রাজধানীতে নিয়ম না মেনে নির্মিত সব বিল্ডিং ভেঙ্গে ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। অবৈধভাবে নির্মিত বাড়ি মন্ত্রীর হলেও রেহাই নেই। ভবন যদি কোনো ব্যক্তির আয়ের উৎস হয়, তা কোনোভাবেই মানুষের জীবনের চেয়ে বড় হতে পারে না বলেও জানান তিনি।
গতকাল শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি ইলিয়াস হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ খানের সঞ্চালনায় মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠিত হয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, কোন রকম দুর্নীতি ও অনিয়মের ভেতর দিয়ে ঢাকা মহানগরী কংক্রিটের জঞ্জাল শহরে পরিণত না হোক। মানুষের জীবন বিপন্ন না হোক। নিমতলী, চূড়িহাট্টা, বনানীর অগ্নিদূর্ঘটনার মতো ঘটনা আর না ঘটুক। অনুমোদিত নকশা, ফাঁকা জায়গা, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, গ্যারেজ ছাড়া ভবন নির্মাণ করতে দেয়া হবে না। পূর্বাচল, উত্তরার মতো জায়গায় নকশার বাইরে ন্যুনতম কিছু হতে দেয়া হবে না। সবার সহায়তায় আমরা পরিবেশবান্ধব আবাসন সারা বাংলাদেশে করতে চাই। রাতারাতি সব অনিয়ম দূর করতে পারব না, তবে আমরা চেষ্টা করছি।
বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকান্ড নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা তুলে ধরে রেজাউল করিম বলেন, সেখানে ৬২ জন কর্মকর্তাকেও চিহ্নিত করা হয়েছে। আমি শুধু বাড়িওয়ালাকে ধরব, আমার লোককে ধরব না, তাহলে তো জিরো টলারেন্স হল না। জিরো টলারেন্সের প্রশ্নে এই ৬২ জনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত সপ্তাহে রাজউককে নির্দেশ দিয়েছি। এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের পর রাজউকের ২৪টি দলে কাজ করে এক হাজার ৮১৮টি বাড়িতে (বহুতল ভবন) অনিয়ম পেয়েছে বলে জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, এসব বাড়ির অনেক মালিক অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি ক্ষমতায়, রাজনীতিতে, অর্থে, তাদের সম্পর্কে রিপোর্ট করা হবে অনেকেই ভাবেননি, কারণ তারা এত পাওয়ারফুল। এসব বিল্ডিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি, আপনারা আমাদের সাহায্য করেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজউককে নির্দেশ দিয়েছি, বলেছি একটা বাড়িও ড্র্যপ হবে না। যদি কোনো মন্ত্রী-এমপির বাড়িও হয়, আমার নিজের কোনো আত্মীয়-স্বজনও হয়, ড্রপ হবে না, আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, নতুন ঢাকায় যারা যেমন ইচ্ছে বিল্ডিং করেছেন। যেসব বিল্ডিং একেবারেই নিয়ম মেনে করা হয়নি সেসব বিল্ডিং আমরা ভেঙে দেয়া হবে। যেগুলো মোটামুটি অনিয়ম হয়েছে, যেগুলো আধুনিক ইমারত প্রযুক্তিতে টিকিটে রাখা যায় সে ব্যবস্থা করা হবে। আর যেগুলো একেবারেই নিয়ম মেনে করা হয়নি সেগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী উল্লেখ করে সিলগালা করে বেব।
তিনি বলেন, ভবন নির্মাণে ১৬টি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন লাগতো, সে কারণে সাধারণ মানুষকে টেবিলে টেবিলে ঘুরতে হতো। আমরা উদ্যোগ নিয়ে ১২টি বাদ দিয়েছি। আমরা আইন করে দিয়েছি ৫৩ দিনের মধ্যে প্ল্যান অনুমোদন হতে হবে, ভূমির ছাড় পত্র ৭ দিনের মধ্যে। জনগণের সেবার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মন্ত্রী বলেন, একটি বাড়িকেও আমরা আইনের বাইরে রাখতে চাইনা। হয়তো রাতারাতি পারব না, কারণ রাজউকের পরিসর অনেক বড়। পুরান ঢাকায় ৫০০ বছরের পুরনো বিল্ডিং আছে। এখন যদি চাই আজকে গিয়েই ভেঙ্গে ফেলব, তাহলে তা সম্ভব না। তবে এগুলোকে রিডেভলপমেন্ট করে বসবাস উপযোগী করতে চাই। সেজন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে বলেছি। কেউ দেড় কাঠা জমির ওপর ছয়তলা বিল্ডিং করেছে। আমরা বলেছি, আপনাদের সবাইকে নিয়ে প্রতিটি এলাকায় পরিবেশ বান্ধব বসবাস উপযোগী বিল্ডিং করে দেব। প্রাপ্য অনুযায়ী আপনারা ফ্ল্যাট পাবেন। অনেকেই সম্মতি দিয়েছে, হয়তো একটু সময় লাগবে।
তিনি বলেন, যেখানে যে অনিয়ম দেখবেন তা তুলে ধরবেন। তাহলে সমস্যা চিহ্নিত করতে আমাদের সুবিধা হয়। আমার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়ে রেখেছি যে, কোনো গণমাধ্যমে কোনো অনিয়মের নিউজ হলেই সেটা আমার কাছে উপস্থাপন করতে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন