মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপ সম্পাদকীয়

ইনকিলাব জিন্দাবাদ

প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুনশী আবদুল মাননান

ভদ্রলোক দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে বসবাস করেন। দু-তিন বছর অন্তর দেশে আসেন। কিছু দিন থেকে আবার ফিরে যান। বিদেশে যারা থাকেন, তারা দেশ সম্পর্কে বেশি ভাবেন। তাদের সঙ্গে আলাপের সময় এটা বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। এই ভদ্রলোকও দেশের ব্যাপারে খুব স্পর্শকাতর। কিছুদিন আগে ঢাকায় যখন তার সঙ্গে দেখা ও কথাবার্তা হয়, তখন তার বেশির ভাগ কথাই ছিল দেশ নিয়ে, দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে। আলাপকালে সংবাদপত্র বা মিডিয়ার কথাও প্রাসঙ্গিকভাবে এসে যায়। তিনি বলেন, ‘আপনাদের দৈনিক ইনকিলাব-এর আমি একজন নিয়মিত পাঠক। এতে এমন কিছু তথ্য, খবর ও বিষয় থাকে যা অন্য কোনো দৈনিকে পাওয়া যায় না। অন্যান্য দৈনিক এগুলো উপেক্ষা করে কিংবা ইচ্ছা করে এড়িয়ে যায়। অথচ দেশের মানুষের এসব জানা খুবই অপরিহার্য ও জরুরি। ইনকিলাব পাঠকদের কাছে তার প্রয়োজনীয়তা শুরু থেকেই এভাবে অনিবার্য করে রেখেছে।’
শুধু এই ভদ্রলোকই নন, ইনকিলাবের তাবৎ পাঠকের প্রতিক্রিয়াই এরকম। অনেক দৈনিকের ভিড়ে ইনকিলাব যে আলাদা, স্বতন্ত্র ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এ বিষয়ে সংবাদপত্র পাঠকদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। ইনকিলাবের স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) প্রচলিত দৈনিক সংবাদপত্রের মতো আর একটি দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশ করতে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন এমন একটি সংবাদপত্র যা অন্যদের থেকে পৃথক এবং জাতির আকাক্সক্ষা পূরণে হবে সহায়ক। এ নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন চিন্তাভাবনা করেন, সাথী, সহকর্মী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং অবশেষে ইনকিলাব প্রকাশ করেন। ইনকিলাব অর্থ বিপ্লব। তার চেতনায় ছিল এই বিপ্লব। তিনি চেয়েছিলেন, ইনকিলাব হবে এই বিপ্লবের বাহন।
ইনকিলাব আত্মপ্রকাশ করে ১৯৮৬ সালের ৪ জুন। ওই সময়কার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট এবং দেশের গণমাধ্যমের ভূমিকা ও অবস্থানের বিষয়টি এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যেতে পারে। স্বাধীনতার পর দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করা যায়, সংবাদপত্রগুলোতে দেশের গরিষ্ঠ জনগণের ধর্ম, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, তাদের আশা-প্রত্যাশা, সুখ-দুঃখ ইত্যাদি যথোচিত গুরুত্বের সঙ্গে প্রতিফলিত হচ্ছে না। দীর্ঘকাল দৈনিক আজাদ এবং পরবর্তীকালে প্রকাশিত দৈনিকগুলো যে কাজ করে আসছিল, স্বাধীনতার পর অজ্ঞাত কারণে তাতে ভাটার টান প্রত্যক্ষ করা যায়। ইতিহাস পাঠকের অজানা নেই, বাঙালি মুসলমানদের স্বার্থে, তাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির তাগিদে বিশ শতকের প্রথম দিকে মুসলমানরা সংবাদপত্র প্রকাশে এগিয়ে আসে। তাদের প্রাথমিক প্রচেষ্টাগুলো ততটা সফল না হলেও একটা ভিত্তি তৈরি হয়। এর পর ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত হয় দৈনিক আজাদ। অত্যন্ত স্বল্প সময়ে এই দৈনিক বাঙালি মুসলমানের মুখপত্রে পরিণত হয়। স্বাধীনতার পর জাতীয় সাংবাদিকতার এই ধারাটি দুর্বল হয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে ইনকিলাব প্রকাশের প্রয়োজনীয়তাটা বিশেষভাবে অনুভূত হয়।
সমকালে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ছিল ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ। দুটি সুনির্দিষ্ট বলয়ে বিভক্ত বিশ্ব ছিল যুদ্ধ ও যুদ্ধের আশঙ্কায় সন্ত্রস্ত। সা¤্রাজ্যবাদী, সামাজিক সা¤্রাজ্যবাদী, উপনেবিশবাদী, নব্য উপনিবেশবাদী ও আধিপত্যবাদীদের থাবা বিস্তৃত হচ্ছিল। একদিকে তারকা যুদ্ধের পাঁয়তারা চলছিল, অন্যদিকে সর্বত্র উত্থিত হচ্ছিল মজলুম মানবতার আর্তনাদ। বিশ্ব মানব বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ার পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিল। ওই সময় সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, মানবতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেয়া সংবাদপত্রের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য হয়ে পড়েছিল। আমাদের দেশেও তখন সব ধরনের আগ্রাসী শক্তির বিপক্ষে এবং মজলুম মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো সংবাদপত্রের প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। ইনকিলাব-এর প্রথম সম্পাদকীয়তে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার রয়েছে।
এখন সারা বিশ্বেই সংবাদপত্র প্রকাশের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে বাণিজ্য ও কায়েমি স্বার্থ সংরক্ষণ। অতীতে কিন্তু বিশ্বের কোথাও শুধুমাত্র এই উদ্দেশ্যে সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়নি। উপমহাদেশের সংবাদপত্র প্রকাশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলেও দেখা যায়, বিশেষ আদর্শ, রাজনীতি ও সম্প্রদায়গত স্বার্থ সামনে রেখে সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়েছে। ইনকিলাব বাণিজ্যিক কিংবা অন্য কোনো লক্ষ্য নিয়ে প্রকাশিত হয়নি। প্রধানত, দেশ, জাতি, মুসলিম উম্মাহ ও বিশ্ব মানবতার খেদমতের লক্ষ্য নিয়েই প্রকাশিত হয়েছে। হযরত মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) সূচনা লগ্নে পরিষ্কার জানিয়ে দেন যে, তিনি বস্তুনিষ্ঠ, নির্ভীক, বহুল প্রচারিত একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম প্রকাশ করতে চান। তিনি এও জানান, ‘আমাদের দায়বদ্ধতা একমাত্র আল্লাহর কাছে। আমাদের সামনে দেশ ও জনগণ। কোনো রাজনৈতিক দল, সরকার বা বিরোধী দলের কাছে আমরা দায়বদ্ধ নই। ভালো যে-ই করবে আমরা তাকে সমর্থন করব। দেশের জনগণের, ইসলামের জন্য ক্ষতিকর এমন কিছু যে-ই করুক আমরা তার বিরোধিতা করব। সমালোচনার জন্য সমালোচনা নয়, আমাদের সমালোচনা হবে গঠনমূলক, তথ্যনির্ভর। সংবাদ পরিবেশনে থাকবে না অতিরঞ্জন, পক্ষপাতিত্ব। সবার সংবাদ নির্মোহ, নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠভাবে আমরা পরিবেশন করব।’
ইনকিলাব তার স্বপ্ন¯্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতার প্রর্দশিত নীতি, আদর্শ ও লক্ষ্য সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে দৃপ্ত পদে। ইনকিলাব দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে ভূখ-গত অখন্ডতা সুরক্ষাহক। ইনকিলাব বিশ্বাস করে, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সংহত ও নিরাপদ হলেই কেবল জাতীয় উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত হতে পারে। ইনকিলাব ইসলামের পক্ষে। ইসলামের শিক্ষা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ সমাজের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠার জন্য বিগত ৩০ বছর ধরেই ইনকিলাব তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়ন, সংস্কার, বিকাশ ও প্রতিষ্ঠাকে ইনকিলাব বরাবরই আলাদা গুরুত্ব দিয়ে আসছে। সঙ্গতকারণেই মুসলিম উম্মাহর ব্যাপারে ইনকিলাবের বিশেষ পক্ষপাতিত্ব রয়েছে। মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণের পক্ষে ইনকিলারের ভূমিকা সদাসোচ্চার। ইনকিলাব গণতন্ত্রের পক্ষে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণে এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির বিকাশে সোচ্চার ভূমিকা রাখাকে ইনকিলাব তার অপরিহার্য দায়িত্ব বলে মনে করে। ইনকিলাব জাতীয়তাবাদ লালনে সক্রিয়। যুগ যুগ ধরে বহমান ধর্ম, ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভাষা, অর্থনৈতিক ধারাবাহিকতা এবং মুক্তিযুদ্ধে সমন্বয়ে যে জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠেছে সেই জাতীয়তাবাদের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে পারলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও স্বাতন্ত্র্য অক্ষুণœ ও নিরাপদ থাকবে বলে ইনকিলাব দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। ইনকিলাব জাতীয় ঐক্য, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামাজিক শান্তি-নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক আত্মপ্রতিষ্ঠার পক্ষে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইনকিলাব সার্বভৌম ক্ষমতার নীতিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়Ñ ইনকিলাব এই নীতিতে বিশ্বাসী। কোনো বিশেষ দেশ বা বলায়ভুক্ত দেশসমূহের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক বা গাঁটছড়া বাঁধার নীতির প্রতি কোনো সমর্থন নেই ইনকিলাবের। ইনকিলাব সকল প্রকার সা¤্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, বর্ণবাদ, আগ্রাসন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং আগ্রাসী হামলা ও দখলের বিপক্ষে। ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে পরিচালিত চক্রাš,Í যুদ্ধ, সকল প্রকার সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইনকিলাবের অবস্থান সুদৃঢ়। ইনকিলাব কোনো প্রকার বিভেদ-নৈরাজ্য, শোষণ ও জুলুম-নির্যাতন সমর্থন করে না। ইনকিলাব তার এই বিঘোষিত নীতি ও অঙ্গীকার থেকে আজ পর্যন্ত চ্যুত হয়নি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে গত ৩০ বছরে। কিন্তু ইনকিলাব তার নীতি-আদর্শ ও লক্ষ্যের পথে অবিচল ও নিরাপস রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে ইনশাআল্লাহ।
ইনকিলাব দেশ ও জনগণের পক্ষে। এটা কেবল নিছকই একটি স্লোগান নয়। প্রতিষ্ঠারকল থেকে এ পর্যন্ত ইনকিলাবের ভূমিকা পর্যালোচনা করলে সুনির্দিষ্টভাবেই প্রমাণিত হবে, ইনকিলাব দেশের স্বার্থের ব্যাপারে সব সময়ই সজাগ এবং কোথাও এতটুকু ব্যত্যয় ঘটলে ইনকিলাব তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এতটুকু দ্বিধার পরিচয় দেয়নি। একই ভাবে জনস্বার্থের প্রশ্নে আপসহীন। ইনকিলাব তার প্রথম সম্পাদকীয়তেই ঘোষণা দিয়েছিল : ‘ইনকিলাব ছাত্র-শিক্ষক, শ্রমিক, মজুর, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী তথা সর্বস্তরের গণমানুষের কথা তুলে ধরার জন্য ওয়াদাবদ্ধ। ইনকিলাব শুধু রাজধানীর রাজপ্রাসাদের ভাগ্যবান মানুষের রোজনামচা নয়, শহরতলির নোংরা বস্তির উপেক্ষিত মানুষের কথা, গ্রামবাংলার কৃষাণ, মজুর, জেলে, কুমার, তাঁতিসহ অগণিত খেটে খাওয়া মানুষের কথা সমান গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করতে চায়। তাদের আশা-আকাক্সক্ষা ব্যথা-বেদনার সঠিক চিত্র তুলে ধরতে চায়। এই দেশ আমার, এদেশের মানুষ আমারই বাপ-ভাই-আত্মীয়-স্বজন। তাদের সুখ-দুঃখ, ভালোমন্দের সাথে একাত্ম হয়ে চলা আমাদের পথপরিক্রমা, ইনকিলাব তার এই অঙ্গীকার নিষ্ঠার সঙ্গে প্রতিপালন করে আসছে।
ইনকিলাব তার নীতি-আদর্শ-লক্ষ্যের কারণে, তার ভূমিকা ও সেবার কারণে শুরুতেই ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা লাভ করে, যা এখানো অব্যাহত আছে। এদেশের দেশপ্রেমিক, স্বাধীনতাপ্রিয়, জাতীয়তাবাদী, ইসলামমনস্ক, ঐতিহ্যপন্থি এবং শান্তিকামী গণমানুষ ইনকিলাবকে তাদের প্রিয় সুহৃদ ও দিগদর্শক হিসেবে মনে করে, গণ্য করে। ইনকিলাব তাদের অপরিহার্য সঙ্গী। ইনকিলাব সর্বদা তাদের অকৃপণ ভালোভাসায় সিক্ত। এটা ইনকিলাবের জন্যও এক অনিঃশেষ অনুপ্রেরণা এবং তার পথচলার পাথেয়।
দেশ এই মুহূর্তে এক দর্শনহীন, রাজনীতিহীন যুগসন্ধিকাল অতিক্রম করছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা উঠে গেছে। ২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর সুষ্ঠু-সুস্থ রাজনীতি তার পথ হারিয়ে ফেলেছে। এখন ক্ষমতার রাজনীতি চলছে। ক্ষমতাসীনরা তাদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য যাচ্ছেতাই করছে। বিরোধীদলের ওপর যথেচ্ছ দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। বিরোধীদলের রাজনীতিরও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিরোধীদল তার রাজনৈতিক দর্শন ভুলে কোনো রকমে অস্তিত্ব ধরে রাখার চেষ্টা করছে। জনগণের ওপর নির্ভর না করে আন্তর্জাতিক মহলের ওপর নির্ভর করার একটা প্রবণতাও তার মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখানেও ক্ষমতাই মুখ্য। বলা বাহুল্য, এহেন পরিস্থিতিতে জনগণ কোনো দিগদিশা খুঁজে পাচ্ছে না। আইনশৃংখলার বেহাল, নিরাপত্তার ঝুঁকি, গুম-খুনের বিস্তার, আইনের শাসনের অভাব, বিবেকহীনতার সংস্কৃতির বিকাশ ইত্যাদি দেশকে এমন এক অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়েছে যে, এরকম অবস্থা অতীতে আর কখনো দেখা যায়নি। গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা এবং অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সরকার পরিবর্তনের ব্যবস্থা না হলে বিদ্যমান পরিস্থিতির অবসান বা পরিবর্তন হবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন না। সরকার গণতন্ত্রের বদলে উন্নয়ন উপহার দিতে চাইছে। অথচ গণতন্ত্র ছাড়া টেকসই ও জবাবদিহিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত হতে পারে না। দেশের ও মানুষের জন্য আরো একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, সরকার তার পররাষ্ট্রনীতিকে ভারতমুখী করে তোলার চেষ্টা অব্যাহতভাবেই চালিয়ে যাচ্ছে। একটা একতরফা ও অসম সম্পর্ক ইতোমধ্যেই ভারতের সঙ্গে তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক সমর্থনের বিনিময়ে ভারত এই সরকারের কাছ থেকে তার যাবতীয় চাওয়া আদায় করে নিয়েছে। বিনিময়ে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত কিছুই পায়নি। এই একমুখী-একতরফা সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দিক দিয়ে পিছিয়ে বা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দেশের জন্য এটা এক ধরনের অশনিসংকেত।
দৈনিক ইনকিলাব জাতির এই সন্ধিক্ষণে তার সীমিত সামর্থ্য অনুযায়ী সঠিক দিক-নির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা করে আসছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নানা পরিবর্তন ও পোলারাইজেশন হচ্ছে। ইনকিলাব তার নীতি-আদর্শ-লক্ষ্যের নিরিখে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মতামত গঠনের কাজ করে যাচ্ছে। একটি সংবাদপত্রের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব কেবলমাত্র সেটুকুই করছে। এই করাটি তার একান্ত কর্তব্য বলেই সে মনে করছে।
ইনকিলাবের পথচলা কখনোই মসৃণ ছিল না। এখনো নয়। নানা সংকটময় ও বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিয়ে তাকে এ পর্যন্ত আসতে হয়েছে। ইনকিলাব কখনো কোনো প্রলোভন অথবা ভীতির কারণে তার নীতি-আদর্শ-লক্ষ্য থেকে সরে আসেনি। ইনশাআল্লাহ আগামীতেও তার এই অবস্থান অটুট থাকবে। ইনকিলাবের প্রতি দেশের মানুষের অবিচল আস্থার বড় কারণ, ইনকিলাব তার লক্ষ্য অর্জনের পথে কোনো বাধা বা প্রতিবন্ধকতাকেই আমল দেয় না, পরোয়া করে না। ইনকিলাব একটি দৈনিক সংবাদপত্র বটে, তবে তার বৈশিষ্ট্য ও চরিত্র আলাদা। ইনকিলাব এজন্যই বিশিষ্ট। ইনকিলাবের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাক, দেশ ও জনগণের পক্ষে তার ভূমিকা আরো জোরদার হোক, আজকের দিনে এই আমাদের একান্ত কামনা।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন