শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাধীনতা ও সংস্কৃতি

প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আল মুজাহিদী
“ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে মনে হয়েছিল জীবন আনন্দময়। ঘুম ভেঙে দেখলাম জীবন এক কর্মযজ্ঞ। তারপর কাজে নেমে দেখি তা আনন্দ ছাড়া কিছু নয়।” আর এর বৈপরীত্যের বৈতরণীতে গা ভাসিয়ে দিয়ে আমরা যারা আলস্যে কাল কাটাই, ঘর-বাড়ির ক্ষমতা কেবল হাতে কেন্দ্রীভূত করে রাখতে প্রয়াস করি। রাষ্ট্রীয়ভাবেও এমনটা ঘটে অহরহ। সেরকম একটা উদ্ধৃতি এখানে লক্ষণীয়।
The history of liberty is the history of the limitations of Government power, not the increase of it, when we resist the concentration of power we resist the powers of death. Concentration of power precedes the destruction of human liberties.
‌President Woodrow Wilosn.

অর্থাৎ উড্রো উইলসন যথার্থই বলেছেন:
স্বাধীনতা ইতিহাস সরকারের ক্ষমতা বাড়ানোর নয়, সীমিত করার ইতিহাস। ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণ প্রতিহত করে আমরা মৃত্যুর ক্ষমতাকে রোধ করেছি। মানব স্বাধীনতা বিলুপ্তির আগে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ঘটে।
অর্থাৎ কিনা গণতন্ত্রের কবর রচনা করা ক্ষমতাকে কেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে। গণতন্ত্রের শবদেহ পুড়িয়ে ছাই ভস্ম উড়িয়ে দেয়া। ঊর্ধ্বলোকে, শূন্যমার্গে।
গণতন্ত্র সম্পর্কিত দায় প্রথমত, সর্বতোভাবে বর্তায় গণতন্ত্রীদের স্কন্ধে। সে স্কন্ধ যাতে করে কোনোভাবে ন্যুব্জ, খর্বখ-, ভেঙে-চুরে না যায়, সেটা দেখা, জানা, বোঝা, অন্তর্গত দৃষ্টিতে অনুভব, উপলব্ধি করাও তাদেরই দায়। এই দায় অস্বীকার, অবজ্ঞা করার উপায় তাদের একেবারেই নেই।
“যদিও সন্ধ্যা আসিছে মন্দমন্থরে সব সঙ্গীতে গেছে ইঙ্গিতে থামিয়া/যদিও সঙ্গী নাহি অনন্ত অম্বরে/যদিও ক্লান্তি আসিছে অঙ্গে নামিয়া মহা আশঙ্কা জপিছে মৌন মন্তরে/দিক-দিগন্ত অব গুণ্ঠনে ঢাকা, ওরে বিহঙ্গ ওরে বিহঙ্গ/মোর এখনি, অন্ধ বন্ধ কোরো না পাখা।”
সমগ্র মানবেতিহাস বহুধা আধেয়র চিন্তা-চিন্তন, প্রত্যক্ষ-অপ্রত্যক্ষ বিচার-বিশ্লেষণ, মনন- নিরিখে আবদ্ধ আবর্তিত। ইতিহাস, বিশেষ করে, জাতীয় ইতিহাস এ রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের ফরমান। বিবরণ ও প্রকরণ। এখানে অনেক একপেশে, একদেশদর্শী বিবরণ লিপিবদ্ধ হয়ে যেতে পারে। রাষ্ট্র শাসকেরা তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার স্বার্থে ইতিহাসে একটা স্থান তৈরির লক্ষ্যে সর্বদা সক্রিয়। ব্যস্ত সমস্ত। এটাই বুঝি তাদের মানবেতিহাস সৃষ্টির অভিপ্রায়। প্রশাসন বলুন, ফৌজি খবরদারি বলুন, এসব কাজে শাসকেরা সব সময়ই ভাড়াটে, বেতন-খাওয়ার লোক বাছাই করে ইতিহাস রচনার কাজে নিয়োগ করে রাখে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষণা দেয়। রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের বেষ্টনীতে বন্দি করে। লোভী, লিপ্সালিপ্ত ঐতিহাসিকও বানিয়ে নেয়। ওইসব লোকেরা কারোর কোনো ছাড় অবজ্ঞা করে না। সংশয়ে সংকট বাড়ে। স্বেচ্ছাচার অর্থাৎ স্বৈরাচারে রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা নেমে আসে। এসব তো কারোরই কাম্য হতে পারে না।
ছোট ছোট দেশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে ফ্যাসিস্ট সরকার যে দুর্যোগ সৃষ্টি করে তা থেকে বড় বড় দেশের বড় বড় ফ্যাসিস্ট সরকারগুলো দুর্যোগের ঘনঘটা বিস্তার করে। ওইসব দেশে। ওইসব রাষ্ট্রীয় অঞ্চলে।
কখনো অস্থায়ী, কখনো স্থায়ী ফ্যাসিবাদের খড়গ খাড়া করে। নীলনকশা বানায় দুর্দমনীয় দমনের। আমাদের দেশেও এর নমুনা, নকশার কমতি নেই। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, প্রায় অর্ধ শতাব্দীকাল কেটে যাচ্ছে। তবুও আমাদের স্বাধীনতার মুহূর্তগুলো অস্থির, উন্মাতাল। অনিশ্চিত দিনযাপন করে দেশবাসী।
এরকমটা কেন হচ্ছে? রক্তাক্ত যুদ্ধদিনের মতো এখনো রক্তাক্ত আমাদের অবস্থান। সকল দুর্যোগও কেটে যেতে পারে যদি স্বদেশের সকল গণতান্ত্রিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। এটা হলে আমরা নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নবতর শক্তির উদ্বোধনও ঘটাতে পারব। মোসাহেব, চাটুকার যারা, তারা অন্ধকারের আলোয় পথ চলে। মঞ্চেও থাকে, মঞ্চের নেপথ্যেও থাকে। সত্যকে আড়াল করে রাখার জন্য অন্ধকার দরকার। এই অন্ধকার, রাত্রির আঁধারের চেয়েও গাঢ়তর ও ঘনবদ্ধ। এই অন্ধকার, এই অস্পষ্টতা কিছুই লোকচক্ষুগোচর হবে না এমনটা নয়। দুরাচাররা হয়তোবা ক্ষণিকের জন্য একটু নিরাপদ আড়ালে থাকতে পারে। এইটুকুই যা। বর্ণচোরা মানুষদের কিন্তু লাজ-লেহাজ নেই। তারা যেখানেই অবস্থান করুক না কেনÑ তাদের আদল, অবয়বটা কালো কালোই থেকে যায়। দেশের রাজনীতিতে, জাতীয় ইস্যুগুলোতে সরকারি কাজে ও বিরোধী দলের কথায়-বার্তায় স্বচ্ছতা লক্ষ্য করি না আমরা। অস্পষ্টতায় কোনো কিছু দেখা যায় না। সত্য চাপা পড়ে থাকে তুষের আগুনে-অঙ্গারে। অস্পষ্টতা কোনো সঠিক মানবিক আচরণ প্রকাশ করে না। মনুষ্যত্ববোধ দ্বিধান্বিত করে মাত্র। গণতন্ত্র ও গণতন্ত্রীকরণের প্রক্রিয়ায় সরকারি দল ও বিরোধী দলকে একই সমতলে নেমে আসতে হবে। এখানে কারোর জন্য কোনো ছাড় নেই। সকল রাজনৈতিক দল, সকল গোষ্ঠী, সকল মতের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস থাকা চাই। সেজন্য দেশপ্রেম, ভূখ-ের দেশ-চেতনাকে প্রগাঢ় করা বাঞ্ছনীয়।
দেশহীনতা নয়, দেশময়তায় অন্তরাত্মাকে একটি সোনার সুতোয় বাঁধতে হবে, গ্রন্থিত করতে হবে আত্মার হাজার তারের বীণায়। দেশে গণতন্ত্রের সঙ্কট সৃষ্টি হলে, জাতীয়তাবাদ আক্রান্ত হলে নিজেদের শক্তি কিংবা বহির্শক্তির হামলা তখন দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত করে।
বর্তমান জমানায় সারা দুনিয়ায় মানুষের কণ্ঠে কণ্ঠে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্্যবস্থার কথাই উঠেছে। আজকের দিনে বাংলাদেশের মানুষের মুখেও ‘গণতন্ত্র’ ছাড়া অন্য কোনো কথা নেই। দেশে গণতন্ত্র জারি রাখতে হলে দেশের সকলকেই একযোগে উদ্যোগী হতে হবে। রাষ্ট্রের শাসকশ্রেণিকে বিশেষভাবে, আন্তরিকভাবে, গণতান্ত্রিক ধারা, পদ্ধতিগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর ওপর স্থাপিত করতে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, অদম্য পথিক যেমন দূর-দূরান্তরের পথপরিক্রমা করে ঠিক তেমনি। তবে একথা আমি জোরের সঙ্গেই বলতে চাই, নিজের ভেতরে গণতন্ত্রের আবহ সৃষ্টি করতে হবে সর্বপ্রথম। তারপর সেটাকে নিজের ঘরের বাইরে আনতে হবে, সমাজের সর্বদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে ক্রমশ। তখন সেটা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারবে। দেশের গণতন্ত্র দেশের মাটি ও মানুষের সামাজিক স্বভাব, রুচি, নাগরিক-আকাক্সক্ষা, অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞার উপকরণে প্রতিষ্ঠিত হবে। গণতন্ত্রের আত্মা সাধারণ জনজীবনের অস্তিত্বের মধ্যে স্পন্দ্যমান থাকা চাই। রাষ্ট্রশক্তির ওপর থেকে জোর করে চাপিয়ে দেয়ার মধ্যে গণতন্ত্রের প্রাণ প্রতিষ্ঠা পাবে না। গণতন্ত্রের অভ্যুদয় ঘটবে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বিকাশের মধ্য দিয়ে। গণতন্ত্রের অভ্যুদয় গণতন্ত্রের মধ্যে অন্তর্নিহিত। এটা রাষ্ট্রশক্তির অপ্রত্যাশিত প্রভাবের ওপর নির্ভর করে না। জনগণকে পদদলিত করে রাষ্ট্রের শাসকেরা ক্ষমতায় আসীন থাকতে পারে মাত্রÑ তাও স্থায়ীভাবে নয়।
প্রমথ চৌধুরীর কথা স্মরণ করতে পারি এখানে। “আমরা সমগ্র সমাজকে একটি শক্তি হিসেবে দেখলেও আসলে মানবসমাজ হচ্ছে বহু ব্যক্তির সমষ্টি।... ব্যক্তিগত জীবনে ফাল্গুন একবার চলে গেলে আবার ফিরে আসে না, কিন্তু সমগ্র সমাজে ফাল্গুন চিরদিন বিরাজ করছে। সমাজে নতুন প্রাণ, নতুন মন, নিত্য কর্তব্য ও নতুন চিন্তা নিত্য উদয় হচ্ছে। সমগ্র সমাজের এই জীবনপ্রবাহ যিনি নিজের অন্তরে টেনে নিতে পারবেন, তার মনের যৌবনের আর ক্ষয়ের আশা নেই এবং তিনিই আবার কথায় ও কাজের সেই যৌবন সমাজকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন।” ১৩২১ সালের প্রমথ চৌধুরীর ওই উক্তিটি এখনো প্রণিধানযোগ্য বটে। জাতির আত্মশক্তি বহু মাত্রিকতায় বিকশিত হয়ে থাকে। শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞানর্চাও বাস্তব অভিজ্ঞতা আত্মশক্তির উদ্বোধন ঘটায়। আসল কথা হলো, যুগবিশেষে দেশবিশেষের জাতীয় আত্মা যখন সজ্ঞান ও সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন কি সাহিত্য কি সমাজ সবই এক নতুন শক্তি লাভ করে এক নতুন মূর্তি ধারণ করে। তখন জাতির আত্মশক্তি নানা দিকে নানা ক্ষেত্রে বিকশিত ও প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে।
আমাদের স্বজনতম প্রতিবেশী ভারতবর্ষ। ভারতে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা ও অনুধ্যান-আয়োজন, বাস্তবায়ন দীর্ঘকালের। রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় গণতন্ত্রই একমাত্র আরাধ্য, একথা বলা অত্যুক্তি হবে না মোটেও। যদিও বহু চড়াই-উৎরাই পার হতে হয় দেশটিকে।
বাংলাদেশে সদর্থক অর্থে গণতন্ত্রের সব্যসাচী উদ্গাতা অথবা ¯্রষ্টার আগমন, আবির্ভাব একেবারেই ঘটেনি। এটা দুর্ভাগ্যজনক অভিজ্ঞতা হলেও সত্য। এই সত্যটা আন্দাজ করার শক্তিটুকু আমরা অর্জন করতে পারিনি। মহাকাশের, সৌর পৃথিবীর জ্ঞান ধীর ধীরে আমরা অর্জন করছি। গণতন্ত্রের জ্ঞান, অনুধ্যান আজও যেন আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে। আমরা গণতন্ত্র চর্চা করব বা গণতন্ত্রী হব এসব চিন্তা-চেতনা কি আমাদের ভেতরটা স্পর্শ করতে পেরেছে কখনো? হয়তো, হয়তো বা নয়। এখানে যা-ই যেটুকু সত্যÑ আমাদের ক্ষমাহীন সিদ্ধান্তহীনতায় দেশ, রাষ্ট্র, জাতি, জনগণ, নিঃস্ব-পিষ্ট হয়েছে শতবার। গণতন্ত্রের কারবারিদের কারবারের কারণেই। জনগণের কাতারে শামিল হয়ে গণতন্ত্রের নিশান উড়িয়েছি, ডামাডোল, ডঙ্কা-নিনাদে আকাশ-বাতাস মাতিয়েছিÑ কম্পন তুলেছি সহ¯্রবারÑ কিন্তু গণতন্ত্র যে তিমিরে সেই তিমিরেই রয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য উদার উঠান, বাতায়ন খোলা রাখতে হবে। কখন যে বসন্তের বাতাস বয়ে যাবে ফুল-ডালি ভরা সে কথা  হয়তো ভবিতব্যই জানে। তবে ধৈর্য ও সহিষ্ণতার সঙ্গে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে দিনের পর দিন, কালের পর কাল। এছাড়া তো গত্যন্তর নেই আমাদের। এজন্য নৈতিকতাপূর্ণ, মেধাসম্পন্ন দায়িত্ববান যুগ-উপযোগী নেতৃত্বের আবশ্যক। অহর্নিশ গণতন্ত্রের উদ্দেশ্যে, গণতন্ত্রের গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এ এক ধারাবাহিক অন্তর্আন্দোলন এবং সংগ্রামের বিষয়। জনগণের জন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে জনগণের জন্য উৎসর্গীকৃত করতে হবে নিজেদের প্রাণ-সর্বস্ব। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অভিযাত্রিকদের। কেননা তাদের ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে অসম্ভব সম্ভাবনাকে ধারণ করতে হবে। গণতন্ত্রের উত্তরসূরি যারা হবেন, আর এগিয়ে যাবেন আগামীর দিকে ত্যাগের আলোকবর্তিকা জ্বালিয়ে রাখতে হবে তাদেরই। গণতান্ত্রিক সম্ভাবনায় হতে হবে তন্ময়, সৃজনশীল এবং পারগামী। প্রবল, প্রবলতর আগ্রহ ও উজ্জীবনশক্তি থাকতে হবে অন্তরে-বাইরে। আপাতত, অপ্রত্যাশিত কোনো অদৃশ্য কারণে গণতন্ত্রকে মুলতবি রাখা চলবে না। এই কথাটুকু দেশনেতা, দেশনায়ক, রাজনীতিকদের মনে রাখা দরকার। ব্যক্তিগত, সামাজিক, দৈশিক ও রাষ্ট্রিক জীবনে প্রত্যেক গণতন্ত্রবাদীকে গণতন্ত্রবান্ধব হতে হবে বারংবার। এছাড়া গণতন্ত্রের যাত্রাকে বহুদূরগামী করা যাবে না। সেই মহানুভব গণতন্ত্রীদের জন্য সমগ্র জাতি, জনগণ অদম্য আগ্রহে অপেক্ষমাণ। গণতন্ত্রকে জীবন্ত, স্থায়ী, সরগরম, মুখর করে রাখতে চাইলে আমাদের আয়ুষ্কালেই এর নমুনার স্বাক্ষর রাখতে হবে। এছাড়া গণতন্ত্রের মৃত্যুকে ঠেকাবার আর কোনো উপায় নেই। এই কথা আমি নির্দ্বিধায় বলে যাব। নিজেদের অনুভূতি, ত্যাগ, সংগ্রামধারার পরম্পরা দিয়ে অন্তরঙ্গ করতে হবে, মজবুত করতে হবে গণতন্ত্রের দার্শনিক ভিত ও প্রায়োগিক অবস্থান এবং পরিসর ও পরিকাঠামো। গণতন্ত্রের শান্ত-¯িœগ্ধ ছায়া নিবিড় স্থানে ঠাঁই নেবার আগেই কে কোথায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেই আত্মপ্রবঞ্চনার দায় কে নেবে? বলতে ইচ্ছে হয়Ñ
‘হায় মানুষ, ছায়ার মোহে পাগল,/ শান্তি তার এই তো চিরন্তনÑ/
কেবল চায় বদল, বাসা বদল।’
[প্যাঁচারা/শার্ল বোদলেয়ার/ অনুবাদ : বুদ্ধদেব বসু]
সহিষ্ণুতার অভাবে, ধৈর্যের অভাবে, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার অভাবে অনেক অনিশ্চিত, অনির্বাচিত অন্ধকারের টানেলে আমরা নিমজ্জিত হয়েছি। নিপীড়ক পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি, ‘জেহাদ’ করেছি জানবাজি করে উনিশশ’ একাত্তর-এ। স্বাধীনতার জন্য। স্বাধীন স্বদেশ কায়েম করার জন্য। বিশ্বাস করেছি ব্যক্তি স্বাধীনতায়, বাক-স্বাধীনতার অধিকারে, ধর্ম, সকল ধর্মের  প্রতি সহাবস্থানে বিশ্বাস করেছি, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানসমূহে ও আদর্শে অকুণ্ঠ বিশ্বাস ও আনুগত্য প্রকাশ করেছি। পরস্পর পরস্পরের প্রতি গভীর আস্থা প্রকাশ করেছি। এ সবকিছুই একই স্বর্ণতন্তুতে বাঁধা। আর আমরা তা মানবিক মেলবন্ধনে, মেরুমৈত্রীতে স্থাপন করতে চাই। বাংলাদেশের প্রাগতিক, প্রাগ্রসর ভবিষ্যতের জন্য। আগামীকালের কল্যাণ যাত্রায় তা পূর্ণ হোক।

[গণতান্ত্রিক সহিষ্ণুতা, সামাজিক সমঝোতা ও সম্প্রীতিÑ স্বাধীনতার সতত রক্ষাকবচ। এই সর্বজনীন মূল্যবোধটুটু সমগ্র জাতির চৈতন্য ¯্রােতকে যাতে চির প্রবহমান রাখে সেদিকে আমাদের বিবেক যেন জাগ্রত প্রহরী হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন