রাঙ্গামাটি জেলা সংবাদদাতা
রাঙ্গামাটির ৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনী মাঠে আতঙ্কে ভুগছে বড় দুটি জাতীয় রাজনৈতিক দল। শেষ মুহূর্তে হয়তো নির্বাচন থেকে সরে আসতে পারে এমনটাই ধারণা করছেন রাঙ্গামাটির অভিজ্ঞ মহল। কেননা, একদফা ভোট পেছানোর পরেও বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি সব ইউপিতে প্রার্থী দিতে পারেনি। এছাড়া যেসব কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছে সেসব কেন্দ্রের মধ্যে অধিকাংশ কেন্দ্রের প্রার্থীরা ইউনিয়ন ছেড়ে রাঙ্গামাটি শহরে অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের অভিযোগ, ভয়ভীতির কারণে তারা এলাকায় যেতে পারছেন না। অপরদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের না পেয়ে তাদের পরিবার-পরিজনকে নানাভাবে হুমকি ও অস্ত্রের ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। এদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দ্রুতই নির্বাচন পরিবেশ সৃষ্টির জন্য নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে বারবার তাগিদ দিলেও কার্যত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি প্রশাসন। তাই শেষ মুহূর্তে হয়তো নির্বাচন থেকে সরে আসতে পারে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল। অন্যদিকে পাহাড়ের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বিএনপি চাপে আছে দুমুখী। একদিকে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ভয়ে নির্বাচনে সব কেন্দ্রে প্রার্থী দিতে পারেনি বিএনপি। আর যেসব কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছে সেসব কেন্দ্রের আওয়ামী লীগ ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জেএসএস ও ইউপিডিএফের চাপে পিষ্ট হয়ে রয়েছে। তৃতীয় ধাপের নির্বাচন ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বড় দলগুলোর দাবির মুখে পিছিয়ে যায় রাঙ্গামাটির ১০ উপজেলার নির্বাচন। এখন এসব ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা সর্বশেষ ধাপ আগামীকাল ৪ জুন। তবে এবারও আতঙ্কমুক্ত হয়নি নির্বাচনের মাঠ। এরই মধ্যে নানিয়ারচর, বাঘাইছড়িসহ কয়েকটি ইউনিয়নে সন্ত্রাসী ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। রাঙ্গামাটি জেলার ৪৯টি ইউনিয়নের সবগুলোতে কেবল আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়েছে। তবে এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৪৪টি, বিএনপি ২২টি এবং জাতীয় পার্টি প্রার্থী দিয়েছে ৪টিতে। বড় দুই দলের একই অভিযোগ, ভয়ভীতির কারণে তাদের প্রার্থীরা এলাকায় যেতে পারছেন না। তার মধ্যে মামলার কারণে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন স্থগিত করে দিয়েছেন আদালত। রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর বলেন, ইতোমধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার শুরু হয়ে গেছে। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, জেএসএস, ইউপিডিএফ ও সংস্কার গ্রুপের সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগের দলীয় চেয়ারম্যান সদস্য প্রার্থীদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। সন্ত্রাসীদের হুমকির কারণে সব নির্বাচনী ইউনিয়নে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেন। যে কারণে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৯৮ জন মহিলা ও পুরুষ সদস্য নির্বাচিত হন। এতে প্রমাণিত হয় যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা শাখা যা অশঙ্কা প্রকাশ করেছে তা-ই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। আগামী ১ জুনের মধ্যে যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয় সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে যেতে বাধ্য হবে। রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দীপেন তালুকদার বলেন, আইনের শাসন না থাকাতে আমাদের প্রার্থীদেরকে হুমকি দেয়ার ফলে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন না। নির্বাচনের আগে পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী গ্রেফতারে অভিযান চালানোর দাবি জানিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তবে এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো পদক্ষেপই নেয়নি বলে তারা হতাশ। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি না হলে প্রয়োজনে নির্বাচন বর্জনের হুমকি দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পনির বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক। রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বলেন, আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছাব আদৌ আমরা নির্বাচন করব কি করব না। কারণ যদি এ অবস্থা চলতে থাকে সেক্ষেত্রে কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন সম্ভব বলে আমি মনে করি না। এ ব্যাপারে আঞ্চলিক দলগুলোর কোনো বক্তব্য পাওয়া না গেলেও স্থানীয় প্রশাসন বলছে, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা। রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে কেউ যাতে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা- করতে না পারে, কোনো রকমের অবৈধ কার্যক্রম করতে না পারে সে জন্য পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সব ব্যবস্থা নিয়েছি। তবে শেষ পর্যন্ত বড় দলগুলোকে নির্বাচনের মাঠে ধরে রাখা যাবে কি-না এই কেবল অপেক্ষা সেটাই দেখার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন