এস মিজানুল ইসলাম, বানারীপাড়া (বরিশাল) থেকে : বানারীপাড়ার ইটভাটার মালিকরা মানছে না ইট তৈরি ও ভাটা স্থাপন আইন। উপজেলার সবগুলো ইট ভাটার মালিক নিজেদের ইচ্ছে মতই সংরক্ষিত আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা, বনভূমি, জলাভূমি, কৃষি প্রধান এলাকা এবং পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় ইট ভাটা স্থাপন করছে। ইটভাটা স্থাপন এবং ইট তৈরির শর্তসমূহ মালিকরা মানছেন না। শর্ত না মেনে ইটভাটা স্থাপন করলে ৫ বছরের জেল ও জরিমানার বিধান রেখে জাতীয় সংসদে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন বিল-২০১৩ পাস হয়েছে। কিন্তু বানারীপাড়ার ভাটা মালিকরা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফসলি জমি নষ্ট করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ আবাসিক এলাকায় বনভূমির মধ্যেই পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই ইটভাটা স্থাপন করেছেন। আবার অনেকে লাইন্সেসবিহীন টিনের চোঙ্গা ও কোন রকম দায়সাড়া চোঙ্গা বসিয়ে চলাচ্ছে একাধিক ইটভাটা। এছাড়া ও কৃষি জমি, পাহাড় বা টিলা থেকে ইট তৈরির মাটি কাটলে অথবা অনুমোদন ছাড়া নদী, হাওর বা চরাঞ্চল থেকে মাটি কাটলে ২ বছরের কারাদ- এবং ২লাখ টাকা অর্থদ-ের বিধান রয়েছে। অথচ ইটভাটা মালিকরা অবাধে ফসলি জমি ও চরাঞ্চল থেকে ইট প্রস্তুতের মাটি কাটছে। এছাড়াও অনুমতি না নিয়ে ইটভাটা খুললে ১ বছরের কারাদ- এবং ১লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হলেও এ উপজেলায় বিভিন্ন ভাটায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় অনেকেই অনুমতি বিহীন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড় পত্র ছাড়াই বীরদর্পে ভাটা চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর। ইটভাটায় কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কয়লার পরিবর্তে বানারীপাড়ার প্রায় সবগুলো ইট ভাটায় পোড়ান হচ্ছে মূল্যবান বনজ ও ফলজ গাছ। বানারীপাড়ার জম্বদীপ,বাইশারী ইউনিয়নে রাসেলের এম বি এফ ও নূর ইসলামের মাহিন ইট ভাটায় টিনের চোঙ্গা বসিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। অপরদিকে কাজলাহার বাজার ও কাজলাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংলগ্ন সালাম গোলোন্দাজের এডমিরাল ব্রিকস,বাইশারী ইউনিয়নে রুস্তুম মোল্লার আর বি এফ ব্রিক্সস ও নুরুল ইসলামের ভাটায় কাঠ চেড়ার জন্য স্ব-মিল বসিয়ে বনভূমি উজাড় করার উৎসবে মেতে রয়েছে। ভাটার ধুলো বালি, কালো ধোঁয়া ও আগুনের তাপে ধ্বংস হচ্ছে নিকটবর্তী এলাকার সবুজ বনজ সম্পদ এবং মাতৃত্ব হারাচ্ছে ফলজ গাছ। কিছু দিন আগে যে জমিতে সোনালি ধান দক্ষিণা বাতাসে হেলে দুলে নেচে বেড়াত সে সব জমি ভাটার আগুনের তাপে উর্বরতা হারিয়ে এখন শুধ অভিশপ্ত মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন ভাটার পার্শ্ববর্তী এলাকার শিশুসহ প্রাপ্ত বয়স্করা। বির্পযয়ের মুখে পতিত হচ্ছে জনস্বাস্থ্য। লোকালয়ের নিকটবর্তী হওয়ার কারণে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের। ইট পোড়ানোর ঝাঁজালো গন্ধে ভারি হয়ে আসে এখানকার বাতাস। এমনকি প্রায় সবগুলো ইট ভাটায় শিশু আইনও মানা হচ্ছে না। অল্প পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ৮-৯ বছরের শিশুদের দিয়ে ইট তৈরির কাজ করানো হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝে মধ্যে এলাকায় আসলেও কোন প্রতিকার হচ্ছে না। দু’একবার নোটিশ কোন কোন ইট ভাটার মালিককে দেয়া হয়েছে শোনা গেলেও পরবর্তীতে রহস্যজনক কারণে যে অবস্থা ঠিক তাই থেকে যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন