মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে
আগামী ৪ জুন শেষ ধাপে বগুড়ার ৩টি উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের নির্বাচন। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ নয় বরং সর্বত্র শঙ্কা ও ভীতির ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ৩ উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের প্রার্থীরা নানা ভাবে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করলেও বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চরম আতংকের মধ্যে রয়েছেন। বগুড়া সদরের ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে অধিকাংশ ইউনিয়নেই শাসক দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু শাসক দলের প্রার্থীদের বিধি লংঘন বা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন ভুক্ত ভোগীরা। বগুড়া সদরের শাখারিয়া ইউনিয়ন পরিষদে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ইখলাস মোল্লা ও তার সমর্থকরা অভিযোগ করেছেন, তাদের ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও বর্তমান চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান সফিকের সমর্থকরা দিন রাত ২৪ ঘন্টা সশস্ত্র অবস্থায় হুমকি দিয়ে বলে বেড়াচ্ছে ‘এই নির্বাচনে ভোট করে কারো লাভ হবেনা ১ ভোট পেলেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীই এখানে বিজয়ী হবে।’ সম্প্রতি বিএনপি মনোনীত ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী ইখলাস মোল্লা এবিষয়ে বগুড়া পুলিশ সুপার অফিসে এবং নির্বাচন কমিশনে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করে এলাকায় ফেরার আগে বগুড়া শহরের ফুটপাথের একটি চায়ের স্টলে দাঁড়িয়ে চা’ পানের সময় তার উপর শারীরিক হামলা করা হয় বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাইমুর রাজ্জাক তিতাস নিজে এই হামলায় নেতৃত্ব দেয় এবং নিজের হাতেই ইখলাসকে মারধর করে। মারধর খাওয়ার পর ইখলাস বুঝতে পারেন কারো কাছে কোন নালিশ করে আর লাভ নেই, তার চেয়ে বরং নীরব থাকায় ভাল! বগুড়া সদরের লাহিড়ী পাড়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী জবেদ আলীর অভিযোগ, তার প্রতিপক্ষ তাকে ও তার সমর্থক ও কর্মীদের নির্বাচনী তৎপরতা চালাতেই দিচ্ছে না। ভয় দেখাতে তার সমর্থক এক প্রতিবন্ধী সমর্থকের দোকান ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছে, লুট করেছে দোকানের ক্যাশ ও মালসামানা। এই ঘটনার পর সর্বত্র এমন ভীতি ও আতংক তৈরি হয়েছে যে তার পক্ষের লোকজন ভয়ে ঘর থেকেই বের হতেই ভয় পাচ্ছে। তিনি তার ইউনিয়ন কে রীতিমত ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে। কৌশলগত কারণে বগুড়া সদরের রাজাপুর ও শাজাহানপুর উপজেলার গোহাইল ইউনিয়ন পরিষদের বিএনপি ঘরানার বর্তমান চেয়ারম্যানরা আগে ভাগেই আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে লীগের প্রার্থী হয়ে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন। শাজাহানপুর প্রার্থীদের প্রচারণায় মুখরিত বগুড়া সদর, শাজাহানপুর ও সোনাতলা উপজেলার একটি ইউনিয়নসহ ২১টি ইউনিয়ন। ছোট ছোট মিছিলে মুখরিত থাকছে এলাকার হাট-বাজার আর রাস্তাঘাট। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা দিনভর ব্যস্ত সময় পার করছেন। এলাকার উন্নয়নে প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। ভোট উৎসবে মেতে উঠেছে গ্রমের নারী পুরুষ। সাথে তাদের শিশু সন্তানরাও। এদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা আশা করছেন দলীয় প্রতীকের কারণে তারাই বিজয়ী হবেন। ওই এলাকায় সরকার দলীয় সাংসদ থাকায় উন্নয়ন কাজ করা তাদের পক্ষে সহজ হবে। এছাড়া দীর্ঘদিন পর ধানের শীষ প্রতীকে ভোট হওয়ায় ভোটাররা বিএনপি প্রার্থীদের বিজয়ী করবেন বলে আশা বিএনপি দলীয় প্রার্থীদের। বগুড়া সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪৪ জন, নারী সদস্য পদে ১০৭ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩৩৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শাজাহানপুর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৩১ জন। সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১০২ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ২৭৬ জন। অপরদিকে সোনাতলা উপজেলার বালুয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৬জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটের দিন শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ করা যাবে এমন আশা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। এজন্য তারা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বলে জানান। ৪ জুন নির্বাচনে বগুড়া সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ৯৯টি ভোট কেন্দ্রে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৯৪ জন ভোটার এবং শাজাহানপুর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ৮৫টি ভোট কেন্দ্রে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৪৪৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এছাড়াও সোনাতলা উপজেলার একটি ইউনিয়নের ৯টি ভোট কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৪৬৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন