মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপ সম্পাদকীয়

খ্যাতিমান সাংবাদিক ও গবেষক মাওলানা মোহাম্মদ খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী

প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

॥ রুহুল আমিন খান ॥
অনন্য প্রতিভার অধিকারী মাওলানা মোহাম্মদ খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী যেমন একজন লব্ধ প্রতিষ্ঠ সাংবাদিক তেমনি তিনি প্রাজ্ঞ আলেমে দ্বীন, গবেষক ও লেখক। ইসলামী ইতিহাসে রয়েছে তাঁর অগাধ পা-িত্য। বয়স প্রায় ৮২ বছর হলেও এই জ্ঞানতাপস এখনো নিমগ্ন রয়েছেন জ্ঞান সাধনায়, লিখে চলেছেন অনবরত, জড়িত রয়েছেন সাংবাদিকতার মহান পেশায়।
মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী ইসলামের প্রথম খলীফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহুর বংশধর। তাঁর ৮ম পূর্বপুরুষ শেখ বসির উদ্দীন ধর্মপ্রচার উপলক্ষে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে এসে বসতি স্থাপন করেন। তারই বংশের এক শাখায় মাওলানা মোঃ আবদুল্লাহর ঔরসে ১৯৩৪ সালের ২২ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী। তাঁর ৪র্থ পূর্বপুরুষ তনু মিয়াজী ছিলেন একজন বিখ্যাত আধ্যাত্মসাধক।
মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার মধ্য দিয়েই শুরু হয় তাঁর বিদ্যার্জনের পথপরিক্রমা। ১৯৫৮ সালে তিনি ছারছীনা দারুচ্ছুন্নাত আলিয়া মাদরাসা থেকে পাস করেন ফাজিল এবং ১৯৬০ সালে কামিলে হাদীস পাস করেন ঢাকা আলিয়া মাদরাসা থেকে। এরপর উক্ত মাদরাসা থেকেই পাস করেন উর্দু আদিব। সেখানেই রিসার্চ স্কলার এবং কামিলে ফিকহ অধ্যয়ন করেন ১৯৬২-১৯৬৪ সালে।
উর্দু দৈনিক ‘পাসবান’ পত্রিকায় যোগদানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মাওলানা সিদ্দিকীর সাংবাদিকতা। ১৯৬৭ সালে তিনি সহকারী সম্পাদক হিসাবে যোগদান করেন মাওলানা আকরম খাঁ-প্রতিষ্ঠিত দৈনিক আজাদে। এর মাঝে পার্টটাইমার হিসাবে কাজ করেন দৈনিক পয়গাম পত্রিকাতেও।
১৯৮৯ সালে সহকারী সম্পাদক হিসাবে তিনি যোগদান করেন মাওলানা এমএ মান্নান প্রতিষ্ঠিত দৈনিক ইনকিলাবে এবং সেই থেকে অদ্যাবধি স্বপদে বহাল থেকে কাজ করে চলছেন দক্ষতার সাথে।
সাহিত্য ও সাংবাদিকতার জগতে মাওলানা সিদ্দিকীর বিচরণ ব্যাপক বিস্তৃত। ১৯৭৩ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দুই যুগেরও অধিক সময় ধরে তিনি ছিলেন বাংলাদেশ বেতারের আরবি অনুষ্ঠানের পরিচালক। ১৯৭৬ সাল থেকে প্রায় এক যুগ ধরে সম্পৃক্ত ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ত্রৈমাসিক আরবি গবেষণা পত্রিকা ‘মাজাল্লা’র সাথেও।
মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ এবং মাওলানা ওবায়দুল হকের যুগ্ম সম্পাদনায় তফসির ‘নূরুল কুলুব’-এর অনুবাদ একটি উল্লেখযোগ্য কীর্তি। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে তাঁর যৌথ সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় একটি বইও। একই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত হয় আরবি-বাংলা অভিধান ‘সীরতুন্নবী’ গ্রন্থের প্রথম খ-ের আংশিক অনুবাদ। এছাড়া তিনি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর জীবনের শেষ ভাষণের আরবি অনুবাদ করে ‘সাওতুল বাংলাদেশ’ নামে একটি পুস্তিকাও প্রকাশ করেন। জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের বিখ্যাত ‘শাতিল আরব’ কবিতার আরবি অনুবাদ করে বাগদাদের ‘আলিফ-বা’ সাময়িকীতে প্রকাশ করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি অধ্যাপক মনসুর উদ্দীনের ‘ইরানের কবি’ গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণের অন্তর্ভুক্ত ফারসি কবিতামালার সম্পাদনার দায়িত্বও পালন করেন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি বেশ কিছু মূল্যবান গ্রন্থও প্রণয়ন করেছেন মাওলানা সিদ্দিকী। তাঁর প্রণীত ‘মুসলিম উৎসব ঐতিহ্য’ এবং বহুসংখ্যক নিবন্ধে ইসলামী ইতিহাসে তাঁর অগাধ জ্ঞানের পরিচয় বিধৃত। জ্ঞান-সিন্ধুর তলদেশের ‘ইতিহাস-ঝিনুক’ থেকে দক্ষ ডুবুরির মত কুড়িয়ে এনেছেন তিনি অমূল্য মুক্তোরাজি এবং সুদৃশ্য মালিকায় তা গ্রথিত করে উপহার দিয়েছেন পাঠক সমাজকে। তারিখে ইসলাম, তারিখে আলমে ইসলামী (উর্দ্দু) ‘সন্দ্বীপে শেখ তনুমিয়াজির বংশধারা-দুই মহীরূহ’ গ্রন্থসহ অন্যান্য রচনাবলীতে রয়েছে তাঁর অনন্য প্রতিভার উজ্জ্বল স্বাক্ষর।
দু’বার তিনি যোগদান করেছেন বাগদাদে অনুষ্ঠিত পপুলার ইসলামী সম্মেলনে এবং ওমরা পালন ও জিয়ারত করেছেন মক্কা মুয়াজ্জমায় ও মদীনা মুনাওয়ারায়।
সদা হাস্যমুখ, মৃদুভাষী, সদালাপী, বন্ধুবৎসল, বিন¤্র, প্রচারবিমুখ, অনুপম চরিত্র-মাধুর্যে ভাস্বর জ্ঞান তাপস মাওলানা মোহাম্মদ খালেদ সাইফুল্লাহর পারিবারিক জীবনও সফল ও ছন্দময়। ৬ মেয়ে, ২ ছেলে ও সহধর্মিণীকে নিয়ে তাঁর সুখের সংসার। ছেলেমেয়েরা সবাই সুপ্রতিষ্ঠিত। আমরা তাঁর নিরলস, নিরোগ, কর্মমুখর আরও সুদীর্ঘ জীবন কামনা করি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন