আগামী ১৫ জুলাই বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিল। প্রায় ২৯ বছর পর কাউন্সিলের মাধ্যমে ছাত্রদলের কমিটি করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। কাউন্সিলকে ঘিরে নয়াপল্টন দলীয় অফিসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রার্থীরা নিজেদের প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার পাশপাশি বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে অফিসের সামনে খন্ড খন্ড মিছিল ও সমাবেশ করে যাচ্ছেন। এবারের কেন্দ্রীয় কমিটিতে শীর্ষ দুটি পদের অন্তত একটি পদ চায় জবি ছাত্রদলের বর্তমান ও সাবেক নেতারা। সরকার বিরোধী সকল আন্দোলনে সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করার পরও কেন্দ্রীয় কমিটিতে শীর্ষ পদ না পাওয়ায় অনেকটাই হতাশ ছাত্রদলের এই ইউনিটের নেতা-কর্মীরা।
এ ব্যাপারে জবি শাখা ছাত্রদলের সাবেক আহŸায়ক ও বর্তমান ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাধারন সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীন ইনকিলাবকে বলেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ দুটি পদের অন্তত একটি জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়কে দেয়া এখন সময়ের দাবি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনসহ দলের প্রতিটি আন্দোলনে রাজধানীর অন্য ইউনিটের চেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ভুমিকা উল্লেখযোগ্য ছিল। তাই শুধু প্রতিষ্ঠান দেখে নয় আন্দোলন সংগ্রামের মাঠে যারা অগ্রগামী এবং ত্যাগী ছিল তাদেরকেই ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে মূল্যায়ন করা হোক।
এবারের কাউন্সিলে তৃণমুল ও সাধারণ কর্মীদের দাবি জাতীয়তাবাদী পরিবারের ও সরকার বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখা যোগ্য প্রার্থীরা যেন ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসে। এদিক থেকে পুরান ঢাকার জাতীয়তাবাদী দলের মূল শক্তি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এগিয়ে রয়েছেন। ছাত্রদলের ঘাটি হিসাবে পরিচিত এ ইউনিটটির নেতাকর্মীরা ১/১১ এর সময় জরুরী অবস্থা ভেঙ্গে নিয়মিত মিছিল ও মিটিং করেন। ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের অন্যান্য ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রদলকে বিতাড়িত করা হয়। সেক্ষেত্রে জবি ছাত্রদল ক্যাম্পাসে ২০১৩ সাল পর্যন্ত শক্ত অবস্থান ধরে রাখে। দলীয় কোন কর্মসূচিতে জবি ছাত্রদল ক্যাম্পাসের ভিতরে মানববন্ধন, লিফলেট বিতরণ, বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে প্রশাসন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর থেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নাম মুছে দিলে জবি শাখা ছাত্রদলের আন্দোলনের মুখে তা পুন:স্থাপন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ২০১৩ সালের ২৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তারেক রহমানকে নিয়ে কটুক্তি করলে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে জবি ছাত্রদল। এসময় পুলিশ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও জবি ছাত্রদলের সাবেক নেতা সিরাজুল ইসলাম সিরাজের কোমড়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। আহত ছাত্রদল নেতা দীর্ঘদিন আইসিইউতে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ২০১৫ সালে ৪ ফেব্রæয়ারি ক্যাম্পাসের সামনে অবরোধ চলাকালীন পুলিশের গুলিতে মারাত্বক আহত হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা নয়ন বাছার। নয়ন বাছার এখন ভারতে চিকিৎসাধীন আছেন। এছাড়া ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে জবি ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা পুরান ঢাকায় জোড়ালো আন্দোলন করে। বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে পুরান ঢাকা সহ রাজধানীতে এ ইউনিটটির নেতাকর্মীদের ভূমিকা অগ্রগামী।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ কাউন্সিলে শীর্ষ পদে আলোচনায় আছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ বৃত্তি ও ছাত্রকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান বাপ্পী, সাবেক সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, জবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক এবিএম মাহমুদ আলম সরদার ও কে এম সাখাওয়াত হোসাইন।
মাহমুদুল হাসান বাপ্পী পারিবারিকভাবে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। বাবা গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য ছিলেন। চাচা সেলিমুজ্জামান সেলিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য, বর্তমানে বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। রাজধানীতে সরকার বিরোধী আন্দোলনে একাধিকবার তিনি আটক হন।
জবি ছাত্রদলের সাবেক নেতা এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে কটুক্তি করার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করার সময় পুলিশ তার কোমড়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। ¯েøাগান মাস্টার খ্যাত এ নেতা তারেক রহমানের সাজার প্রতিবাদে নয়াপল্টনে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন। একাধিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক এবিএম মাহমুদ সরদার স্কুলজীবন থেকে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা ছাত্রদলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। ২০১৩ সালে খালেদা জিয়ার অফিসে গুলির প্রতিবাদ বিক্ষোভে পুলিশি নির্যাতনে তার হাত ভেঙ্গে যায়। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রæয়ারি খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর থেকে আটক হন তিনি। তার নামে কয়েকটি থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
জবি ছাত্রদলের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক কে এম সাখাওয়াত হোসাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকে রাজনীতিতে জড়িত। ১/১১ থেকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে তিনি সরকার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় তার নামেও একাধিক মামলা রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন