুমায়ুন কবির লিটন (আ.লীগ), রেজাউল করিম (বিএনপি), বকুল হোসেন (জাতীয় পার্টি), আলতাব হোসেন (স্বতন্ত্র), জামাল প্রাং (স্বতন্ত্র) শাহানা বেগম (স্বতন্ত্র)। এখানে আ’লীগ দলীয় প্রার্থী হুমারুন কবীর লিটনের বিপক্ষে বিদ্রোহী হয়েছেন আলতাফ হোসেন। এখানে এই দুই প্রার্থীর মধ্যেই মূলত ভোট যুদ্ধ হবে। আ’লীগ সমর্থিত প্রার্থীর শক্ত অবস্থানে বিজয়ের সম্ভাবনা বেশি। উল্লাপাড়া সদর ইউনিয়নে ৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। এরা হলেন আব্দুস সালেক (আ.লীগ), আজিজুর রহমান মানু (বিএনপি), আবুল কালাম আজাদ (জাতীয় পার্টি), তৈয়ব আলী (স্বতন্ত্র)। এই ইউনিয়নে আ’লীগ প্রার্থীর বিপক্ষে কোন বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকায় ফুরফুরে মেজাজে আছে আ.লীগ। এখানে বিএনপি প্রার্থীর সাথে আ.লীগ প্রার্থীর ভোট যুদ্ধ হবে। এখানে আ.লীগ প্রার্থীর ভোটের অবস্থান শক্ত থাকায় বিজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। পুর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়নে ৫ জন প্রার্থী হয়েছেন। এরা হলেন আলহাজ গাজী খলিলুর রহমান (আ.লীগ), বুলবুল কবির (বিএনপি), রাশেদুল হাসান রাশেদ (স্বতন্ত্র), আলাউদ্দিন আল আজাদ (স্বতন্ত্র), শফিউল আলম (স্বতন্ত্র)। এই ইউনিয়নে আ.লীগ প্রার্থীর সাথে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে। তবে আ.লীগ প্রার্থীর বিজয়ের সম্ভাবনা বেশি। সলপ ইউনিয়নে ৪ জন প্রার্থী ভোটের মাঠে রয়েছে। এরা হলেন ইঞ্জিনিয়ার শওকাত ওসমান (আ.লীগ), নুরুল ইসলাম (বিএনপি), মোজাম্মেল হক (স্বতন্ত্র), নুর মোহাম্মদ (স্বতন্ত্র)। এই ইউনিয়নে আ.লীগ সমর্থিত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার শওকত ওসমান বর্তমান সংসদ সদস্যর ব্যক্তিগত সহকারী হওয়ায় বিগত দিনে এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাÐ বাস্তবায়ন করায় এখানে তিনি ভোটারদের মনজয় করেছেন। তাই এখানে তার বিপুল ভোটে বিজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। দুর্গানগর ইউনিয়নে ৬ জন প্রার্থী হয়েছেন। এরা হলেন আফছার আলী (আ.লীগ), সেলিম রেজা (বিএনপি), আব্দুর রহিম নান্টু (স্বতন্ত্র) আব্দুস সামাদ (স্বতন্ত্র), ইস্তেগফার হোসেন (স্বতন্ত্র)। এই ইউনিয়নে আ’লীগ প্রার্থী আফসার আলীর সাথে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুস সামাদের তীব্র প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে। ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থী। বড়হর ইউনিয়নে ৫ জন প্রার্থী হয়েছেন। এরা হলেন জহুরুল হাসান নান্নু (আ.লীগ), আলমগীর হোসেন (বিএনপি), ফরিদুল ইসলাম (স্বতন্ত্র) বুলবুল হোসেন (স্বতন্ত্র) মানছুর রহমান (স্বতন্ত্র)। এখানে আ’লীগ প্রার্থীর সাথে বিএনপির প্রার্থীর ভোট যুদ্ধ হবে। দুজনই শক্ত অবস্থানে রয়েছে। তবে এই ইউনিয়ে উল্লাপাড়ার সাবেক এমপি এম আকবর আলীর বাড়ি হওয়ায় ইউনিয়নটি বিএনপির শক্ত অবস্থান বলে বিবেচনা করা হয়। পঞ্চক্রোশী ইউনিয়নে ৪ জন প্রার্থী। এরা হলেন ফিরোজ হোসেন (আ.লীগ), জাহিদুল ইসলাম মিস্টার (বিএনপি) জহুরুল ইসলাম (স্বতন্ত্র) মামুন সরকার (স্বতন্ত্র)। এই ইউনিয়নে আ’লীগের প্রার্থী নবীন হওয়ায় শক্ত অবস্থানে বিএনপি। আ.লীগ প্রার্থীর বিপক্ষে বিএনপির প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম মিষ্টার এখানকার বিপুল ভোটে ২ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। এখানে তার বিজয়ের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। সলঙ্গা ইউনিয়নে ৩ জন প্রার্থী। এরা হলেন আকমাল হোসেন বাদশা (আ.লীগ), মতিয়ার রহমান সরকার (বিএনপি), শফিকুল ইসলাম (স্বতন্ত্র)। এখানে আ.লীগ প্রার্থীর বিপক্ষে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় সুবিধায় রয়েছে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মতিয়ার রহমান এই ইউপিতে আগে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং সলঙ্গা থানা বিএনপির তিনি সভাপতি। একক প্রার্থী হওয়ায় এখানে তার শক্ত অবস্থান। হাটিকুমরুল ইউনিয়নে ২ জন প্রার্থী। এরা হলেন হেদায়েতুল আলম (আ.লীগ), গোলাম আম্বিয়া (বিএনপি)। এখানে দু’জনের মধ্যে কঠিন ভোট যুদ্ধ হবে। বাঙ্গালা ইউনিয়নে ৬ জন প্রার্থী। এরা হলেন সোহেল রানা (আ.লীগ), রফিকুল ইসলাম (বিএনপি), ইউনুস আলী নসু (স্বতন্ত্র), আব্দুর রাজ্জাক (স্বতন্ত্র), হুমায়ুন কবির (স্বতন্ত্র)শহিদুল ইসলাম শহিদ (সতন্ত্র)। তবে এখানে আ’লীগ সমর্থিত প্রার্থী সোহেল রানার সাথে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী শহিদুল ইসলাম শহিদের প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে। এখানে আ’লীগ সমর্থিত প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সোহেল রানার বিজয়ের সম্ভাবনা বেশি। রামকৃষপুর ইউনিয়নে ৪ জন প্রার্থী। এরা হলেন রফিকুল ইসলাম হিরো (আ.লীগ), আবু বক্কার (বিএনপি), আলতাব হোসেন (স্বতন্ত্র), আমিরুল ইসলাম (স্বতন্ত্র)। এখানে আ’লীগ প্রার্থীর বিপক্ষে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় বিজয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে ভোটের মাঠে বর্তমান চেয়ার্যান বিএনপির আবু বক্কার ছিদ্দিক শক্ত অবস্থানে রয়েছে। মোহনপুর ইউনিয়নে ৭ জন প্রার্থী হয়েছেন। এরা হলেন মির্জা ইন্তেজার খালিদ শক্তি (আ.লীগ), শাহজাহান আলী (বিএনপি), জাহাঙ্গীর আলম (ইসলামী আন্দোলন), সোহেল রানা (জাতীয় পার্টি), হেলাল উদ্দিন (স্বতন্ত্র), আবুল কালাম আজাদ (স্বতন্ত্র), মোতালেব হোসেন (স্বতন্ত্র)। এখানে আ.লীগের প্রার্থীর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আবুল কালাম আজাদ মক্কা। তৃর্ণমূলে ভোটের মাঠে এখানে তার শক্ত অবস্থান। আ.লীগ প্রার্থীর সাথে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীও প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে। উল্লাপাড়ার নব গঠিত কয়ড়া ইউনিয়নে ৬ জন প্রার্থী হয়েছেন। এরা হলেন হেলাল উদ্দিন (আ.লীগ), নুরে আলম জুয়েল (বিএনপি), মোশারফ হোসেন (স্বতন্ত্র) রশিদুল হাসান (স্বতন্ত্র), ওসমান গনি (স্বতন্ত্র) ও আলহাজ গাজী খোরশেদ আলম (স্বতন্ত্র)। এই ইউনিয়নে মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে আ’লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী আলহাজ গাজী খোরশেদ আলমের সাথে আ’লীগ সমর্থিত প্রার্থী মো.হেলাল উদ্দিনের সাথে। বিদ্রোহী প্রার্থী খোরশেদ আলম পার্শ্ববর্তী পূর্নিমাগাঁতী ইউনিয়নে টানা ৪ বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান। এই ইউনিয়নে আ’লীগ প্রার্থীর সামনে বিজয়ে বড় বাধা বিদ্রোহী প্রার্থী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন