শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক সড়কে ২৭ কিলোমিটার এলাকার সংস্কার কাজ চলছে ধীরগতিতে। দফায় দফায় সময় বাড়িয়েও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ধুলা-বালি, পানি-কাদায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এসড়কে চলাচলকারী মানুষ। দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার পন্যবাহী যানবাহনগুলো এ অবস্থার মধ্য দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই সড়কটি ব্যবহার করে চট্রগ্রাম-খুলনা বরিশাল মংলা পায়রা বন্দর অঞ্চলে যাতায়াত করেছে।
শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কের সদর উপজেলার মনোহর বাজার হতে ভেদরগঞ্জের সখিপুর থানার নরসিংহপুর (আলুর বাজার) ফেরিঘাট পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়কের নাজুক অবস্থা দীর্ঘদিন থেকে। সদর উপজেলার মনোহর বাজার থেকে ভেদরগঞ্জ উপজেলার বালিবাড়ি পর্যন্ত সড়কের অংশ সংস্কার শেষ পর্যায়ে থাকলেও বাকি অংশে রয়েছে বড়বড় গর্ত। ফলে বৃষ্টির পানিতে ওই গর্ত কাদা ও পানি জমে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ কারণে গত ২০১৮ সালের এপ্রিল হতে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় ও বৃষ্টি কাদা না থাকায় ওই সড়ক দিয়ে পন্যবাহী ও যাত্রীবাহি যানবাহন চলাচল শুরু করেছে।
সওজ সূত্র আরো জানায়, দুটি গুচ্ছ প্রকল্পের মাধ্যমে মনোহর বাজার হতে নারায়নপুর পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সংস্কারে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। গত ১৮ মার্চ শহীদ এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা জেভি ও র্যাব আরসি, সরদার এন্টারপ্রাইজ জেভি নামের দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠাকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। আর ওই সময় নারায়নপুর হতে নরসিংহপুর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারের জন্য একজন ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়, কিন্তু ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি আর কাজটি করতে আগ্রহী হননি। তখন পুনরায় দরপত্র দিয়ে ইউনুছ এন্ড ব্রাদার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে গত ২৬ আগস্ট কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। ওই ১২ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করার জন্য ১৫ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে।
আগের দুটি কাজ শেষ করে সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সময় দেয়া হয় ছয় মাস। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ এর মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু তারা কাজ শেষ না করে সড়ক ও জনপথ বিভাগে সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করে। সওজ তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৭০ দিন সময় বাড়িয়ে দেয়। গত ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্প দুটির কাজ শেষ করার কথা ছিল। তারপরও মে ২০১৯ পর্যন্ত সম্পুর্ন কাজ শেষ করতে পারেনি।
এর মধ্যে র্যাব আরসি, সরদার এন্টার প্রাইজ জেভি সাজনপুর হতে নারায়নপুর পর্যন্ত যে অংশটির কাজ করছেন তার ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৩০ শতাংশের কাজ চলছে। জানতে চাইলে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক সিরাজ সরদার বলেন, সড়কের কাজটি করার জন্য নির্মাণ সামগ্রী প্রক্রিয়া করার জন্য একটি বড় জায়গা প্রয়োজন ছিল, জায়গাটি পেতে একটু সময় লেগেছে। তাছাড়া দুটি ঈদ ও নির্বাচনের কারণে শ্রমিক সঙ্কট ছিল। আগামী ঈদুল ফিতরের পূর্বেই কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
মনোহর বাজার হতে সাজনপুর পর্যন্ত সাড়ে সাত কিলোমিটার অংশের সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার বিটুমিনের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। বাকি দুুই কিলোমিটারের কাজ চলমান আছে। নারায়নপুর হতে নরসিংহপুর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার অংশের কাজ বন্ধ রয়েছে। ওই অংশের ১২ কিলোমিটার সড়ক খানাখন্দক বন্দ করা হয়েছে। সড়কের ওই অংশটি ধুলা বালুর পানি কাদার কারণে যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়নপুর গ্রামের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, রাস্তা জুড়ে ধুলাবালি। সড়কের পাশে বাড়ি হওয়ায় আমাদের সমস্যা বেশি। দরজা জানালা বন্ধ করে ঘরে থাকতে হচ্ছে। ধুলাবালির জন্য রাস্তা দিয়েও চলতে পারছি না।
এ প্রসঙ্গে শরীয়তপুর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সেলিম আজাদ খান বলেন, আমি নতুন এসেছি আসার পরই সড়কের কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য ঠিকাদারদের চাপ দিয়ে যাচ্ছি। জানুয়ারি মাসের মধ্যে সড়কের ১৫ কিলোমিটারের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা হয়নি। তবে ঈদুল ফিতরের পূর্বেই ঐ কাজ শেষ হবে। আর বাকি ১২ কিলোমিটার সড়কের কাজ যাতে দ্রুত শুরু করা যায় তার জন্য পানি সম্পদ উপমন্ত্রী মহোদ্বয়ের সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন