শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বর্ষপূর্তির কবিতা

প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ভালোবাসো মন খুলে
আ ল ম শা ম স

বৈশাখী ঝড়ে উড়ে গেছে চাল
বর্ষার বৃষ্টিতে ডুবে গেছে ঘর
ভাদ্রের বন্যায় ভেসে গেছে বাড়ি।
তুমি শুধু একা।
ভয় শংকায় হারিয়ে গেছে ভাষা
জীবন সংগ্রামের নেই কোনো আশা।
জীবনে একবার বলেছিলে ভালোবাসি।
সেই ভালোবাসা হাঁটি হাঁটি পা পা করে  
আজ রক্তে মাংসে পরিপূর্ণ যুবক।
সেই যুবকের হাতে হাত ধরে
চোখে চোখ রেখে এগিয়ে যাও আগামীর পথে।
স্বপ্নের সোনালি জীবন রাঙাতে
সব হারানোর শোক এখন শক্তিতে পরিণত করে
ভালোবাসাকে আলিঙ্গন জানাও।
জড়তা জীর্ণতা হতাশা ভুলে
ভালোবাসো মন খুলে।


বর্ষার গান
মে হে দী হা সা ন প লা শ

বৃষ্টি নেমেছে অঝোর ধারায় বর্ষা এসেছে ফিরে
কদম ফুলের বর্ষা নেমেছে গড়াই নদীর তীরে।
রহিমার চালে ছন নেই বলে বর্ষার আসা-যাওয়া
ঘরের মেঝেতে হাঁটু পানি তাই ঘরেতেই নাওয়া-খাওয়া।

 যেদিকে তাকায় অথৈ পানি খাইতে পারে না কেউ
 ছেলেটি তাহার মেরেছে কলেরা মেয়েটি কেড়েছে ঢেউ।
বাঁচবার সাধ নেই এতটুকু মৃত্যুও গেছে ভুলি
 উপোসী ঘুমায় একাকী মাচায় গোখরোর গলাগলি।

বানভাসি লোক ছুটছে কেবলি নেই মাথা গুজবার ঠাঁই
এক কাঁধে তার শেষ সম্বল আর কাঁধে ছোট ভাই।
যুদ্ধ নয় তবু চারদিকে যেন শরণার্থীর ঢল
 ক্ষেতের ফসল ডুবেনিকো শুধু ঘরে বন্যার জল।

বর্ষা এনেছে ইলিশ মেলা নন্দনে বসে খাওয়া
সারাদিন লাইনে দাঁড়িয়ে রিলিফের চাল পাওয়া।
বর্ষা এনেছে ছন্দ কবিতা বর্ষা এনেছে গান
শাপলা ফুলের বাসরশয্যা ভেঙেছে প্রিয়ার মান।

পাল তোলা নায়ে নাইওরী গ্যাছে ভাটির দেশের মেয়ে
তুফান দরিয়া পাড়ি দেয় মাঝি ভাটিয়ালী গান গেয়ে।
বর্ষা নেমেছে কেতকী, কদম, কামিনী ও কেয়াফুলে
টিনের চালে বর্ষার গান বাদ্য দিঘীর জলে।

বর্ষা এনেছে সুখ ও দুঃখ ফসলের পলিমাটি
 সেই মাটিতেই বুনছে মানুষ (সর্বহারা) স্বপ্নের বীজ খাঁটি।


ফানা-ফিল্লাহ
জা মা ল উ দ্দি ন বা রী

আর পেছনে তাকাবো না
পেছনে জঞ্জাল ভাগাড় অথবা আলোর মশাল
সম্মুখে আমি
তারো সম্মুখে আমার দীর্ঘ অন্ধকার প্রচ্ছায়া
এখন নিজেই জ্বেলে নেবো নিজের নিশান
তারপর শুরু হবে দুরন্ত পথচলা
এতটা পথ হেঁটে এসে আমি কি পেছনে তাকাবো না?
পেছনে মায়া-মরিচিকা, কষ্টের নষ্টালজিয়া
ভাল লাগা ভুলের স্বরলিপি।

কতটা পথ হাঁটা হল আর কতটা পথ বাকি
কিছুই জানি না আমি, কেউ জানে না।
এই মায়োপিক চোখে আলোর ওপাশে
শুধু নিজের অন্ধকার প্রচ্ছায়া দেখি
আর দেখি আবছায়া দিগন্তরেখা।
এক দিগন্ত থেকে আরেক দিগন্তের হাতছানি
কেউ কখনো সেখানে পৌঁছুবে না জানি।
আলো-আঁধারের এই দেখাদেখি
বিভ্রমের সেতু, সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলে থাকা স্বপ্ন
এই সব না দেখাই ভাল।
বরং চোখ বুজে দিব্বি সবকিছু সয়ে যাওয়া
নিজের ভেতরে গড়ে তোলা নিজের আনন্দ মহল
কষ্টের জিন্দানে মোক্ষময় মুক্তির পথ,
ফানাফিল্লাহ নিয়তির ঐশ্বর্য আমাদের।


কবিকে আসতেই হয়
জা হা না রা আ র জু

একজন কবির কণ্ঠকে কখনই রুদ্ধ করা যায় না
একজন কবির ধমনীর শিরায় শিরায় শব্দ পুঞ্জেরা
নক্ষত্রের আলো হয়, নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে ধ্বনি তরঙ্গের ওঠানামায়
শব্দেরা খেলা করেÑ বুকের গভীরে ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’-
শব্দ তরঙ্গে কখনো বিষণœ প্রহরে, কখনো বিদ্রোহী বহ্নিশিখায়
একজন কবি লিখে রাখে তার নাম।

কবি তাই সস্তা চাটুকারিতা এবং প্রলোভনের শৃঙ্খলাবদ্ধ নয়,
পায়ের লোহার আংটা অথবা স্বর্ণশৃঙ্খলে
তার গতি প্রতিহত হয় না, তার নভোচারী পাখি মন
কাঁটাতারের শানিত শাসন উপেক্ষা করে চিরউড্ডীন-
একজন কবি সহজেই ‘লাশ’ হয়ে নগরের বাইরে চলে যেতে  
পারে, সহ¯্র স্বর্ণ আশরাফী দু’পায়ে দলে যায় কবি।

একজন কবি তার সোনালি অতীতের কথা বলে,
বর্তমানের বিক্ষুব্ধতা আর স্বপ্ন-স্বদেশের কথা বলে,
আগামীকালের অঙ্গীকারের কথা বলে-
একজন কবিকে কোনো জাদুকরের বাঁশি আটকে রাখতে
পারে না, কোনো পদ্ম সরোবরের মায়াবী মোহে বন্দী সারস হয় না।
একজন কবিকে আসতেই হয় চর্যার চত্বরে
মৃদঙ্গের তালে তালে চঞ্চলা হরিণী হয়ে। কখনো
গলায় গুঞ্জার মালায় শবরীবালা হয়ে।

যুদ্ধের মাঠে একজন কবির কলম অতন্ত্র প্রহরায়
নির্ভীক সৈনিক- কখনো সে প্রেয়সীর সলজ্জ বাসরে
বিমুক্ত প্রেমিক!
একজন কবি অগুনতি শব্দপুঞ্জ দূর নক্ষত্রে নক্ষত্রে
উড়িয়ে দিতে চায়- কখনো সূর্যটাকে হাতের মুঠোয়
নিয়ে অনায়াসে খেলা করে-
শীত-বসন্তে, শরৎ-হেমন্তে পৃথিবীর বাগানে বাগানে
কবি তাঁর কবিতার ফুল ফোটায়-
কবির কণ্ঠ স্তব্ধ হয় না বুলেটে বারুদে অথবা
কোন রক্তচক্ষুর শানিত শাসনে
কবিকে আসতেই হয় যুগ থেকে যুগে, কাল থেকে কালে-
জীবন থেকে মৃত্যুতে-
একজন কবির ক্ষয় নেই, বিলোপ নেই, মৃত্যু নেই!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন