বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যার প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ ওরফে নয়ন বন্ডসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা-বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিনজন নিহত হয়েছে।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যা থেকে আজ মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত এসব ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- বরগুনার প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি নয়ন বন্ড, কক্সবাজারের টেকনাফের মহেশখালিয়াপাড়া নৌকা ঘাট এলাকায় তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি হামিদ (৪৫) ওরফে প্রকাশ হামিদ মেম্বার ও গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সিনাবহ এলাকায় লিয়ন সিদ্দিকী (৩৮) নামে এক শীর্ষ সন্ত্রাসী।
বরগুনার এসপি মো. মারুফ হোসেন জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ভোর রাত ৪টার দিকে বরগুনা সদর থানার পুলিশ নয়ন বন্ডকে গ্রেফতারের জন্য পূর্ব বুড়ির চর গ্রামে যায়। ওই গ্রামের খলিল মাস্টারের বাড়ির সামনে গেলে নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টাগুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলে নয়ন নিহত হন। হামলায় বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাহান মিয়াসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হন।
তিনি বলেন, আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর ঘটনাস্থল থেকে তিনটি চাপাতি, একটি পিস্তল ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
নয়ন বন্ডের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে।
এ সময় বরগুনা সরকারি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী আয়েশা আক্তার মিন্নি তার স্বামীকে রক্ষার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালান। কিন্তু সন্ত্রাসীরা তাকে (রিফাত) উপর্যুপরি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়। পরে ওইদিন বিকেল ৩টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়।
জনবহুল এলাকায় এমন নৃশংস হামলার ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে দেশেজুড়ে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভের ঝড় ওঠে।
কালিয়াকৈর থানার ওসি আলমগীর হোসেন মজুমদার জানান, জয়দেবপুর থানার একটি হত্যা ও মাদক মামলায় সোমবার রাতে পুলিশ লিয়নকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী এলাকা থেকে আটক করে। পরে তার দেয়া তথ্যমতে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ তাকে নিয়ে অস্ত্র এবং মাদক উদ্ধারে কালিয়াকৈরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়।
একপর্যায় তারা সিনাবহ এলাকায় পৌঁছালে আগে থেকে ওৎপেতে থাকা লিয়ন বাহিনী পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোড়ে। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে পালিয়ে যাওয়ার সময় লিয়ন গুলিবিদ্ধ হয়। পরে লিয়ন বাহিনী অন্য সদস্যরা পালিয়ে গেলেও সেখান থেকে একটি পিস্তল ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। আহত অবস্থায় লিয়নকে উদ্ধার করে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি আরও জানান, নিহত সন্ত্রাসী লিয়নের বিরুদ্ধে খুন, সন্ত্রাস, মাদক ও চাঁদাবাজিসহ ১৭টি মামলা রয়েছে।
টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ জানান, গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় মাদকদ্রব্য উদ্ধার অভিযানে ১২টি মামলার আসামি ও তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারী হামিদ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তার স্বীকারোক্তি মতে আজ মঙ্গলবার ভোর রাতে টেকনাফ সদরের মহেশখালিয়াপাড়া এলাকায় অস্ত্র উদ্ধারে যায় পুলিশ। কিন্তু পুলিশ ওইস্থানে পৌঁছালে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তার সহযোগী অস্ত্রধারী ইয়াবা ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলে উপ-পরিদর্শক (এসআই) স্বপন চন্দ্র দাশ, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) কাজী সাইফ উদ্দিন, কনেস্টেবল রয়েল বডুয়া আহত হন।
একপর্যায়ে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ ৫০ রাউন্ড পাল্টা ছোড়ে। একপর্যায়ে তারা পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থল থেকে হামিদ প্রকাশ হামিদ মেম্বার প্রকাশ হামিদ ডাকাতকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে ভোর পৌনে চারটার দিকে দায়িত্বরত চিকিৎসক হামিদকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে ঘটনাস্থল থেকে চারটি এলজি, ১৭ রাউন্ড শর্টগানের তাজা কার্তুজ, ২১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা এবং ছয় হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
ওসি জানান, নিহত হামিদ মহেশখালিয়াপাড়ার মৃত আবুল হাসিমের ছেলে। নিহত হামিদ একজন চিহ্নিত মাদক কারবারী। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য, মানবপাচার,অস্ত্র, নারী ও শিশু নির্যাতনসহ ১২টি মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন