তাজ উদ্দিন, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) থেকে : দক্ষিণ চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলাসহ পার্শ¦বর্তী এলাকায় ভয়াবহ লোডশেডিং চলছে। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কোন ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ থাকে বিদ্যুতের সরবরাহ। ধারাবাহিতভাবে এমন অবস্থা চলছে গত এক সপ্তাহ ধরে। বিদ্যুতের এই ভয়াবহ বিপর্যয়ে ইরি বোরো চাষ ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি আসন্ন এসএসসি, এইসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার্থীসহ শিক্ষার্থীরা পড়েছে বিপাকে। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র লোহাগাড়া বটতলী মোটরস্টেশনের ব্যবসায়ী ও ক্রেতা সাধারণ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পল্লী বিদ্যু সমিতি-১ এর ডিজিএম বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, লোহাগাড়া সদর, আমিরাবাদ, কলাউজান, পদুয়া, চরম্বা, বড়হাতিয়া, চুনতি, আধুনগর ও পুটিবিলা ইউনিয়নে চলতী মৌসুমে রোপণের শুরুতেই বিদ্যুতের লোডশেডিং, লো ভোল্টেজ, রাসায়নিক সার সংকট, বীজের মূল্য বৃদ্ধিতে ইরি-বোরো ও রবিশস্য চাষ হুমকির মুখে পড়েছে। লোহাগাড়া উপজেলায় এবার প্রায় ৮ হাজার ৬শ’ হেক্টর ইরি-বোরো ও ১৯০০ হেক্টর জমিতে রবিশস্য চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কিন্তু বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিং, লো ভোল্টেজ ও জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের চড়া মূল্যের কারণে এখানে ইরি-বোরো এবং রবিশস্য চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ব্যাপারে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, সারাদিন বিদ্যুৎ না থাকা ও ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে পরীক্ষার্থীদের পড়ালেখা দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। নি¤œবিত্ত পরিবারে চলছে চরম দুর্ভোগ। এবই কারণে ক্ষুদ্র শিল্প কারখানাগুলোতে উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। বেকার হয়ে পড়েেছন শ্রমিকরা। অচল হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বিদ্যুতচালিত সেচপাম্পগুলো। এ ছাড়াও ফ্রিজে রাখা বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে নিয়ে বিপাকে গৃহিণীরা। ফ্রিজ, টিভিসহ ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভয়াবহ বিদ্যুত সংকটের কারণে উপজেলার প্রায় ২০ হাজার ৮০০ গ্রাহকের স্বাভাবিক জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। লোহাগাড়া বটতলী দোকান কর্মচারী পরিষদের সভাপতি মিছবাহ উদ্দিন রাজিব বলেন, লোহাগাড়ায় বিদ্যুতের লোডশেডিং ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। মনে হচ্ছে লোহাগাড়া যেন একটি অভিভাবকহীন উপজেলা। সম্প্রতি লোহাগাড়ার চুনতিতে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন বীর বিক্রম ও চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বিদ্যুতায়ন উদ্ধোধন করলেও বিদ্যুৎ পাচ্ছে না এলাকাবাসী। লোহাগাড়া পল্লী বিদ্যুৎ কতৃপক্ষ জানান, প্রায় পনের কিলোমিটার দূরবর্তী দোহাজারী (চন্দনাইশ) থেকে ৩৩ হাজার ভোল্ট লাইনে লোহাগাড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া সাতকানিয়া, চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলাতেও দোহাজারী গ্রিড থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। ফলে সবখানে বিদ্যুতের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এদিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর গ্রাহক সেবার জন্য যে ফোন নাম্বারটি দেয়া আছে তা প্রায় সময়ই বন্ধ থাকে বলে অভিযোগ করেন গ্রাহকরা। বিদ্যুতের এই হয়রানিতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও কর্মসূচি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন গ্রাহকরা এমনটা জানালেন লোহাগাড়ার এক ব্যবসায়ী নেতা। ঘোষণা ছাড়াই প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত একটানা বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার ব্যাপারে মন্তব্য নেয়ার জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ডিজিএম শিমুল কুমার বিশ্বাসের নির্ধারিত ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিভ না করাই তার মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন