কামরুজ্জামান টুটুল, হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) থেকে
সরকারের সমবায় মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুযায়ী নিবন্ধন নিয়ে গ্রাহকের কোটি কোটি হাতিয়ে নিয়ে সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এক এক করে পালিয়ে যাচ্ছে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা বাজার এলাকার মাল্টিপারপাসগুলো। সরকারের নিবন্ধনের তালিকায় বাকিলা বাজার এলাকায় কমপক্ষে ১২টি মাল্টিপারপাসের নাম থাকলে গত অর্থ বছরে মাত্র ৩টি মাল্টিপারপাস অডিটের আওতায় এসেছে। বাকি মাল্টিপারপাসগুলোর হদিস নেই বলে খোদ উপজেলা সমবায় কার্যালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে পালিয়ে যাওয়া মাল্টিপারপাসগুলোর সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের নামে সংশ্লিষ্ট থানায় ডায়েরি করার জন্য সম্প্রতি সরকার থেকে নির্দেশনা এসেছে বলে ইনকিলাবকে জানিয়েছেন উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আলো রানী সরকার। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, হাজীগঞ্জের বাকিলা বাজার এলাকায় নিবন্ধন নেয়া মাল্টিপারপাসগুলো হলো বাকিলা সততা ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, বেকারত্ব দূরীকরণ বহুমুখী সমবায় সমিতি, বিজয় মাল্পিপারপাস কো-অপারেটিভ সমবায় সমিতি, সেঞ্চুরী মাল্টিপারপাস, পল্লী উন্নয়ন সমবায় সমিতি, ইউনাইটেড সঞ্চয় ঋণদান সমাবায় সমিতি, এভারগ্রিন সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি, ফেসো ব্যবসায়ী বাকিলা, বাকিলা সিএনজি সমবায় সমিতি, মনিহার সঞ্চয় ঋণদান সমিতি, বাকিলা স্বপ্ননীড় সমবায় সমিতি, বাকিলা, যুবধারা মাল্পিপারপাস সমবায় সমিতি। উপরোক্ত সমবায় সমিতিগুলোর মধ্যে সর্বশেষ ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে সরকারি অডিট হয়েছে মাত্র ৩টি প্রতিষ্ঠানের। আবার নিবন্ধন ছাড়া এবং ভিন্ন খাতে নিবন্ধন এনে দেদারসে ব্যবসা করে পালিয়ে গেছে বেশ কয়েকটি মাল্পিপারপাস। ১২টি নিবন্ধিত সমাবায়ী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৩টি প্রতিষ্ঠানের অডিট ২০১৩-২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়। অডিট হয়ে যাওয়ার পরে সর্বশেষ চলিত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে নিরুদ্দেশ হয় বাকিলা বাজার এলাকার বেকারত্ব দূরকরণ বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি ইসমাঈল হোসেন। এই সমবায়ের সাধারণ সম্পাদক সভাপতি ইসমাঈলের স্ত্রী বিউটি বেগম। বেকারত্ব দূরকরণ বহুমুখী সমবায় সমিতিতে চাকরি করেছেন মিজানুর রহমান জানান, ফ্রেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখে অফিস বন্ধ রেখে চাবি নিয়ে সভাপতি ইসমাঈল হোসেন নিরুদ্দেশ হন আর হদিস নেই। আমরা যারা অফিসে বা মাঠে কাজ করে এফডিআর আর ডিপিএসের টাকা সংগ্রহ করেছি গ্রাহকরা এখন আমাদেরকে খোঁজে। এ সমবায়ের হেলাল উদ্দিন জানান, আমার মাধ্যমে ডিপিএস ও এফডিআর মিলিয়ে মাঠ থেকে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা এসেছে এখন আমি কি করবো ঠিক বুঝতে পারছি না। গ্রাকদের চাপের পাশাপাশি গত কয়েক মাস ধরে মালিক বকেয়া বেতন দিচ্ছে না, বিদায় ও দিচ্ছে না। বেকারত্ব দূরকরণ বহুমুখী সমবায় সমিতিতে ডিপিএস ও এফডিআর এর মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা জমা রেখেছেন স্থানীয় ফুলছোঁয়া গ্রামের সাহেদা বেগম। একই সুরে একই কথা বলছেন একই গ্রামের কুলসুমা বেগম। এরা আরো বলেন, গত ফেব্রুয়ারির পর থেকে অফিস বন্ধ থাকার কারণে লাভ কিংবা মূল টাকা কিছুরই হদিস পাইনি। অপরদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, বেকারত্ব দূরীকরণ সমবায় সমিতির অডিট হিসেব অনুযায়ী মূলধনের পরিমাণ প্রায় ২০ লাখ টাকা হলেও এদের মূল মূলধন ছিল প্রায় ২ কোটি টাকা। এরমধ্যে এদের প্রতিটি এফডিআরের মেয়াদ ছিলো ৩ বছর কিন্তু মাত্র ২ বছর অতিবাহিত হবার আগেই সভাপতি নিজেই পুরো টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যান। অপরদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাকিলা এলাকার বন্ধ হয়ে যাওয়া মাল্টিপারপাসগুলো মধ্যে বিজয়, সেঞ্চুরীহ ২/৩ প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহককে কিছু টাকা বা জমি দিয়ে ম্যানেজে রেখেছে আর অধিকাংশ মাল্পিপারপাস গ্রাহককে পাত্তাই দিচ্ছে না। আবার এই সকল সমবায়গুলো চলতো বা চলছে পরিবার বা বন্ধুবান্ধব কেন্দ্রিক। যার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানে কাজ না করে ও পদের কারণে মাসের পর মাস বেতন ভাতা নিয়ে নিতো পদধারী সদস্যরা। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আলো রানী সরকার ইনকিলাবকে বলেন, বাকিলা এলাকায় নিবন্ধিত অধিকাংশ মাল্পিপারপাসগুলো বন্ধ হয়ে গেছে আর অফিসিয়ালভাবে অনেকগুলোর খোঁজ নেই। বিনিয়োগকারীদের কোটি কোটি টাকা কিভাবে ফেরত পাবে এ বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহক চাইলে নিজে থানায় মামলা করলে আমরা গ্রাহককে সহযোগিতা করবো, আবার আমাদেরকে লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা পুলিশের মাধ্যমে আইনিভাবে গ্রাহকের টাকা উত্তোলন করে দেবো। সর্বশেষ সরকারি বিধি অনুযায়ী গ্রাহকের টাকা পাওয়ার বিষয়ে সরকার থেকে বলা হয়ে স্ব-স্ব মাল্পিপারপাসের দায়িত্ববান কর্মকর্তাগণের নামে আমাদের মাধ্যমে থানায় অভিযোগ দিতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন