নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে
চারিদিকে বাহারি ফলের মেলা। সর্বত্র মৌ মৌ গন্ধ। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, আনারসসহ বিভিন্ন জাতের ফলে বাজার ভরে গেছে। বিশেষ করে সৈয়দপুর বাজারে এসেছে লিচু, কাঁঠাল, আমসহ আরো কিছু মিষ্টি ফল। দামও নাগালের মধ্যে। বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। অতিথি আপ্যায়নেও কদর বেড়েছে ফলের। সরেজমিন দেখা গেছে, সৈয়দপুর শহরের বিভিন্ন ফলের বাজার এখন বেচাকেনার হিড়িক। অলিগলিতে বেশ উৎসাহের সঙ্গে ফল বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। ফুটপাতে ও ফল বিক্রির হিড়িক। লিচু চাষি আর ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সব ফল এনে বাজারে ও পাইকারিভাবে বিক্রি করছেন। বিশেষ করে পাইকারি ক্রেতার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় লিচু বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ। আর এ কারণেই ওইসব এলাকার লিচু চাষি বা ব্যবসায়ীরা সঠিক দাম পেতে এবং অল্প সময়ে বিক্রির জন্য ট্রাক, পিকআপ, নছিমন ও রিকশা-ভ্যান ও ট্রেনে লিচু নিয়ে আসছেন সৈয়দপুরে। আশপাশের চাষিরা লিচু আনছেন ভ্যান, পিকআপে আর বাইরের চাষিরা বাহন হিসেবে ব্যবহার করছেন ট্রেন আর পিকআপ। সৈয়দপুরের লিচু ব্যবসায়ী জানান, তারা প্রায় ৩০ বছর ধরে লিচুর ব্যবসা করছেন। এ বছরও বদরগঞ্জ, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, তারাগঞ্জ, পঞ্চগড়, চিরিরবন্দর থেকে লিচু কিনে ব্যবসা শুরু করেছেন। তবে সব ধরনের লিচুর মধ্যে দিনাজপুরে লিচু কদর বেশি। বর্তমানে রাজশাহী ও ঈশ্বরদীর লিচু পাইকারিভাবে বিক্রি করছে। তারা জানান, সকাল ৬টার পর লিচু বিক্রির মধ্যে দিয়ে মৌসুমি ফলের বিক্রি শুরু হয়। প্রতিদিন ব্যবসায়ীরা সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত প্রতি হাজার লিচু ২ হাজার থেকে ২২০০ টাকায় কেনেন। আর ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। তারা ৩ ঘণ্টা ৩০ থেকে ৫০ হাজার লিচু পাইকারি বিক্রি করেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার লিচুর ভালো ফলন হয়েছে এবং দাম পেয়ে কৃষকরাও খুশি বলে জানান। খুচরা লিচু ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী, জনি, মুন্না, জাহিনুর, সাজ্জাদ, ফুল মোহাম্মদসহ কয়েকজন জানান, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৮ থেকে ১০ হাজার লিচু বিক্রি করেন তারা। ১০০ লিচু ৩২০ থেকে শুরু করে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। সৈয়দপুর আড়তের মালিক ভুলু, গিয়াস, মাসুদ, লেবু, ফারুক ও বুদু জানান, গতবারের তুলনায় চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং রোগ-বালাই কম থাকায় ৩ গুণ লিচু তাদের আড়তে এসেছে। লিচুর আমদানি যেমন বেড়েছে তেমনি ক্রেতাদেরও কমতি নেই। দিলালপুরে লিচু বাগান মালিক হুমায়ুন জানান, তার বাগানের লিচু পাইকাররা আগাম টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছেন। লিচুর সবচেয়ে বড় শক্র বাদুর ও পাখি। এসব থেকে বাঁচাতে বাগান পাহারা দেয়ার জন্য মজুরী দিয়ে শ্রমিক রাখতে হয়। একই কথা বলেন, ওই এলাকার হবিবর রহমান। তিনি জানান, দিনাজপুরের লিচুর চাহিদার পরেই দিলালপুরের লিচুর চাহিদা বাজারে থাকে। অনেক পাইকার এসব লিচু কিনে দিনাজপুরের বলে চালিয়ে দেন। তবে লিচু বাগান মালিকরা বেশি দাম না পেলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতি ১শ’ লিচুতে লাভ করছেন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন