শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

মাদরাসা ছাত্র সম্পর্কে আমার ধারণা ভুল ছিল -মনিরুল ইসলাম

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৯, ৯:৩১ পিএম

ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, আমার ধারণা ছিলো মাদরাসার ছাত্ররা একটু ভিন্ন ধরণের লাইফ লিড করে। ইন্টারনেটের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নেই। আমার ভুল ধারণা ছিলো। আমি ভুল জানতাম। তিনি বলেন, আমি মনে করতাম ইন্টারনেটের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নেই। সাইবার স্পেস কি জিনিস এটা বুঝে না। কিন্তু গত ৬ মাস ধরে ইউএনডিপির সহায়তায় আমরা একটা কাজ করেছিলাম সচেতনতা বৃদ্ধি নিয়ে। অনেকগুলো ওয়ার্কশপ, সেমিনার করেছি। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা এসেছিলো। তখন আমি জানতে পারি মাদরাসার ছাত্রদের নিয়ে আমরা যেটা মনে করে, সেটা ভুল ধারণা ছিলো। আমি ভুল জানতাম। রোববার (৩০ জুন) দুপুর রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে মুভ ফাউন্ডেশনের ‘বাংলাদেশে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাক্ষরতা’র গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ ও সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

মনিরুল ইসলাম বলেন, এ জরিপটি যদি ৬ মাস আগে পরিচালনা করা হতো আমি খুব আশ্চর্য হতাম। কেননা ৬ মাস আগে আমার ধারণা ছিলো, মাদরাসার ছাত্ররা একটু ভিন্ন ধরণের লাইফ লিড করে। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে রেডিক্যাল ছবি, ভিডিও, তথ্যের জন্য আমরা কিছু লোককে সার্বিলেন্সের আওতায় আনি। এরপর কাউকে আমরা নিয়ে আসে, সেখানের অবিজ্ঞতা হচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক জানেই না যে এটা অপরাধ। ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, কিন্তু সাইবার আইনে যে অফেন্স এটা তারা জানে না। কেউ কেউ কৌতুহল বশত: লাইক, শেয়ার দিয়েছে বা কমেন্ট করেছে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ফেসবুকে মানুষ বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আমাদের সিটিটিসি’তে ৪টা বিভাগ আছে, এরমধ্যে সাইবার ক্রাইম ডিভিশন রয়েছে। তিনটা ডিভিশনে এক মাসে যে লোকজন আসেন, সাইবার ক্রাইম ডিভিশনে তিনদিনে সে তার চেয়ে বেশি মানুষ সেবা নিতে আসেন। তারা সাইবার ক্রাইমের ভিকটিম। এরমধ্যে ৯০ শতাংশ মানুষ আসেন ফেসবুকে হয়রানির শিকার হয়ে।

সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার গোলাম রহমান বলেন, মাদরাসা শিক্ষাকে আমরা সাধারণ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না। কিন্তু মাদরাসা শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই মনে করেন মাদরাসার শিক্ষার্থীরা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন। এ জায়গায় আমাদের চিন্তা করা প্রয়োজন। আগে গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হতো না। ইদানিং ধর্মী ইস্যু নিয়ে টকশো হয়, আলোচনা হয়। মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জীবন আচার পরিবর্তন হয়েছে। আধুনিক জীবন ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছি। মাদরাসার শিক্ষার্থীরা বিচ্ছিন্ন নয়। তারাও ইন্টারনেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারা বুঝে শুনে চিন্তা করে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করে কি না। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের দায়িত্ব রয়েছে। শিক্ষার্থীদের বোঝানোর দরকার রয়েছে। মাদরাসা শিক্ষা সমাজে বড় ধরণের অংশগ্রহণ রয়েছে। এটাকে বিচ্ছিন্ন করে দেখার সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ কানাডার হাইকমিশনের কন্সুলার ব্রাডলি কোটস বলেন, স্যোশাল মিডিয়ার অনেক ধরণের উপকারিতা আছে। কিন্ত একই সঙ্গে সহিংসতাও ছড়াতে পারে। এটি নেতিবাচক দিক। সকলের সচেতন থাকলে ইতিবাচক দিকগুলো শক্তিশালী হবে।

ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা আলতাফ হোসেন বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা আমাদের অনুভূতি শেয়ার করি। এটা স্বাভাবিক বিষয়। তবে নেতিবাচক দিকও রয়েছে। না বুঝে স্পর্শকাতর বিষয়গুলোও অনেকে শেয়ার করে। এজন্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে হবে । না হলে সাইবার অপরাধ বেড়ে যাবে। ফেক আইডি’র মাধ্যমে অপপ্রচার হচ্ছে। এক ধরণের ব্লগার আছেন যাদের টার্গেট ইসলাম ধর্মকে হেয় করে লেখা। তারা মহানবীকে (স.) নিয়ে কুরুচিপূর্ণভাবে লিখছে। এসব লেখে পশ্চিমা দেশে যাওয়ার উদ্দেশ্যও থাকে অনেকের।

বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) মহাপরিচালক জোবায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, দেশের সম্প্রতি বজায়ে রাখতে কেউ এগিয়ে আসুক এটা আমার প্রত্যাশা। জরিপের তথ্য একটু এদিক সেদিক হতে পারে। কিন্তু এটাই বাস্তবতা। সন্ত্রাস ইসলাম সমর্থন করে না। মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়ে গেছে। একটা সাধারণ শিক্ষা, অন্যটা মাদরাসা শিক্ষা। এ বিভেদ ব্রিটিশ আমলে শুরু হয়েছে। অথচ আগে এক সময় অন্য ধর্মের মানুষও মাদরাসায় পড়তেন। এখন দুটি শ্রেণি হয়ে গেছে। একটা সমন্বয় প্রয়োজন। স্যোশাল মিডিয়ায় আমরা উপকৃত হচ্ছি। আবার লাগামহীন তথ্য প্রচার হচ্ছে, সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এটা নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। আমি ৭০ বছর বয়সে এসেও ইন্টারনেট ব্যবহার করি। কিন্তু এখন ইন্টারনেটে ভাইরাস ঢুকে গেছে, এ ভাইরাস মুক্ত করতে হবে। এ কাজ প্রশাসনকে করতে হবে।

অনুষ্ঠানে মুভ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট সাইফুল হক পরীক্ষামূলক গবেষণার সারসংক্ষেপে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৪২ শতাংশ কওমি ছাত্র এবং ৫৮ শতাংশ আলিয়ার ছাত্র-ছাত্রী মোবাইল ফোনে এবং ৫ শতাংশ কওমি ছাত্র ও ১০ শতাংশ আলিয়া ছাত্র-ছাত্রী কম্পিউটারে নেট ব্যবহার করেন। জরিপে অংশগ্রহণকারী কওমি ছাত্রীদের কেউ কম্পিউটার ব্যবহার করার সুযোগ পান না, যদিও তাদের শতকরা ৭০ ভাগ মোবাইল বা ট্যাব ব্যবহার করে থাকেন। এর মধ্যে মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ কওমিছাত্রীর ইন্টারনেট সংযোগ আছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন