শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সড়ক যোগাযোগে কার্যত সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন সিলেট

হিমশিম খাচ্ছে বিকল্প সড়ক, নষ্ট হচ্ছে পণ্য সামগ্রী, আটকে পড়াদের চরম ভোগান্তি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৯, ৬:০৩ পিএম

সড়ক যোগাযোগে কার্যত সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন সিলেট বিভাগ। নামমাত্র ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিকল্প পথে কিছু যানবাহন চলাচল করছে। ট্রাক চলাচল বন্ধ পুরোপুরি। শতশত পণ্যবাহী ট্রাক অবস্থান করছে মহাসড়কের ওপর। নষ্ট হচ্ছে ট্রাক বোঝাই কাঁচামাল। রাতে মহাসড়কে নিরাপত্তাহীনতায় থাকার অভিযোগও আছে ট্রাক চালকদের। পায়ে হেটেও মাইলের পর মাইল অতিক্রম করছে মানুষজন। সেতু মেরামতের কাজ ঢিলেঢালা ভাবে হচ্ছে এই অভিযোগ এনে চালকদের কেউ কেউ সেনাবাহিনীকে একাজে নিয়োজিত করলে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই কাজ শেষ হতো বলে মন্তব্য করেন। 

সরজমিন খোঁজখবরে জানা গেছে, সিলেট থেকে শাহবাজপুরে সেতুর গোড়া পর্যন্ত দীর্ঘ পথের মহাসড়কের ওপর অবস্থান করছে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যমুখী হাজার হাজার মালবোঝাই ট্রাক। সেতুর অন্যপাশে সরাইল বিশ্বরোড পর্যন্তও দীর্ঘ সিলেটমুখী ট্রাকের সারি। শনিবার সকালে সরাইলের ইসলামাবাদে কথা হয় কয়েকজন ট্রাক চালকের সঙ্গে। একটি কাভার্ড ভ্যানের নিচে ১০/১২ জন চালক আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খাচ্ছিলেন। এই গ্রামের বৃদ্ধ আবদুর রাজ্জাক এই খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। ট্রাক চালক মানিক মিয়া জানান, একদিন বিশ্বরোডে আর ৩ দিন গাড়ি নিয়ে অবস্থান করছেন ইসলামাবাদে। প্যাকেটজাত বিভিন্ন পানীয় ভর্তি কাভার্ড ভ্যান নিয়ে তারা যাচ্ছেন সিলেটে। বিকল্প রাস্তার একটিতে ট্রাক বিকল হয়ে পড়লে এবং অন্যটিতে ব্রীজ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তারা ট্রাক নিয়ে ওই দুই পথের কোনটি দিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছেননা। এসব পণ্য বোঝাই আরো ক’টি কাভার্ড ভ্যানের চালক মোতাচ্ছির আলী, আলীমউদ্দিন,শাহজাহান এভাবে মহাসড়কে পড়ে থাকায় তাদের নানা ভোগান্তি হচ্ছে বলেও জানান। মহাসড়কের এই স্থানে (ইসলামাবাদে) নিজেদের নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে জানান, ভয়ঙ্কর জায়গা এটি। রাতে ডাকাতের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। গ্রাম থেকে ডাকাতরা উঠে আসে বলে অভিযোগ তাদের। সে কারনে সারারাত জেগে থাকতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ে পুলিশ টহল দিয়ে চলে গেলে আবারো ডাকাতদের আনাগোনা শুরু হয়। এছাড়া গোসল-টয়লেট করার সমস্যাও হচ্ছে তাদের। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্বরোড গাড়ি পার্কিং করার পর পুলিশ সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। খোলা জায়গায় গাড়ি রেখে অন্য কোথাও যেতে পারছে না। সারারাত গাড়ির নিচে সজাগ বসে থাকতে হচ্ছে। চাপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ থেকে পেয়াঁজ ভর্তি ট্রাক নিয়ে এসেছেন জামান মিয়া। সিলেটের কালীঘাট তার গন্তব্য। জানান তার গাড়ি বোঝাই পেয়াঁজ পচে যাচ্ছে। দিনাজপুরের হিলি থেকে পেয়াজ নিয়ে সেতু পাড়ি দেয়ার অপেক্ষায় আবদুস সালাম। তিনিও জানান তার গাড়ি বোঝাই ৯ লাখ টাকার পেয়াজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কাঁচামাল বোঝাই গাড়ি চলতে দেয়া হচ্ছেনা।
সেতুর পূর্ব পাশের রেলিং ভাঙ্গা। এটি সংলগ্ন বেইলী মেরামত করা হচ্ছে। আর পশ্চিম পাশের বেইলী দিয়ে হালকা যানবাহন চলাচল করছে। কিন্তু গভীররাতে এই বেইলীর ওপর দিয়ে পণ্য বোঝাই ট্রাক চলাচল করে বলে অভিযোগ করেন ট্রাক চালকরা । তারা জানান দেড়-দু-হাজার করে টাকা নিয়ে ভাঙ্গা ব্রীজের একপাশের ওই বেইলী সেতু দিয়ে মাল বোঝাই ট্রাক চলাচলের এই সুযোগ দিচ্ছে এক শ্রেণীর পুলিশ। দেড়-দু-শো ট্রাক পার হচ্ছে প্রতিরাতেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া খাটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হোসেন সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে পুলিশের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, রাতে সরকারের এক সচিবকে বহনকারী বাস এই সেতু পাড়ি দিয়েছে। তখন আরো কিছু গাড়ি সেতু পাড়ি দেয়।
তিতাসের ওপরই নির্মাণাধীন আরেকটি সেতুর কাজ শেষ হতে বিলম্ব আর পুরাতন এই সেতুর মেরামত কাজের ধীরগতি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন গাড়ি চালকরা। সিলেট থেকে চট্টগ্রাম গামী একটি ট্রাকের চালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, সিলেট বিভাগের হাইওয়ে রোড এটা। আজকে ৫দিন ধরে ব্রীজ বন্ধ। আর্মিকে দায়িত্ব দিলে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই এই সেতু মেরামত হয়ে যেত। এদিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় পায়ে হেটেই চলছেন শতশত মানুষ। শাহবাজপুর থেকে রামপুর পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার পথ হেটে যাচ্ছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষজন।
উল্লেখ্য, গত ১৮ জুন বিকেলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইলের শাহবাজপুরে তিতাস নদীর ওপর সেতুটির চতুর্থ স্পেনের ফুটপাতসহ রেলিং ভেঙে পড়ে। এরপরই সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) সব ধরণের ভারী ও মাঝারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। সড়ক বিভাগ বিকল্প পথ হিসেবে চান্দুরা-আখাউড়া সড়ক দিয়ে কুমিল্লা-সিলেট এবং চট্টগ্রামের এবং সরাইল-নাসিরনগর হয়ে লাখাই এবং রতনপুর দিয়ে ঢাকা-সিলেট গন্তব্যের যানবাহন চলাচল করার নির্দেশনা দেয়। কিন্তু এ দু-পথের কোনটিতেই নানা সমস্যায় যানবাহন সেভাবে চলাচল করতে পারছেনা। ট্রাকতো নয়ই। ওইসব সড়কের বেহাল দশা আর ঝুঁকিপূর্ণ সেতু-কালভার্টের জন্যে গাড়ি চলাচল হয়ে পড়েছে সীমিত। তাতেও সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। যদি বিকল্প চান্দুরা-আখাউড়া সড়কের কথা বলা হয়; সাড়ে ৫ মিটার পাশের ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক পাড়ি দিতে সময় লেগে যাচ্ছে কয়েক ঘন্টা। তারপরও এই সড়ক দিয়ে ঢাকা-সিলেট এবং কুমিল্লা-সিলেট ও চট্টগ্রাম পথের যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করছে চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন